দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে। পিটিআই
এক জনের জয় টানা তিন বার। অন্য জনের উপর্যুপরি দু’বার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের নতুন ইনিংসে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায় শুরু করলেন আজ। হায়দরাবাদ হাউসে তাঁদের দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকের পর ৭টি চুক্তিপত্রে সই করলেন ভারত এবং বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি বোতাম টিপে ভিডিয়ো কনফারেন্স-এ তিনটি যৌথ প্রকল্পেরও উদ্বোধন করলেন মোদী-হাসিনা। হাসিনাকে পাশে রেখে স্পষ্ট বাংলায় মোদী বলেন, ‘‘সবাইকে আমার শারদীয়ার শুভেচ্ছা জানাই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গত এক বছরে আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স-এ ন’টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। আজ আরও তিনটি হল। সব মিলিয়ে এক বছরে এক ডজন প্রকল্প শুরু করা গেল।’’
কূটনীতিকরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে ধারাবাহিক ভাবে একটি মাত্র প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক ধরে রাখা গিয়েছে। সেটা বাংলাদেশ। মোদীর কথায়, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব গোটা দুনিয়ার সামনে এক ইতিবাচক উদাহরণ। আজকের আলোচনার পর এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।’’ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে যে সাত পাতার যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে গোড়াতেই বলা হয়েছে, ‘দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীই প্রচলিত এবং অপ্রচলিত ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে এগিয়ে চলার প্রশ্নে সহমত হয়েছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে শুরু হওয়া দু’দেশের মধ্যে অপরিবর্তনীয় এই অংশীদারির ঐতিহ্য যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সেটাও নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহমত হয়েছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।’
যে সাতটি চুক্তি সই এবং তিনটি যৌথ প্রকল্পের আজ উদ্বোধন হল, তার মধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহণের জন্য চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিতে চাইছে বিদেশ মন্ত্রক। গত সাত বছর ধরে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছিল। এর ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে অনেকটাই সুবিধা হবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমার আর্সেনিক-দুষ্ট পানীয় জলের সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ফেনি নদীর জল সাব্রুম জেলার মানুষ পান করতে পারবেন। এ ছাড়া, বাংলাদেশ থেকে এলএনজি আমদানি সংক্রান্ত চুক্তিও সই হয়েছে। মোদী বলেন, ‘‘এর ফলে বাংলাদেশের আর্থিক লাভ হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে।’’ আর হাসিনার কথায়, ‘‘এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শক্তি ক্ষেত্রে চাহিদা মিটবে।’’ দু’দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা-শিলিগুড়ি বাস পরিষেবা চালু করার বিষয়টিকে দুই নেতাই স্বাগত জানিয়েছেন।’
হাসিনার কথায়, ‘‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের মাইল ফলক। আমি আশা করব ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ সহযোগিতা আরও বাড়বে।’’ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের মাটিতে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস সম্পর্কে আপসহীন নীতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ঢাকার পক্ষে। পাশাপাশি সীমান্তকে নিরাপদ, শান্ত এবং হিংসামুক্ত করার কথা বিশদে বলা হয়েছে। সম্প্রতি সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকের হত্যার অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিল ঢাকা।
যে তিনটি যৌথ প্রকল্পের আজ উদ্বোধন করলেন দুই প্রধানমন্ত্রী, তার মধ্যে রয়েছে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে চার তলা বিবেকানন্দ ভবন চালু করা। মোদী এর আগে স্থলসীমান্ত চুক্তি সই করতে গিয়ে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন। আজ তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বেই রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দের প্রভাব রয়েছে। বাংলা সংস্কৃতির উদারতার প্রতিফলন রয়েছে তাঁদের মধ্যে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy