Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

আমি আর নেই, কাউকে পাশে পাইনি, টুইটারে চিঠি লিখে ক্ষোভ উগরে দিলেন রাহুল

কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, ফের বোঝানোর চেষ্টা হবে রাহুলকে। একান্তই না মানলে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে পরবর্তী সভাপতি ঠিক করতে হবে।

বাজেট অধিবেশনের ফাঁকে সংসদ থেকে বেরোচ্ছেন রাহুল গাঁধী। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই টুইটে একটি খোলা চিঠি লিখে তিনি পদত্যাগের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেন ‘কংগ্রেস সভাপতি’ শব্দটিও। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: প্রেম সিংহ

বাজেট অধিবেশনের ফাঁকে সংসদ থেকে বেরোচ্ছেন রাহুল গাঁধী। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই টুইটে একটি খোলা চিঠি লিখে তিনি পদত্যাগের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেন ‘কংগ্রেস সভাপতি’ শব্দটিও। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: প্রেম সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৯ ০৩:৩৩
Share: Save:

সংসদ ভবন থেকে বেরোচ্ছিলেন। রোজ একই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত রাহুল গাঁধী এ দিন কিছুটা বিরক্তির সুরে বললেন, ‘‘আমি তো সভাপতি নেই। এক মাস আগেই কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির উচিত ছিল নতুন সভাপতি ঠিক করে নেওয়া। দেরি হয়ে যাচ্ছে। ওদের দ্রুত করা উচিত। আমি এ সব ঠিক করব না।’’

কয়েক ঘণ্টা পরেই টুইটে একটি খোলা চিঠি লিখে পদত্যাগের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন রাহুল। টুইটারে মুছলেন ‘কংগ্রেসের সভাপতি’ শব্দটিও। এখন তিনি শুধুই ‘কংগ্রেস’ ও ‘সংসদে’র সদস্য। খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন, নিজের দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিলেন। বোঝালেন, লোকসভা ভোটে হারের দায় নিয়ে তাঁর মতো আরও অনেকেরও ইস্তফা দেওয়া উচিত। বোঝালেন, অনেক ক্ষেত্রেই মোদী-আরএসএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেউ পাশে দাঁড়াননি। তিনি ‘একা’ই লড়েছেন। ঠিক যে কথাটি ক্ষুব্ধ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা এক মাস আগে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বলেছিলেন।

রাহুল লিখেছেন, ‘‘সভাপতি হিসেবে ভোটে হারের দায় আমার। দলের বৃদ্ধির জন্য দায়বদ্ধতা জরুরি। তাই আমি পদত্যাগ করেছি। দলকে নতুন করে তৈরি করা কঠিন সিদ্ধান্ত। এবং ভোটে হারের জন্য অনেককে দায়বদ্ধ করা উচিত। কিন্তু নিজের দায়িত্ব উপেক্ষা করে অন্যদের দায়ী করা ঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী, আরএসএসের বিরুদ্ধে কখনও আমি পুরো একা লড়েছি।’’

এক মাস আগে সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিলেও কেন অন্য নেতারাও হারের দায় নিয়ে ইস্তফা দিলেন না, সম্প্রতি ঘনিষ্ঠদের কাছে তা নিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন রাহুল। তাঁর ইঙ্গিত ছিল কিছু প্রবীণ নেতার দিকে। কিন্তু রাহুলের ইশারা বুঝেও কেউ সে পথ ধরেননি। পাছে তা মঞ্জুর হয়ে যায়! কংগ্রেসের অনেক নেতা এখনও মনে করছেন, রাহুলের আজকের চিঠি যতটা না ইস্তফা দেওয়ার পুরনো অবস্থান আওড়ানো, তার থেকেও বেশি সেই প্রবীণদের ইস্তফা দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। আহমেদ পটেল ইতিমধ্যেই রাহুলের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন।

কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, ফের বোঝানোর চেষ্টা হবে রাহুলকে। একান্তই না মানলে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে পরবর্তী সভাপতি ঠিক করতে হবে। তবে রাতে কংগ্রেস সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তী সভাপতি বাছাই না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন রাহুল। তিনি চাইছেন, গাঁধী পরিবারের বাইরের কেউ কংগ্রেস সভাপতি হোন। পরিবারের ‘অনুগত’ সুশীল শিন্ডের নাম দৌড়ে এগিয়ে বলে কংগ্রেসই জানাচ্ছিল। নাম ঘুরছিল সচিন পাইলটেরও। কিন্তু আজ সকালে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করতে যান অশোক গহলৌত। তিনি নিজে দাবিদার, আবার সচিনকেও রুখতে চান। এরই মধ্যে মল্লিকার্জুন খড়্গে আজ শরদ পওয়ারের বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করেন। যে দলের কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জল্পনা প্রবল।

রাহুল আজ জানান, পালাবদলের প্রক্রিয়ায় তিনি থাকবেন না। প্রিয়ঙ্কা এখন বিদেশে। সনিয়া-রাহুলেরও বিদেশে যাওয়ার কথা, বলছে দল। নেতারা বলছেন, ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক পর্যন্ত রাহুলই সভাপতি থাকবেন। কমিটিই ইস্তফা মঞ্জুর করতে পারে, অন্তর্বর্তী সভাপতি ঠিক করা ও নতুন সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর মধ্যেই রাহুল আগামিকাল মুম্বই যাচ্ছেন। গৌরী লঙ্কেশের হত্যার সঙ্গে সঙ্ঘের বিচারধারা জড়িত মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় রাহুল নিজেই হাজিরা দেবেন। বাজেটের পরে রাজ্যওয়াড়ি সফরও করবেন।

ফারুক আবদুল্লা বলেন, ‘‘রাহুল আবার ফিরে আসতে পারেন সভাপতি হয়ে। এখন বয়স কম।’’ অমেঠীতে রাহুলকে হারানো স্মৃতি ইরানি মুচকি হেসে বললেন, ‘‘চলুন! জয় শ্রীরাম!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy