Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Rahul Gandhi

পত্র-নাট্যের পর ‘গাঁধীদের চাই’!

দলের কেউ কেউ মনে করছেন, তবে কি কংগ্রেসে ‘মুষল-পর্ব’ শুরু হয়ে গেল!

অনুগামীরা ফের দাবি তুলছেন, এই দুর্দিনে গাঁধী পরিবারই একমাত্র ভরসা।

অনুগামীরা ফের দাবি তুলছেন, এই দুর্দিনে গাঁধী পরিবারই একমাত্র ভরসা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২০ ০৪:০৭
Share: Save:

এক দিকে প্রশ্ন উঠল গাঁধী পরিবারের দল পরিচালনা নিয়ে। আর এক দিক থেকে উচ্চ কণ্ঠে দাবি উঠল, কংগ্রেসের এই দুর্দিনে গাঁধী পরিবারকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তবে তাঁর আমলে দল পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সনিয়া গাঁধী জানিয়ে দিলেন, তিনি আর অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর পদে থাকতে চান না। কংগ্রেস নেতারা যেন নতুন সভাপতি বেছে নেন।

দলের কেউ কেউ মনে করছেন, তবে কি কংগ্রেসে ‘মুষল-পর্ব’ শুরু হয়ে গেল! অবশ্য কংগ্রেসের পোড় খাওয়া নেতাদের মতে, এ হল দলের ভিতরের ক্ষোভ বার করে এনে গাঁধী পরিবারের ছাতার নীচেই সবাইকে এককাট্টা করার চেষ্টা। সোমবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের আগে সনিয়া তাঁর অবস্থান জানানোর পরে গাঁধী পরিবারের অনুগামীরা ফের দাবি তুলছেন, এই দুর্দিনে গাঁধী পরিবারই একমাত্র ভরসা। সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। সনিয়াকেই সভানেত্রী থেকে যেতে হবে, নয় রাহুলকে দায়িত্ব নিতে হবে।

দু’সপ্তাহ আগে বিগত ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মিলিয়ে ২৩ জন কংগ্রেস নেতা সনিয়াকে চিঠি লিখে কার্যত দল পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। গুলাম নবি আজাদ, কপিল সিব্বল, আনন্দ শর্মার মতো রাজ্যসভার সাংসদ, শশী তারুর, মণীশ তিওয়ারির মতো লোকসভার সাংসদ, জিতিন প্রসাদ, মিলিন্দ দেওরার মতো তরুণ নেতা, ভূপিন্দ্র সিংহ হুডা, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণদের মতো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের লেখা চিঠির দাবি ছিল, দলে ‘পূর্ণ সময়ের কার্যকরী নেতৃত্ব’ দরকার। এই দলীয় নেতৃত্বকে সব সময় দৃশ্যমান ও সক্রিয় থাকতে হবে। তাঁরাই সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে দল চালাবেন। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচনেরও দাবি তোলেন তাঁরা।

কংগ্রেসে কুরুক্ষেত্র
২৩ জন কংগ্রেস নেতার দাবি

• পুরো সময়ের কার্যকরী নেতৃত্ব
• দৃশ্যমান ও সক্রিয় নেতৃত্ব
• সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে দল পরিচালনা
• কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির নির্বাচন
• কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড গঠন
• ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিকে মজবুত করা সনিয়ার অবস্থান
• অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর পদ ছেড়ে দিতে তৈরি
• দল নতুন সভাপতি বেছে নিক
কংগ্রেসশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন, বিভিন্ন রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, তরুণ শিবিরের নেতাদের মত
• গাঁধী পরিবারকেই নেতৃত্ব দিতে হবে
• সনিয়া গাঁধীই নেতৃত্বে থাকুন, অথবা রাহুল সভাপতির পদে আসুন

রাহুলের অবস্থান

• দায়িত্ব নিতে এখনও অনিচ্ছুক, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী করবেন?

কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের ঠিক আগে রবিবার সেই চিঠি ফাঁস হয়ে যায়। তার পরেই কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়, সনিয়াও পাল্টা জানিয়েছেন, তিনি ফের সভানেত্রীর পদ গ্রহণে মোটেই ইচ্ছুক ছিলেন না। কংগ্রেস নেতাদের অনুরোধ-উপরোধেই গত বছর ১০ অগস্ট তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নতুন সভাপতি দ্রুত ঠিক করতে হবে বলে শর্তও দিয়েছিলেন। এখন নেতারা নতুন সভাপতি বেছে নিয়ে তাঁকে অব্যাহতি দিন। তবে সনিয়া ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন বলে যে কথা রটেছে, তা ভুল বলে জানিয়েছেন দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপসিংহ সুরজেওয়ালা।

আরও পড়ুন: মোদীর ‘মিত্র’ ময়ূর, কেউ মুগ্ধ, কারও কটাক্ষ

আরও পড়ুন: সুস্থ হচ্ছে বেশি, মৃত্যু কম: মন্ত্রক

আরও পড়ুন: ৭৩ দিনে টিকা? ভুয়ো জানিয়ে দিল সিরাম

সনিয়ার এই অবস্থান প্রকাশ্যে আসতেই ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ, অশোক গহলৌত, ভূপেশ বঘেলের মতো মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী, সিদ্দারামাইয়া, ডি কে শিবকুমাররা সনিয়া-রাহুলকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেন, সনিয়ার নেতৃত্বেই তাঁদের আস্থা রয়েছে। হরিয়ানার প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী কুমারী শৈলজা আরও এক ধাপ এগিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘দলের কিছু নেতা শীর্ষ নেতৃত্বের কাজের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এর থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, এই সব নেতারা কংগ্রেস পার্টিকে দুর্বল করতে বিজেপির ষড়যন্ত্রে জড়িত।’’

সনিয়াকে লেখা ২৩ জন নেতার চিঠি কী ভাবে ফাঁস হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত বলেন, ‘‘এই চিঠি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করার কোনও দরকার ছিল না। আমার বিশ্বাস, সনিয়া গাঁধীরই নেতৃত্বে থাকা উচিত। যদি তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে থাকেন, তবে রাহুল গাঁধী এগিয়ে এসে কংগ্রেস সভাপতি হোন।’’ সচিন পাইলটও বলেন, “বেশির ভাগ কংগ্রেস-কর্মীই চান, রাহুল হাল ধরুন।” বি ভি শ্রীনিবাস, মাণিকম টেগোরের মতো তরুণ নেতারাও দাবি তোলেন, রাহুলই দায়িত্ব নিন।

গত বছর কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে পদত্যাগের সময় রাহুল বলেছিলেন, গাঁধী পরিবারের বাইরের কাউকে কংগ্রেস সভাপতি করা হোক। এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও জানিয়েছেন, তিনি রাহুলের সঙ্গে একমত। এ বার সনিয়াও কার্যত জানিয়ে দিলেন, তিনি পদ আঁকড়ে বসে থাকতে চান না। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা বলছেন, গাঁধী পরিবারকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।

এআইসিসি-র এক নেতার মন্তব্য, ‘‘দলের অন্দরের ক্ষোভ বার করে এনে ফের গাঁধী পরিবারের ছাতার নীচেই সবাইকে এককাট্টা করার কাজ চলছে। একই সঙ্গে প্রমাণ করে দেওয়া হচ্ছে, গাঁধী পরিবার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায় না। কংগ্রেসের প্রয়োজনেই তাঁদের দায়িত্ব নিতে হয়।’’ অধীর তাঁর চিঠিতে সনিয়াকে লিখেছেন, “আপনি চাইলে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু হননি। কারণ গাঁধী পরিবার ক্ষমতার জন্য লালায়িত নয়। রাহুলের পদত্যাগের পরে, অনেক আর্জি জানানোয় আপনি ফের সভানেত্রী হতে রাজি হন। রাহুলের পদত্যাগেও তা প্রমাণিত হয়েছে।”

সোমবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে স্বাভাবিক ভাবেই এই চিঠি নিয়ে ঝড় উঠবে। বৈঠকে কংগ্রেসশাসিত সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেবেন। কংগ্রেস নেতাদের মতে, ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে স্বাভাবিক ভাবেই রাহুল দায়িত্ব নিন বলে দাবি উঠবে। তিনি অনিচ্ছুক হলে সনিয়ার নেতৃত্বেই আস্থা জানিয়ে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে। তবে সনিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা ভেবে দু’জন সহ-সভাপতি নিয়োগের কথা ভাবা হতে পারে।

সনিয়াকে চিঠি লেখা কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, তাঁরা সনিয়ার নেতৃত্বে অনাস্থা জানাচ্ছেন না। তাঁদের মূল আপত্তি রাহুলের কাজের পদ্ধতি নিয়ে। রাহুল দায়িত্ব নিতে নারাজ। কিন্তু তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠরাই পিছন থেকে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হোক বা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দলের রণকৌশল, সবটাই কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই তাঁরা নির্বাচনের মাধ্যমে ওয়ার্কিং কমিটি গঠন ও কংগ্রেসের সংসদীয় বোর্ড গঠনের দাবি তুলেছেন। যেখানে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে যাবতীয় সিদ্ধান্ত হবে।

রাহুল শিবিরের নেতাদের পাল্টা প্রশ্ন, এই নেতাদের মধ্যে এক জন সভাপতি হলে বাকিরা মেনে নেবেন কি? গত ছ’বছরে তাঁরা কত বার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন? কেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের লোকসভায় হেরে রাজ্যসভায় জিতে আসতে হয়েছে? গাঁধী পরিবারের অনুগামীদের মতে, কংগ্রেস সংসদীয় বোর্ড গঠন হলে এবং সেখানে জায়গা পেলে তবেই তাঁরা প্রাসঙ্গিক থাকতে পারবেন মনে করে প্রবীণ নেতারা এই দাবি তুলছেন। মণীশ তিওয়ারি, শশী তারুররা আবার লোকসভার দলনেতা হতে না-পেরে ক্ষুব্ধ। সনিয়ার আস্থাভাজন বলে পরিচিত শৈলজার মতে, ‘‘এই সব নেতাকে কংগ্রেসই পরিচিতি দিয়েছে। ক্ষমতায় ভাগীদার করেছে।’’ ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্রর মতে, ভোটে হার নেতৃত্বে রদবদলের মাপকাঠি নয়। গাঁধী পরিবারই একমাত্র নেতৃত্বের যোগ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Sonia Gandhi Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy