গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কোনও রকমে মুখরক্ষা হয়েছে। ২০০ আসন দূরে থাক, মহারাষ্ট্রে একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পায়নি বিজেপি। এই খারাপ ফলের জন্য বিজেপি নেতৃত্বের ‘ক্ষমতার দম্ভ’কে দায়ী করে তোপ দাগল শরিক শিবসেনা। দলের মুখপত্র ‘সামনা’য় মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীসের ‘মহা জনাদেশ যাত্রা’কে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে, ‘মহা জনাদেশ’-এর লেশমাত্র নেই। এই ফল থেকে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের শিক্ষা নেওয়া উচিত বলেও বিজেপির কড়া সমালোচনা করা হয়েছে শুক্রবারের ওই সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে। শুধুমাত্র ভোট মেশিনারি আর বিরোধীদের ভাগাভাগি করে যে ভোটে ভাল ফল করা যায় না, এই ফল সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করে খোঁচা দিতেও ছাড়েনি শিবসেনা।
২০১৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পূর্ববর্তী জোট হয়নি বিজেপি-শিবসেনার। তা সত্ত্বেও ১২২টি আসন জিতেছিল বিজেপি। শিবসেনার ঝুলিতে এসেছিল ৬৩ আসন। এ বার ভোট পূর্ববর্তী জোট করে লড়েছে দুই দল। কিন্তু তার পরেও দু’দলেরই আসন কমেছে। বিজেপি জিতেছে ১০৫টি আসন। শিবসেনার জয় পেয়েছে ৫৬টি আসনে। আর ছোট ছোট দল ও নির্দলদের ঝুলিতে গিয়েছে ২৫টি আসন। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে সামনার প্রতিবেদনে বিজেপির কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই ফল এটাই দেখিয়ে দিয়েছে যে মানুষ বলতে চেয়েছেন, ‘যদি ক্ষমতার দম্ভ দেখাও, তাহলে সাবধান’।
বিধানসভা ভোটের আগেই মহারাষ্ট্র জুড়ে ‘মহা জনাদেশ যাত্রা’ করেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীস। রাজ্যের প্রায় ২০০ বিধানসভা এলাকায় ঘুরে জনসংযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই ‘যাত্রা’ যে পুরোপুরি ফ্লপ, সে কথাই কটাক্ষ করে বলতে চেয়েছে শিবসেনার মুখপত্র। বলে হয়েছে, ‘মহা জনাদেশ’-এর কোনও প্রভাব কার্যত পড়েনি এ বারের বিধানসভা ভোটে। ভোটের ফল প্রকাশের আগের দিন অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যাতেও দেবেন্দ্র ফডণবীস দাবি করেছিলেন, এনডিএ জোট অন্তত ২০০ আসন পাবে। সেই বিষয়টিরও সমালোচনা করেছে মারাঠী দৈনিক ‘সামনা’।
শাসকের দলের যখন এই পরিস্থিতি, তখন বিরোধী জোট স্বাভাবিক ভাবেই উজ্জীবিত। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ পেয়ে গিয়েছে এ বারের ভোটে। কংগ্রেস-এনসিপি দু’দলেরই আসন বেড়েছে। রাহুল গাঁধী সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে দল ছন্নছাড়া। তবু দু’টি আসন বেড়েছে দলের। এনসিপির প্রাপ্ত আসন ৪১ থেকে বেড়ে ৫৪ হয়েছে। বিরোধী জোটের এই চমকপ্রদ ফলের পিছনেও বিজেপির হাত রয়েছে বলে তোপ দেগেছে শিবসেনা। বিজেপিকে নিশানা করে দলের মুখপত্রের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন ভাবে ‘বিজেপি এনসিপি ভেঙে দিয়েছিল’ যে তারা ধরে নিয়েছিল, শরদ পওয়ারের দলের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ‘‘কিন্তু এনসিপি ফিরে এসেছে। ৫০-এর বেশি আসন পেয়েছে। নেতৃত্বহীন কংগ্রেসের ঝুলিতেও ৪৪টি আসন।’’ এই ফল শাসকের কাছে সতর্কবার্তা— ‘ঔদ্ধত্য দেখিও না’।
আরও পড়ুন: গেরুয়া শিবিরকে ভরসা দিচ্ছেন ‘কিংমেকার’ গোপাল কান্ডা, কটাক্ষ কংগ্রেসের
বিধানসভার সঙ্গেই মহারাষ্ট্রের সাতারা কেন্দ্রে লোকসভার উপনির্বাচনও হয়েছে। মে মাসে লোকসভা ভোটেই এনসিপি-র হয়ে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন উদয়নরাজে ভোসলে। কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগেই তিনি দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। ফলে উপনির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু সেই উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়ে ৮৭৭১৭ ভোটে হেরে গিয়েছেন ছত্রপতি শিবাজির বংশধর উদয়নরাজ। ভোটের প্রচারে বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন, এ বার শিবাজির কৃপাধন্য হবেন তাঁদের প্রার্থী উদয়নরাজ। কিন্তু তা হয়নি। শিবসেনার তোপ, ‘‘সাতারার ভোটাররা দেখিয়ে দিয়েছেন যে, শিবাজিকে নিয়ে সুবিধাবাদের রাজনীতি তাঁরা পছন্দ করেন না।’’
বিজেপি-শিবসেনা জোট করে ভোটে লড়ার পরেও এনসিপির এই সাড়া জাগানো ফল বিস্মিত করেছে শিব সেনাকে। সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাতারায় একাধিক জনসভা করেছেন উদয়নরাজের সমর্থনে। ফডণবীস ঘোষণা করেছিলেন, উদয়রাজে যেহেতু এখন বিজেপিতে, তাই ছত্রপতির আশীর্বাদ পাবে বিজেপি। তবু সাতারা হারিয়ে দিয়েছে উদয়নরাজেকে।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে তিন কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে, হরিয়ানায় ছ’টি কেন্দ্রে নির্ণায়ক ভূমিকায় নোটা
শুক্রবারের পুরো প্রতিবেদন জুড়েই বিজেপিকে পরের পর আক্রমণ করে গিয়েছে শিবসেনা। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ইতিমধ্যেই সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক নিয়ে দরাদরি শুরু করে দিয়েছে শিবসেনা। এমনকি, উদ্ধব ঠাকরের ছেলে আদিত্য ঠাকরের জন্য আড়াই বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বও শিবসেনা দাবি করেছে বলে দলের একটি সূত্রে খবর। দলের মুখপত্র ‘সামনা’য় জোটের খারাপ ফলের দায় বিজেপির দিকে ঠেলে সেই দাবিদাওয়ার পক্ষেই আরও জোর সওয়াল করতে চেয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy