নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। চুনার দুর্গে। ছবি: পিটিআই।
শেষমেশ প্রিয়ঙ্কার জেদের কাছে হার মানল যোগী সরকার। সোনভদ্রের নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন। বার্তা দিলেন তাঁদের পাশে থাকার। তার পরই উত্তরপ্রদেশ ছাড়লেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। যাওয়ার সময় বলে গেলেন, লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আবার আসব।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যোগীর সঙ্গে টক্করে জয় হল প্রিয়ঙ্কারই।
সোনভদ্রের ঘটনা নিয়ে যোগী সরকারের উপর এমনিতেই চাপ বাড়ছিল। মির্জাপুরে কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে আটকে দেওয়া, তাঁকে চুনার দুর্গে ‘বন্দি’ করে রাখার ঘটনা গত ২৪ ঘণ্টায় সেই চাপ আরও বাড়িয়েছে। প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে যোগী সরকারকে। শেষমেশ সেই বাধা তুলে নেয় রাজ্য প্রশাসন। জানিয়ে দিল, যেখানে খুশি যেতে পারেন প্রিয়ঙ্কা।
শনিবার সকালেই চুনার দুর্গে নিহতদের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন প্রিয়ঙ্কা। এ দিন সকালে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা চুনারে আসেন কংগ্রেস নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। প্রিয়ঙ্কাকে কাছে পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সান্ত্বনা দিতেও দেখা যায় প্রিয়ঙ্কাকে। কিছু ক্ষণ কথাও বলেন তাঁদের সঙ্গে। এ দিন সকালেও প্রিয়ঙ্কা ফের চুনার থেকে সোনভদ্রে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। তাঁকে ফের আটকানো হয়। তখন চুনারের ভিতরেই প্রতিনিধি দলকে নিয়ে ধর্নায় বসে পড়েন প্রিয়ঙ্কা। তাঁর অভিযোগ, মাত্র দু’জনের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়। বাকি ১৫ জনকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এর পরই তিনি বলেন, “আমার লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আমি এখনও আটক অবস্থায় রয়েছি। দেখা যাক প্রশাসন কী বলে।”
যোগী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, “সোনভদ্রের ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারই দায়ী।” পাশাপাশি রাজ্য সরকারের কাছে নিহতদের পরিবারের জন্য বেশ কয়েকটি দাবিও তুলে ধরেন প্রিয়ঙ্কা। তিনি বলেন, “নিহতদের পরিবারপিছু ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। জমি নিয়ে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে তা তুলে নিতে হবে।”
শুক্রবারে মির্জাপুরে ধর্নাস্থল থেকে তুলে নিয়ে এসে চুনার দুর্গের অতিথিশালায় রাখা হয়েছিল প্রিয়ঙ্কাকে। রাতভর সেখানেই কাটান তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে। মধ্য রাতে রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ আধিকারিক এবং বারাণসী পুলিশের এডিজি চুনার দুর্গে যান। সোনভদ্রে না যাওয়ার জন্য প্রিয়ঙ্কাকে অনুরোধ করেন। ঘণ্টাখানেক তাঁদের সঙ্গে কথাও হয়। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা না করতে দিলে চুনার থেকে এক পা-ও নড়বেন না। রাত সওয়া ১টা নাগাদ রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকরা ফিরে যান।
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “সোনভদ্র হত্যাকাণ্ড রুখতে ব্যর্থ উত্তরপ্রদেশ সরকার। পুরোপুরি বেআইনি ভাবে প্রিয়ঙ্কাজিকে গ্রেফতার করেছে রাজ্যের বিজেপি সরকার।” রাজ্যের বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিংহ কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, “সোনভদ্রে কি ট্যুরিজম চলছে? ১৪৪ ধারা চলছে ওখানে। সেই মতো ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে কংগ্রেস।”
আরও পড়ুন: সোনভদ্রে যেতে বাধা কংগ্রেস-তৃণমূলকে, বারাণসীতেই আটকে দিল পুলিশ
পরে প্রিয়ঙ্কা টুইট করে বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ সরকার বারাণসীর এডিজি ব্রজ ভূষণ, কমিশনার দীপক অগ্রবাল এবং মির্জাপুরের ডিআইজি-কে আমার কাছে পাঠায়। নিহতদের পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা না করে সোনভদ্র ছাড়ার পরামর্শ দেন তাঁরা। প্রায় এক ঘণ্টা বসেছিলেন ওই আধিকারিকরা।’ তিনি আরও জানান, ‘কেন আমাকে হেফাজতে নেওয়া হল, তার সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ রাজ্য সরকারের পাঠানো আধিকারিকরা দেখাতে পারেননি। শুধু তাই নয়, এ সংক্রান্ত কোনও নথিও দিতে পারেননি তাঁরা।’ চুনার দুর্গে রাতের একটি ভিডিয়োও টুইট করেন প্রিয়ঙ্কা।
আরও পড়ুন: ‘এ বার কড়া পদক্ষেপ চাই’, হাফিজ সইদ নিয়ে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা মার্কিন প্রশাসনের
যোগীর সরকারের সঙ্গে প্রিয়ঙ্কার টানাপড়েন শুরু হয়েছিল শুক্রবার সকাল থেকেই। সোনভদ্রে নিহত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু মির্জাপুরের কাছে তাঁকে আটকে দেয় যোগীর পুলিশ। বাধার মুখে পড়ে সদলবলে ধর্নায় বসে পড়েন প্রিয়ঙ্কা। প্রশাসনের দাবি, ১৪৪ ধারা চলছে সোনভদ্রে। এই মুহূর্তে সেখানে কোনও রাজনৈতিক দল যাওয়া মানেই পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দেবে। প্রিয়ঙ্কার অভিযোগ, এই নির্দেশ সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্রই দেখাতে পারেনি পুলিশ। যদিও মির্জাপুরের জেলাশাসক অনুরাগ পটেল বলেন, “১৫১ সিআরপিসি-তে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে এই আশঙ্কায় কংগ্রেস নেত্রী ও তাঁর সঙ্গীদের আটকে দেওয়া হয়েছে।”
প্রিয়ঙ্কা ধর্না থেকে না ওঠায় তাঁকে আটক করে পুলিশ। তার পর সেখান থেকে চুনার দুর্গের অতিথিশালায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সারা রাত সদলবলে সেখানেই ছিলেন তিনি। কংগ্রেস নেত্রীকে আটক না গ্রেফতার করা হয়েছে, এ নিয়েও যোগী সরকারের সঙ্গে একটা টানাপড়েন চলে। কংগ্রেসের দাবি, প্রিয়ঙ্কাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ পাল্টা দাবি করেছে, গ্রেফতার নয়, আটক করা হয়েছে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদককে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy