Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

‘মিত্রোঁ’হীন দীর্ঘ ভাষণে ভারত-কথা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে তাঁর একান্ত নিজস্ব সম্বোধন ‘মিত্রোঁ’ না-শুনতে পেয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সত্যি সত্যিই ‘মিত্রোঁ’ বলা ছেড়ে দিলেন তিনি?

নরেন্দ্র মোদী।

নরেন্দ্র মোদী।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪২
Share: Save:

একটি বারও ‘মিত্রোঁ’ নয়। বদলে ১৩ বার ‘মেরে প্যারে দেশবাসিয়োঁ’।

লালকেল্লা থেকে ৮৬ মিনিটের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে তাঁর একান্ত নিজস্ব সম্বোধন ‘মিত্রোঁ’ না-শুনতে পেয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সত্যি সত্যিই ‘মিত্রোঁ’ বলা ছেড়ে দিলেন তিনি?

২০১৬-র ৮ নভেম্বর রাত ৮টায় এই ‘মিত্রোঁ’ সম্বোধনে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতা শুরু করে প্রধানমন্ত্রী ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। তার পর থেকেই তাঁর ‘মিত্রোঁ’ নিয়ে ফেসবুক-টুইটারে ঠাট্টা-রসিকতা, মিম-কার্টুন তৈরি শুরু। বিরোধীরা বলতেন, ‘মিত্রোঁ’ শুনলেই দেশের মানুষের এখন পিলে চমকে ওঠে। মাত্র এক শব্দে ভয়ের গল্প লিখে ফেলেছেন মোদী।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্র অবশ্য বলছে, বহু দিন ধরেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আর ‘মিত্রোঁ’ শোনা যাচ্ছে না। লকডাউন ঘোষণা, করোনা-কালে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা বা রেডিয়োর ‘মন কি বাত’-এও এখন ‘মিত্রোঁ’ অনুপস্থিত। বদলে বক্তৃতার মাঝে মাঝে ‘সাথিয়োঁ’ বলছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর ৮৬ মিনিটের বক্তৃতা এ বার লালকেল্লায় দীর্ঘ বক্তৃতাগুলির একটি। প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু লালকেল্লায় তাঁর প্রথম বক্তৃতায় ৭২ মিনিট সময় নিয়েছিলেন। বাজপেয়ী কখনও ৩০ মিনিটের বেশি সময় নেননি। মনমোহনও আধ ঘণ্টায় ভাষণ শেষ করতেন, দু’তিন বার ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট সময় নিয়েছিলেন। মোদী অবশ্য এর আগে ৯০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে বক্তৃতা করেছেন।

নোট বাতিলের জেরে মানুষের হেনস্থা স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে, ‘মিত্রোঁ’ নিয়ে ঠাট্টা এড়াতেই কি সচেতন ভাবে তা বক্তৃতায় বাদ পড়েছে?

প্রশ্ন করলে বিজেপি নেতারা বলছেন, সম্বোধনে কী আসে যায়! প্রধানমন্ত্রী যে করোনার আতঙ্ক, অর্থনীতিতে মন্দার আবহের মধ্যেও দেশের মানুষের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন, সেটাই আসল।

২০২০-তে বছর জুড়ে একের পর এক সমস্যা এলেও দেশ একটুও আত্মবিশ্বাস হারায়নি বলে প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লা থেকে যুক্তি দিয়েছেন। ২০২২-এ স্বাধীনতার ৭৫-তম বছরে ফের ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর স্বপ্ন দেখিয়ে মোদী বলেছেন, “আমি এক নতুন প্রভাতের লালিমা দেখতে পাচ্ছি। শুনতে পাচ্ছি আত্মনির্ভর ভারতের শঙ্খধ্বনি।” কংগ্রেস সভানেত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, “মতপ্রকাশ, প্রশ্ন করা, মতভেদ জানানো, কথা বলা, লেখা, সরকারের দায়বদ্ধতার দাবি তোলার স্বাধীনতা কি আজ রয়েছে?” তাঁর অভিযোগ, দেখে মনে হচ্ছে, সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সাংবিধানিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার যুক্তি, প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রেরণা জাগানো’ বক্তৃতায় শক্তিশালী, আত্মনির্ভর ভারত তৈরির সঙ্কল্প ফুটে উঠেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরও মত, প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় তাঁর দায়বদ্ধতা স্পষ্ট। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহর মতে, আত্মনির্ভর ভারত তৈরির ইচ্ছায় চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, কিন্তু তা সমাধানের ক্ষমতাও রয়েছে।

১৫ অগস্ট লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “করোনা একটা বিপত্তি ঠিকই। কিন্তু এত বড় বিপত্তিও নয় যে আত্মনির্ভর ভারতের যাত্রাপথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।” কিন্তু স্বাধীনতা দিবসেই করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাপিয়ে গিয়েছে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “মনে হচ্ছে, সরকার এই স্বাস্থ্য সঙ্কট নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে। অতিমারি নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ হচ্ছে, মোদী সরকারের সেটা বলা উচিত।”

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Mitron Independence Day 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy