দূষণের ধোঁয়াশায় ঢাকা দিল্লির রাস্তা। ছবি: রয়টার্স
পরিবেশবিদদের একাংশ আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। এবার দূষণ নিয়ন্ত্রণে জোড়-বিজোড় ফর্মুলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে দিল্লি সরকার। তীব্র ভর্ৎসনা করে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, ‘‘আপনারা কি ট্যাক্সি নিয়ন্ত্রণ করছেন? জোড়-বিজোড় ফর্মুলা চালু করে কী পেয়েছেন?’’
গাড়ি বন্ধ করে কী লাভ হয়েছে, প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চ। একই সঙ্গে অটো, ডিজেল গাড়ি এবং বাইক-অটোর উপর জোড়-বিজোড় ফর্মুলা কেন কার্যকর করা হয়নি, তা নিয়েও দিল্লি সরকারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শীর্ষ আদালত। অস্থায়ী নয়, স্থায়ী সমাধানের করার কথাও বলেছে বেঞ্চ। শুধু কেজরীবাল সরকার নয়, কেন্দ্রের দায়িত্বও স্মরণ করিয়ে দিয়ে শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘‘কেন্দ্রেরও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ এ ভাবে চলতে পারে না, এ বার দায় নির্ধারণের সময় এসেছে, মন্তব্য শীর্ষ আদালতের।
দূষণে জেরবার দিল্লির লাগোয়া এলাকায় চাষের জমিতে খড় পোড়ানো নিয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিল এনভায়রনমেন্ট কন্ট্রোল অথরিটি (ইপিসিএ)। সোমবার সেই মামলার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি দীপক গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চে। সেই শুনানিতেই সরকার পক্ষের আইনজীবীকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন দুই বিচারপতি।
বেলাগাম দূষণে জেরবার দিল্লিবাসীকে কিছুটা স্বস্তি দিতে রাজধানীতে কয়েক বছর ধরেই চলছে গাড়ির জোড়-বিজোড় ফর্মুলা। দূষণ অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে গেলে এক দিন জোড় সংখ্যার গাড়ি এবং পরের দিন বিজোড় সংখ্যার গাড়ি রাস্তায় নামার অনুমতি মেলে। কিন্তু সেই ফর্মুলা নিয়েই একাধিক প্রশ্ন তুলে দিল শীর্ষ আদালত। এ দিনের শুনানিতে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দেয় বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চ— ‘‘জোড়-বিজোড়ে কী লাভ হয়েছে? আপনারা কি ট্যাক্সি নিয়ন্ত্রণ করতে নেমেছেন? এই জোড়-বিজোড়ের ফল কী হয়েছে, তার কোনও হিসেব আছে আপনাদের কাছে?’’
আরও পড়ুন: জোর করে বিজোড় নম্বরের গাড়ি নামিয়ে জরিমানা দিলেন বিজেপি সাংসদ, পেলেন ফুলের তোড়া
একই সঙ্গে আদালতের বক্তব্য, ‘‘মানুষকে যাতায়াত করতেই হবে। আপনারা যাতায়াত বন্ধ করতে পারেন না। গাড়ি বন্ধ করে কী পাবেন আপনারা?’’ এই জোড়-বিজোড় ফর্মুলা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে চার চাকার ডিজেল গাড়ি, অটো অর্থাৎ তিন চাকার যান এবং মোটরবাইককে। তা নিয়েও আদালতের তোপের মুখে পড়তে হয় সরকারি আইনজীবীকে। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আদালতে সওয়াল করা হয়েছে যে, বাইক-অটোতে বেশি দূষণ হচ্ছে। অথচ জোড়-বিজোড় ফর্মুলায় সেগুলি অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি?’’
এর মধ্যেই সরকার পক্ষের আইনজীবী বোঝানোর চেষ্টা করেন, কম গাড়ি চলার অর্থ দূষণ কম হওয়া। কিন্তু তাঁর বক্তব্য শেষের আগেই পাল্টা প্রশ্নে বিচারপতিরা বলেন, ‘‘বেশি অটো, বেশি বাইক চলছে। তাহলে দূষণও বেশি হচ্ছে।’’ এর পরেই কেন ডিজেল গাড়ি জোড়-বিজোড় ফর্মুলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
দিল্লির কেজরীবাল সরকার দাবি করে আসছে, জোড়-বিজোড় ফর্মুলা চালু করায় দূষণে অনেকটাই কমেছে। চার চাকা ছেড়ে বাইক এবং অটোতে যাতায়াতের আর্জিও জানিয়েছে সরকার। কিন্তু এই ফর্মুলা চালুর পরে দূষণের মাত্রা এবং তার আগের দূষণের মাত্রার মধ্যে পার্থক্য কত, তার পরিসংখ্যান আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশও এ দিন দিয়েছে অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ। দূষণের রোধে রাজধানীতে সমস্ত প্রকার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সেই নির্দেশ পালনে বিন্দুমাত্র নড়চড় যেন না হয়, পুর কর্তৃপক্ষকে সেটাও নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
দূষণ থেকে বাঁচতে মুখোশ পরেই ডিউটি রাস্তায়। ছবি: পিটিআই
আরও পডু়ন: জম্মু-কাশ্মীরে বন্দি নেতাদের হোটেল খরচ ২ কোটি ৬৫ লক্ষ! এ বার অন্যত্র সরানোর ভাবনা
পঞ্জাব-হরিয়ানায় খড় পোড়ানোর বড় ভূমিকা রয়েছে দিল্লির দূষণে। সেটা বন্ধেও এ দিন কড়া নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ‘‘খড় পোড়ানো অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়কেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষ মরছে। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে সবাই গিমিকে আগ্রহী।’’
কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণ শুধুই কি রাজ্যের দায়িত্ব? কেন্দ্রের কি কোনও দায়িত্বই নেই? এই প্রশ্নেই শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য প্রশাসন দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে না। কেন্দ্রের অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দিল্লির উচিত ব্যবস্থা নেওয়া। এ ভাবে চলতে পারে না।’’ আদালতের আরও বক্তব্য, ‘‘এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে, এ বার তা নির্ধারণ করার সময় হয়েছে। সংবিধানের ২১ ধারায় এটা নাগরিকদের জীবনধারণের অধিকার ধ্বংস করছে। সবাইকেই উত্তর দিতে হবে। রাজ্য থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy