Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Nitish Kumar

নীতীশ কি কুর্সি ছাড়বেন বড় শরিক বিজেপি-কে

ঘোষিত ফল ও ফলের প্রবণতা মিলিয়ে আসন প্রাপ্তিতে দিনভর কখনও দেখা গিয়েছে শীর্ষে রয়েছে বিজেপি। কখনও আরজেডি। তৃতীয় স্থানে জেডিইউ।

নীতীশ কুমার। ছবি পিটিআই।

নীতীশ কুমার। ছবি পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪৫
Share: Save:

খাতায়-কলমে জিতলেন নীতীশ কুমার। কিন্তু আসনপ্রাপ্তির নিরিখে বিহারের তৃতীয় দল হল তাঁর জেডিইউ। ছোট শরিক হয়েও নীতীশ কি চতুর্থ বার মুখ্যমন্ত্রী হবেন, না কি নীতির প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন বিজেপিকে ফল প্রকাশের পরে সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠেছে বিহারের রাজনীতিতে।

ঘোষিত ফল ও ফলের প্রবণতা মিলিয়ে আসন প্রাপ্তিতে দিনভর কখনও দেখা গিয়েছে শীর্ষে রয়েছে বিজেপি। কখনও আরজেডি। তৃতীয় স্থানে জেডিইউ। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, বিহারের রাজনীতিতে জেডিইউকে টপকে গিয়ে বড় শরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলল বিজেপি।
আসন সংখ্যায় টপকে যেতেই সুর বদলে গিয়েছে বিহারের বিজেপি নেতাদের। প্রাক্তন সভাপতি অমিত শাহ যতই ভোটের আগে বলুন না কেন, এনডিএ জিতলে নীতীশ কুমারই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, আজ সমীকরণ পাল্টে যেতেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিতে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিহারের বিজেপি নেতারা। প্রচার চলাকালীনই যার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিহারের রাজনীতিতে প্রবল নীতীশ-বিরোধী নেতা গিরিরাজ সিংহ। অক্টোবর মাসেই তিনি দাবি করেছিলেন, বিজেপি আসন বেশি পেলে রাজ্যের বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। আজ একই দাবি তুলেছেন বিহার বিজেপির নেতা অজয়কুমার চৌধুরি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, বিজেপির হাত ধরে জেডিইউ এ যাত্রায় পার পেয়েছে। তাই এনডিএ জোটের মুখ্যমন্ত্রী করা হোক বিজেপি থেকেই। নীতীশের উচিত এখন দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়া।

প্রশ্ন হল, নীতীশ কী করবেন?

প্রচারের শেষ দিনে সহনাভূতি কুড়োতে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, এটিই তাঁর শেষ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে তাঁর জোট জিতলেও, দলের ফলাফলেই স্পষ্ট বিহারবাসীর আস্থা অনেকাংশেই হারিয়েছেন তিনি। উল্টে বিজেপি নেতারা বলছেন, নরেন্দ্র মোদী যদি প্রচারে না আসতেন সে ক্ষেত্রে নীতীশের পক্ষে সরকার ধরে রাখাই সমস্যার হয়ে পড়ত। রাজ্য বিজেপির নীতীশ-বিরোধী এক নেতার কথায়, ‘‘এই জয় আসলে নরেন্দ্র মোদীর জয়। কারণ লোকে প্রধানমন্ত্রীর কারণে বিজেপির উপর ভরসা করেছে। আসনের নিরিখে রাজ্যের এক নম্বর দল হয়েছে বিজেপি।’’

আরও পড়ুন: নাক না কেটেও নীতীশ কুমারের যাত্রাভঙ্গ চিরাগের

জেডিইউ নেতাদের পাল্টা দাবি, পরিকল্পিত ভাবে এই ভোটে নীতীশকে দুর্বল করাই ছিল বিজেপির লক্ষ্য। তাই চিরাগ পাসোয়ানের দল এলজেপিকে তলে তলে জেডিইউ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড় করায় বিজেপি। ক্ষুব্ধ জেডিইউ নেতৃত্বের বক্তব্য, অন্তত ২৫-৩০টি আসনে জেডিইউ প্রার্থীর জেতা অনিশ্চিত করে দিয়েছেন এলজেপি প্রার্থীরা। তা না হলে জেডিইউয়ের ফল আরও ভাল হত। চিরাগকে এ ভাবে ব্যবহারের জন্য মূলত বিজেপি নেতৃত্বকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন নীতীশও। জেডিইউ নেতাদের বক্তব্য, নীতীশের আজ যে অবস্থা হল, তার পিছনে বিজেপি কম দায়ী নয়। রাজনীতির জগতের অনেকেরই প্রশ্ন, বিজেপির চালে চিরাগের কাছে মাত হওয়ার পরেও কি অমিত শাহদের উপরে ভরসা রাখবেন নীতীশ? রাত পর্যন্ত ভোটের ফল নিয়ে নীরব নীতীশ। যদিও পাশে থাকার বার্তা দিয়ে আজ বিকেলেই নীতীশকে ফোন করেন অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রে বলা হয়েছে, সৌজন্য বিনিময় ও রাজ্যে এনডিএ-এর এগিয়ে থাকার জন্য নীতীশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অমিত শাহ। নিত্যানন্দ রাই, সুশীল মোদী, ভূপেন্দ্র যাদবের মতো বিজেপি নেতারা সন্ধেয় নীতীশের বাসভবনে গিয়ে কথা বলে এসেছেন। কী কথা হয়েছে, তা ভাঙেননি কেউ।

আরও পড়ুন: বিহারের জয় মোদীর কৃতিত্ব, বলছে বিজেপি

পূর্ব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে নীতীশকেই মুখ্যমন্ত্রী করার প্রশ্নে অমিত শাহেরা সবুজ সঙ্কেত দিলে একটি বিষয় আগে থেকেই স্পষ্ট, নীতীশ ফের কুর্সিতে বসলেও এই দফায় সরকারের রাশ থাকবে বিজেপির হাতেই। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও প্রথম দিন থেকেই বিজেপি নেতৃত্বের অঙ্গুলিহেলনে চলতে হবে নীতীশকে। ১৫ বছর মুখ্যমন্ত্রিত্ব করে আসা নীতীশের পক্ষে কি এ ভাবে চলা সম্ভব? নীতীশ-ঘনিষ্ঠ জেডিইউ নেতারা বলছেন, বিহারবাসী যে তাঁর উপরে আস্থা অনেকটাই হারিয়েছেন তা বুঝতে পারছেন নীতীশ। এই জয়ে সম্মানের সঙ্গে অসম্মানও জড়িয়ে রয়েছে। তা ছাড়া নীতীশ বরাবরই একগুঁয়ে ধরনের। কারও নির্দেশ মেনে চলার পক্ষপাতী নন তিনি। এক জেডিইউ নেতার কথায়, “খবরদারি এড়াতে নীতীশ শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রিত্ব বিজেপিকে ছেড়ে দিতে পারেন। অন্তত এমন সম্ভাবনা আপাতত উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Nitish Kumar Bihar Assembly Election 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE