সচিন পাইলট
বিজেপির বিমানবন্দরে অবতরণ? নিজের দল গড়ে নতুন উড়ান? না কি গোঁত্তা খেয়ে কংগ্রেসের ঘাঁটিতেই ফেরত? তাঁর বিমান কোন পথে উড়বে, সচিন পাইলট এখনও সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না।
সচিন বুধবার জানিয়েছেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না। এমন কোনও পরিকল্পনাও নেই। ‘আমি এখনও কংগ্রেসের সদস্য’ বলেও দাবি করেছেন সচিন। কংগ্রেস নেতৃত্ব মুখে সচিনের জন্য ‘দরজা খোলা’ রাখার কথা বললেও তাঁর উপরে প্রবল চাপ তৈরি করেছেন। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের স্পষ্ট বার্তা, দলের অনুশাসন ভাঙলে তা আর বরদাস্ত করা হবে না। কংগ্রেসে থাকতে হলে দলের শর্তেই থাকতে হবে। কংগ্রেস নেতৃত্ব মঙ্গলবারই রাজস্থানের এই বিদ্রোহী নেতাকে উপমুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরিয়েছেন। তাঁর অনুগামী দুই নেতারও মন্ত্রিত্ব গিয়েছে। বুধবার সচিনের উপর ত্রিমুখী চাপ তৈরি করা হল।
এক, সচিন ও তাঁর ১৮ অনুগামী নেতার বিধায়ক পদ খারিজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যা ঠেকাতে সচিনকে আইনি লড়াইয়ে নামতে হবে। দুই, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত দাবি করেছেন, সচিনের সঙ্গে বিজেপির আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে। ‘বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলে আমাকে গাঁধী পরিবারের চোখে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে’ বলে সচিন দাবি করলেও গহলৌতের অভিযোগ, বিজেপি কংগ্রেস বিধায়কদের ঘোড়া কেনাবেচায় ২০ কোটি টাকার দর হেঁকেছিল। উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন নিজেই ‘ডিল’ করছিলেন। জয়পুর ও দিল্লির বাতাসে জল্পনা, যে কোনও সময় লেনদেনের প্রমাণস্বরূপ অডিয়ো বা ভিডিয়ো ক্লিপ বাজারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ না-থাকলে সচিন কেন তাঁর অনুগামীদের হরিয়ানায় বিজেপি-সরকারের আতিথেয়তায় পাঁচতারা হোটেলে পুলিশের ঘেরাটোপে বন্দি করে রেখেছেন? সচিন শিবিরের বিধায়কেরা যে দু’টি রিসর্টে রয়েছেন, তার একটিকে রাতারাতি কোয়রান্টিন সেন্টারে পরিণত করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। ওই রিসর্টের গেটে কোয়রান্টিন সেন্টারের নোটিস বসেছে। কর্মীদের মুখে কুলুপ। গেটে রক্ষী বলছেন, ঢোকা চলবে না। ভিতরে করোনা-সংক্রমিতরা রয়েছেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, হরিয়ানার বিজেপি সরকারের সঙ্গে যোগসাজশেই এটা হয়েছে, যাতে ওই বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করা না যায়।
আরও পড়ুন: দক্ষতায় জোর মোদীর, প্রশ্ন উঠছে কাজ কই
আরও পড়ুন: সচিন নিয়ে নীরবই বসুন্ধরা
তিন, কংগ্রেস সংগঠনে সচিনের প্রভাব মুছে ফেলতে রাজস্থানে কংগ্রেসের সব স্তরের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই তিন চাপের মুখে সচিন দাবি করেছেন, তিনি বিজেপিতে যাচ্ছেন না। তাঁর সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বৈঠক হয়নি। সূত্রের খবর, সচিনের অনুগামীদের অনেকেই বিজেপিতে যোগ ইচ্ছুন নন। সচিন আজ সাংবাদিক বৈঠক করে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি জানাবেন বলে ঠিক ছিল। তা হয়নি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন, “দলকে তলানি থেকে টেনে তুলে ক্ষমতায় এনেছিলাম। কিন্তু গহলৌতকে মুখ্যমন্ত্রী করা হল। রাহুল গাঁধীর কথায় উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ মেনে নিই। রাহুল কাজের সমান বণ্টনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি দলের সভাপতির পদ ছাড়ার পরেই গহলৌত ও অন্যরা আমাকে কোণঠাসা করতে থাকে।” সচিন জানান, তাঁর সঙ্গে সনিয়া বা রাহুল গাঁধীর কথা হয়নি। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার কথা হয়েছে। কিন্তু সমাধানসূত্র বেরোয়নি।
কেন সচিনের এই নরম সুর? সূত্রের খবর, সচিনের অনুগামী বিধায়কদের সকলে বিজেপিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক নন। তার উপরে বিজেপির সঙ্গে লেনদেনের প্রমাণ প্রকাশ্যে এলে, সচিনের গায়েই কাদা ছিটবে। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, রাজস্থানে বিধানসভা ভোটের এখনও তিন বছরের বেশি বাকি। বিধায়ক পদ খারিজের ভয়ে অনেকে কংগ্রেসে থেকে যেতে পারে। কারণ, হুইপ সত্বেও পরিষদীয় দলের বৈঠকে না যাওয়ায় কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সচিন ও তাঁর অনুগামী ১৮ জন নেতার বিধায়ক পদ খারিজ করার দাবি জানিয়েছে বিধানসভার স্পিকারের কাছে। স্পিকার সি পি জোশী তাঁদের নোটিস পাঠিয়ে জানতে চেয়েছেন, কেন তাঁদের বিধায়ক পদ খারিজ করা হবে না। দু’দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে হবে। নয়তো সচিনদের আইনি লড়াইয়ে যেতে হবে। সচিন কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনুসিঙ্ঘভির সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু মনুসিঙ্ঘভি কংগ্রেস নেতৃত্বকেই আইনি পরামর্শ দিচ্ছেন। যাতে সচিনদের বিধায়ক পদ খারিজ হয়। সরকারও না পড়ে।
সচিন ‘ব্যাকফুট’-এ গিয়ে সুর নরম করলেও কংগ্রেসের আক্রমণের ঝাঁঝ কমেনি। রাজস্থানের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র নেতা অবিনাশ পাণ্ডের কথায়, “পাইলটের জন্য পার্টির দরজা বন্ধ হয়নি। ভগবান ওঁকে সুবুদ্ধি দিন। বিজেপির জাল থেকে বেরিয়ে আসুন।” গহলৌতের কটাক্ষ, “ইংরেজিতে বলিয়ে-কইয়ে, সুদর্শন হলেই হয় না। সোনার ছুরি দিয়ে খাওয়া যায় না। যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁরা এখন হোটেলে বসে রয়েছেন।” তাঁর অভিযোগ, গত ছ’মাস ধরেই বিজেপি সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন নিজেই ‘ডিল’ করছিলেন। আবার ঘোড়া কেনাবেচা হচ্ছে না বলেও দাবি করছিলেন। কংগ্রেস বিধায়কদের কোয়রান্টিন সেন্টারে রেখে সচিন যে বিজেপিতে না-যাওয়ার কথা বলছেন, তা নিয়ে কটাক্ষ ছুড়েছেন রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। তাঁর কথায়, “হরিয়ানায় বিজেপির ঘেরাটোপ থেকে সঙ্গী বিধায়কদের বার করে জয়পুরে নিজের বাড়িতে ফিরে আসুন। বিজেপির সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করুন।”
সচিনের বক্তব্য, কংগ্রেসে তাঁকে অপমানিত হতে হয়েছে। তিনি রাজস্থানের মানুষের সেবা করতে চান। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক করেননি।
সচিন পাইলটের বিমান এখনও ত্রিশঙ্কু অবস্থাতেই ঝুলে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy