প্রদীপের মৃত্যুর খবর আসতেই শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা পরিবারে।
মাত্র কয়েক মিনিটের কথা। তার পরেই ফোনের ও পারে একটা বিকট কানফাটানো শব্দ। মুহূর্তেই নেমে এল একটা চরম নিস্তব্ধতা। ফোনের এ পার থেকে ‘হ্যালো…হ্যালো’ কণ্ঠস্বরটা ভেসে যাচ্ছিল। কিন্তু ফোনের ও পার থেকে আর কোনও প্রত্যুত্তর ফিরে আসেনি।
প্রদীপ সিংহ যাদব। উত্তরপ্রদেশের কনৌজের আজান সুখসেনপুরের বাসিন্দা। সিআরপিএফ জওয়ান। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপির কনভয়ের উপর হামলা হয়, সেই দলেই ছিলেন প্রদীপ। আত্মঘাতী হামলায় জওয়ানদের যে গাড়িটি পুরো উড়ে গিয়েছিল, সেই গাড়িতেই সহকর্মীদের সঙ্গে ছিলেন তিনি। হামলার ঠিক আগেই বাড়িতে ফোন করেছিলেন। স্ত্রী নীরজ দেবীর সঙ্গে কথা হয়েছিল প্রদীপের। মেয়েরা কেমন আছে, কী করছে— সবই খোঁজ নিয়েছিলেন।
শুক্রবার নীরজ দেবী বলেন, “প্রদীপের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। কথা বলতে বলতেই ফোনের ও পারে বিকট একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম। কয়েক সেকেন্ডের চরম নিস্তব্ধতার পরই ফোনটা কেটে গেল।” তিনি আরও বলেন, “আঁচ করতে পেরেছিলাম কিছু একটা অঘটন ঘটেছে। মনটা অস্থির হয়ে উঠছিল। বার বার ফোন করতে থাকি। কিন্তু নাহ! কোনও সাড়াশব্দ পাইনি। মুহূর্তে সব কিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে গেল।”
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা সম্পর্কে এগুলি জানেন?
শোকে মুহ্যমান: নিহত জওয়ান প্রদীপের বাবা ও বড় মেয়ে সুপ্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
অঘটনের আঁচ করতে পেরেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা যে তাঁর জীবনেও নেমে আসছে তা আঁচ করতে পারেননি নীরজ। তখনও জানতেন না যে, পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলা হয়েছে। আর সেই হামলায় তাঁর স্বামী নিহত হবেন!
আরও পড়ুন: ৬০ কেজি আরডিএক্সে বিস্ফোরণ পুলওয়ামায়, দেহ ছিটকে পড়ে ৮০ মিটার দূরে!
আরও পড়ুন: ‘বহুত বড়ি গলতি’, পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষার হুঁশিয়ারি মোদীর, সেনাবাহিনীকে ‘স্বাধীনতা’
আজান সুখসেনপুরের পাশেরই গ্রাম বারাসিরোহীতে বাপের বাড়িতে দুই মেয়েকে নিয়েছিলেন নীরজ। প্রদীপের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে না পারায় উত্কণ্ঠা আর উদ্বেগ যেন ক্রমশ ঘিরে ধরেছিল নীরজকে। সেই উত্কণ্ঠাটাই কান্না এনে দিল বেশ কিছু ক্ষণ পরের একটা ফোনে। ফোনটা এসেছিল সিআরপিএফ কন্ট্রোল রুম থেকে। নীরজের কথায়, ‘‘কন্ট্রোল রুম থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিস্ফোরণে প্রদীপ মারা গিয়েছে।” খবরটা পাওয়ার পরই আজান সুখসেনপুরে শ্বশুরবাড়িতে ছুটে যান নীরজ।
নিহত জওয়ান প্রদীপ যাদব।
শনিবার প্রদীপের কফিনবন্দি মরদেহ বাড়িতে আসবে। ১০ এবং ২ বছরের দু’টি মেয়ে রয়েছে প্রদীপের। শ্বশুরবাড়ির দাওয়ায় বসে নীরজ এ দিন বলেন, “ছোট মেয়ে সোনাকে খুব ভালবাসত প্রদীপ। বৃহস্পতিবার যখন ওর সঙ্গে কথা হয়, সোনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছিল। প্রায় ১০ মিনিট কথা হয়।”
প্রদীপের এক তুতো ভাই সোনু বলেন, “এ মাসের গোড়াতেই শেষ বার বাড়িতে এসেছিল দাদা। কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু একই সঙ্গে ওর জন্য গর্বিত আমরা।” তবে কোনও আশ্বাস নয়, হামলার বদলা চাইছেন তাঁরা, এ কথাও জানান সোনু।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy