Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

সন্দেহ হলেই সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়ে গ্রেফতার, ইউএপিএ সংশোধনী বিল পাশ লোকসভায়

বিলটি লোকসভায় পেশ করার ব্যাপারেই আপত্তি জানিয়েছিলেন বিরোধীরা। আলোচনার সময়েও বিলটিকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি ওঠে।

লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার। ছবি: পিটিআই

লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৩:১২
Share: Save:

বিরোধীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও আজ সংখ্যাধিক্যের জোরে ‘বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) সংশোধনী বিল’ পাশ করিয়ে নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর ফলে আগামী দিনে কাউকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়ে গ্রেফতার করতে পারবে সরকার। সংশোধনীর ওই ধারাটি নিয়েই মূলত আপত্তি তুলেছিলেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য— বিরোধিতা করলেই কাউকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে গ্রেফতারের অধিকার চলে এল সরকারের হাতে। যা এ দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রের দিকে আরও এক ধাপ ঠেলে দিল।

বিলটি লোকসভায় পেশ করার ব্যাপারেই আপত্তি জানিয়েছিলেন বিরোধীরা। আলোচনার সময়েও বিলটিকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি ওঠে। তা উড়িয়েই বিলটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় কাল। গোটা বিলে মূলত দু’টি সংশোধনী নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিরোধীদের। প্রথমত, আগামী দিনে স্রেফ সন্দেহের বশেই কাউকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে গ্রেফতার করা যাবে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না-থাকলেও কাউকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করা যাবে। সংশোধনীর ওই শর্তে আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা করছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘‘এর ফলে সরকার বিরোধিতা করলেই সন্ত্রাসবাদী বলা হবে। জাতীয় সুরক্ষা থেকে অন্য অনেক বিষয় নিয়ে কারও মতপার্থক্য থাকতেই পারে। তা হলেই দেশদ্রোহী বলে দেগে দেওয়া হবে? হয় সরকারের সঙ্গে সুর মেলাও, না-হলেই দেশদ্রোহী— এই তত্ত্বে মানুষ বিশ্বাস করেন না। সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত হলেই কেউ দেশদ্রোহী নন। হতে পারে তিনি প্রবল ভাবে জাতীয়তাবাদী।’’

কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি থেকে এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে কিংবা এমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি, সকলেরই মত— সরকার বিরোধিতায় মুখ খুললেই কাউকে ‘দেশ-বিরোধী’ তকমা দেওয়ার একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে। আইন সংশোধনের ফলে ভবিষ্যতে কেউ সরকার-বিরোধিতা করলেই তাঁকে সন্ত্রাসবাদী অ্যাখ্যা দিয়ে গ্রেফতারের সুযোগ এল মোদী সরকারের হাতে, যা উদ্বেগজনক।

বিরোধীদের মতে, এটা আসলে বিরোধী স্বরকে স্তব্ধ করার কৌশল। মূলত ‘শহুরে নকশালপন্থীদের’ কথা ভেবেই আইনটি আনতে চলেছে সরকার। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘‘যাঁরা শহরে বসে তত্ত্বকথা আউড়ে মাওবাদীদের সাহায্য করেন, তাঁদের বরদাস্ত করা হবে না।’’

কাদের সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, তার ব্যাখ্যায় অমিত টেনে আনেন জঙ্গি ইয়াসিন ভাটকলের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করা হলেও আইন না-থাকায় ভাটকলকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করা যায়নি। সেই সুযোগ নিয়ে ইয়াসিন ১২টি হামলা চালায় এ দেশে।’’ কিন্তু কোনও সাধারণ মানুষকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করা এবং এক জন জঙ্গিকে গ্রেফতারের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি অমিত। সেই জন্য ওয়াক আউট করেন বিরোধীরা।

এ ছাড়া সংশোধনীতে বলা হয়েছে, আগামী দিনে যে কোনও রাজ্যের বাসিন্দার বাড়িতে তল্লাশি ও তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার থাকবে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র কাছে। এর জন্য আগের মতো সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশের অনুমতি লাগবে না। মণীশ তিওয়ারির মতে, এটা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত। সেই যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে অমিত যুক্তি দেন, তদন্তে গতি আনতেই এই সিদ্ধান্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, অনেক ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশকে খবর দিয়ে গ্রেফতার করতে গেলে তথ্য ফাঁস হয়। তাই এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। আজ অবশ্য ২৮৭ সাংসদদের সমর্থনে লোকসভায় পাশ হয়ে যায় বিলটি। অধিকাংশ বিরোধী সাংসদ ওয়াক আউট করলেও, লোকসভায় উপস্থিত আট বিরোধী সাংসদ বিলের বিরোধিতা করেন।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

UAPA Narendra Modi BJP Terrorism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy