ধৃত চার অভিযুক্ত। ছবি: সংগৃহীত
তেলঙ্গানার চিকিৎসককে ধর্ষণের সময় চিৎকার বন্ধ করতে মুখে হুইস্কি ঢেলে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ধর্ষণের পর নিজেদের ট্রাকে করেই মৃতদেহ অন্যত্র নিয়ে গিয়েছিল তারা। রাস্তায় কিনেছিল পেট্রোল। ধৃত চার অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তের পর এমনই রিপোর্ট শনিবার আদালতে জমা দিয়েছে তেলঙ্গানার সাইবারাবাদ পুলিশ। তাতেই উঠে এসেছে এমনই সব ভয়ঙ্কর তথ্য। পাশাপাশি গোটা ধর্ষণকাণ্ড কখন, কী ভাবে ঘটিয়েছিল লরিচালক ও খালাসিদের চার জনের দলটি, তারও প্রায় পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ আদালতে জমা দিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
বৃহস্পতিবার সকালে হায়দরাবাদের অদূরে চাতানপল্লির কাছে একটি কালভার্টের নীচে থেকে উদ্ধার হয় ওই তরুণী চিকিৎসকের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ। ধর্ষণ ও পুড়িয়ে মারার অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে চার অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর শনিবার তাদের আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
গ্রেফতারের পর থেকে আদালতে পেশ করার আগে পর্যন্ত পুলিশের জিম্মায় থাকাকালীন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বয়ান নেয় পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃতদের বক্তব্য অনুযায়ী পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ মেলানো হয়েছে। তার পরেই ঘটনাক্রম সাজিয়ে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। রবিবার তার কিছু অংশ উঠে এসেছে সংবাদ মাধ্যমে। পুলিশের সেই তথ্য অনুযায়ী, ধর্ষণের সময় চিকিৎসক চিৎকার করছিলেন। সেটা আটকাতে মূল অভিযুক্ত জুল্লু নবীন তাঁর মুখে মদ ঢেলে দিয়েছিল। জুল্লু নবীন ছাড়া বাকি অভিযুক্তরা হল লরি চালক মহম্মদ আরিফ, জল্লু শিবা এবং চিন্তাকুনটা চেন্নাকেশাভুলু।
আরও পড়ুন: গণধর্ষণ এ বার কোয়ম্বত্তূরে, পার্কে বন্ধুকে বেঁধে রেখে সামনেই অত্যাচার, অভিযুক্ত ৬
পুলিশের জমা দেওয়া ওই বিবরণেই উঠে এসেছে গোটা ধর্ষণকাণ্ডের সময় সারণি এবং বিবরণ। কী ভাবে পরিকল্পনা করেছিল অভিযুক্তরা, কী ভাবে ধর্ষণের পর দেহ লোপাট এবং পোড়ানো হয়েছিল— সবই উল্লেখ করা হয়েছে পুলিশের ওই রিপোর্টে।
গণধর্ষণের ঘটনাক্রম
২৭ নভেম্বর, বিকেল ৫.৩০: মূল অভিযুক্ত জুল্লু নবীন এবং লরি চালক আরিফ কয়েক বোতল মদ কেনে। সামসাবাদ টোল প্লাজার কাছে লরির কেবিনের মধ্যে বসে মদ্যপান করছিল চার জন।
সন্ধে ৬.০০: চার দুষ্কৃতী দেখে, তাদের লরির পাশেই একটি স্কুটি দাঁড় করিয়ে রাখছেন এক তরুণী। তার পর তিনি একটি ক্লিনিকে ঢুকে যান। তখনই চার জন ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। স্কুটির পিছনের চাকা পাংচার করে দেয় নবীন।
রাত ৯.০০: এর পর চার দুষ্কৃতী তাদের লরিটি প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে থোন্ডাপল্লির কাছে নিয়ে যায়। গাড়ি চালাচ্ছিল আরিফ।
রাত ৯.১৮: নির্যাতিতা তরুণী স্কুটির কাছে এলেন। কিন্তু দেখলেন স্কুটি পাংচার।
রাত ৯.৩০ থেকে ভোর ৪: এক অভিযুক্ত শিবা তরুণীকে সাহায্যের নাম করে স্কুটিটি এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে এসে তাঁকে বলে, সমস্ত মেরামিতর দোকান বন্ধ। এর পরেই স্বমূর্তি ধরে চার জন। তরুণীকে জাপটে ধরে টেনে হিঁচড়ে লরির পিছনে একটি পরিত্যক্ত এলাকায় নিয়ে যায়। মূল অভিযুক্ত নবীন তরুণীর মোবাইল কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেয়।
তার পরেই তরুণী চিকিৎসক চিৎকার করতে শুরু করলে নবীন তাঁর মুখে মদ ঢেলে দেয়। তার পর চলে নৃশংস অত্যাচার ও ধর্ষণ। তার জেরে তরুণী সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে ফের চিৎকার করতে শুরু করেন। তখনই দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করে।
আরিফ তাঁর মুখ ও নাক চেপে ধরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দমবন্ধ হয়ে ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তরুণী। নবীন তাঁর ফোন, ঘড়ি ও পাওয়ার ব্যাঙ্ক নিয়ে নেয়।
এর পর শুরু হয় দেহ লোপাটের কাজ। চার জন মিলে দেহটি তাদের ট্রাকে তোলে। শিবা ও নবীন তরুণীর স্কুটি ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয়। রাস্তায় শিবা একটি বোতলে পেট্রোল কিনে নেয়। এর পর লরি চালিয়ে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর চাতানপল্লির কাছে কালভার্টের নীচে নিয়ে যায়। মৃতদেহে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
২৬ নভেম্বর, ভোর ৪: ভোর ৪টে নাগাদ চার জন আরামগড়ে পৌঁছয়। সেখান থেকে শিবা, নবীন ও চেন্নাকেশাভুলু নিজের নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়।
আরও পড়ুন: মেট্রো স্টেশনে মোবাইলে তরুণীর ভিডিয়ো তুলে পাকড়াও যুবক
তবে পুলিশের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করতে গেলে তাঁদের একাধিক থানায় ঘোরানো হয় বলে অভিযোগ। ফলে তাঁরা অভিযোগ দায়ের করতেই পারেননি। প্রথমে অভিযোগ সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভি সি সজ্জানর বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ওই চার জনকে শনাক্ত করেন তদন্তকারী অফিসাররা। সিসিটিভিতে নির্যাতিতার ছবিও ধরা পড়ে। সারা রাত মহিলার সন্ধানে চলে তল্লাশি। স্থানীয় সব কটি পাংচারের দোকানে খোঁজ নেওয়া হয়। অবশেষে সকাল ৭টায় উদ্ধার হয় মৃতদেহ। বিকেল ৩টে নাগাদ পরিবারের লোকজনকে অভিযোগ দায়েরের জন্য ডেকে আনা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy