ছবি: সংগৃহীত।
‘‘হিন্দি কি কেউ সাধে বলে নাকি?’’
‘সোনার কেল্লা’ ছবিতে বলেছিলেন জটায়ু। আম-বাঙালির ঠোঁটস্থ এই সংলাপ। তবে ‘সাধ’ না থাকলেও ‘এক দেশ, এক ভাষা’ নীতিতে হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়ার আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ অন্য ভাষাভাষীরা, বাঙালিরা তো বটেই! তাই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ‘এক দেশ, এক ভাষা’র ঘোষণার পর থেকেই সেই ক্ষোভে ফুটছে সোশ্যাল মিডিয়া। সেই ক্ষোভে যোগ হয়েছে ব্যঙ্গের ফোড়নও।
‘অনিচ্ছুক’ হিন্দিভাষী বাঙালির আইকন এ ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছেন সন্তোষ দত্ত অভিনীত রহস্য-রোমাঞ্চ-ঔপন্যাসিক জটায়ুর চরিত্রই। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ‘সোনার কেল্লা’র ওই কাল্ট দৃশ্যের ছবি দিয়ে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরছে অজস্র মিম। জটায়ুর হাতে সেখানে নিজে নিজে হিন্দি শেখার বই, মুখে অননুকরণীয় হাসি!
হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ব্যঙ্গ সোশ্যাল মিডিয়ায়।
‘সোনার কেল্লা’র ঐতিহ্য বজায় রয়েছে হালের ‘প্রাক্তন’ ছবিতেও। সেখানেও একটি দৃশ্যে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রেলের কোচ অ্যাটেন্ড্যান্টের কথোপকথন ভাইরাল। সাবিত্রী ভর্ৎসনা করছেন, ‘‘ওই যে এক ঘাটের মড়া এসি হ্যায়, চলতা হি নহি! আমার স্বামী কত চেষ্টা করতা হ্যায়...’’ দুই দৃশ্যেই অবশ্য একটি মজার যোগসূত্র রয়েছে। তিনি হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। জটায়ুর হিন্দি শুনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আপনি হিন্দিটা চালিয়ে যেতে পারেন, বেশ লাগছে।’’ সাবিত্রীকে অবশ্য তিনি বলছেন, ‘‘তুমি তো ভয়ঙ্কর রকমের হিন্দি বলছ!’’
এই ‘ভয়ঙ্কর’ হিন্দিতেই মজার ছলে গর্বিত বাঙালি হুঁশিয়ারি দিয়েছে হিন্দি আগ্রাসনকেও। বলেছে, ‘‘হ্যাঁ তোমরা বাঙালির উপরে হিন্দি চাপিয়ে দিতে পার, কিন্তু তুম খুব রিগ্রেট করেগা।’’ সেই হুঁশিয়ারিও ভাইরাল।
কেবল মৌখিক হুঁশিয়ারিই নয়, অমিত শাহের ঘোষণার পরে প্রতিবাদস্বরূপ রেলওয়ে স্টেশনের হিন্দি নামে কালো পোঁচ দেওয়ার একাধিক ছবি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ট্রেন্ডিং হয় #স্টপহিন্দিইমপোজ়িশন। সব ছবিই দক্ষিণ ভারতের নানা জায়গার, ভাষা নিয়ে আবেগ যেখানে প্রবল।
একটি কার্টুন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও। সেখানে দেখা যাচ্ছে জঙ্গলে বাঘ, হাতি, বাজপাখি, শেয়াল, শিম্পাঞ্জি সকলেই হাঁসের ডাক ডাকছে। তা দেখে জলাশয়ে একটি হাঁস আরেকটি হাঁসকে বলছে, আমরা ভাষা-নীতি নিয়ে বাড়াবাড়ি করিনি তো? আরেকটি ময়ূরের কার্টুনও ছড়িয়েছে টুইটারে, যার পেখমের নানা পালকে নানা ভাষার নাম। পাশের ছবিতেই দেখা যাচ্ছে ময়ূরের পেখমে কেবল একটিই পালক, তাতে লেখা ‘হিন্দি’।
ব্যঙ্গের এমন নানা তিরেই নেট-দুনিয়া বিঁধেছে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার ভাবনাকে। তবে বাঙালির ব্যঙ্গের পুরোভাগে ছিলেন অবশ্য সেই জটায়ুই। তাঁর সুরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঙালি শপথ নিয়েছে, ‘‘কেউ হিন্দি চাপাতে এলেই শুনিয়ে দিতে হবে, তং মত করো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy