কৃষকদের উদ্দেশে বার্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। —ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
কৃষকদের সঙ্গে বার্তালাপ, পিএম কিসান নিধির টাকা ট্রান্সফার, কৃষকদের উদ্দেশে ভাষণ। এই ত্রিফলা কর্মসূচিতেও প্রধানমন্ত্রীর নিশানায় পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যে পিএম কিসান নিধি প্রকল্প চালু না করায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা রাজ্য সরকারকে বার বার আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে এই প্রকল্প রাজ্যে চালু করা হচ্ছে না বলে তোপ দেগেছেন। কৃষকদের ভুল বোঝানোর অভিযোগ এনে বাম-কংগ্রেসকেও তীব্র আক্রমণে বিঁধেছেন মোদী।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় আলোচনা হয়েছে আন্দোলনকারী কৃষকদের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে কৃষিমন্ত্রী পর্যন্ত বার্তা দিয়েছেন। একাধিক সভায় প্রধানমন্ত্রীও কৃষকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু চিঁড়ে ভেজেনি। আন্দোলনেই অনড় চাষিরা। এ বার সরাসরি আসরে নামলেন প্রধানমন্ত্রী। কিসান সম্মান নিধি প্রকল্পের টাকা ট্রান্সফারের অনুষ্ঠানে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেন নরেন্দ্র মোদী। যদিও কৃষকরা যে তিনটি নয়া আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন, তেমন কোনও সম্ভাবনার আশ্বাস মেলেনি প্রধানমন্ত্রীর বার্তায়। ফলে তাঁর এই আহ্বানেও কতটা সাড়া দেবেন কৃষকরা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের অনুষ্ঠান ছিল পিএম কিষাণ নিধি সম্মান যোজনার কিস্তির টাকা ট্রান্সফার নিয়ে। শুক্রবার সেই কর্মসূচিতে কম্পিউটার ক্লিকের মাধ্যমে প্রায় ১৮ হাজার ৯৮ কোটি টাকা কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর কৃষকদের উদ্দেশে বক্তৃতার বড় অংশেই ছিল পশ্চিমবঙ্গ। এই প্রকল্পে কৃষকদের বছরে ৬০০০ টাকা করে দেয় কেন্দ্র। দেশের সব রাজ্যে চালু হলেও এ রাজ্যে এই প্রকল্প চালু করেনি তৃণমূল সরকার। সেই নিয়েই এ দিন মোদী তোপ দাগেন রাজ্যকে। বলেন, ‘‘পিএম কিসান নিধি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন দেশের সব কৃষক। কিন্তু আমার দুঃখ, শুধু পশ্চিমবঙ্গই এই প্রকল্প চালু করেনি। এতে রাজ্যকে কোনও টাকা দিতে হয় না। তবু রাজনৈতিক কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই প্রকল্প চালু করছে না। এর ফলে রাজ্যের প্রায় ৭০ লক্ষ কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, অনলাইনে বহু কৃষক এই প্রকল্পের টাকা পাওয়ার আবেদন করেছেন। সেই আবেদনও আটকে রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।’’
আরও পড়ুন: শনিবার কলকাতায় শুভেন্দু, নবাগতদের নিয়ে বৈঠক রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের
দিল্লিতে চলছে কৃষক আন্দোলন। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দল ও সংগঠনগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বামেরা। ঘটনাচক্রে এই বামেরা এ রাজ্যে ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী এ দিন বামেদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এরা ৩ দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল। এখন সে রাজ্যে বিরোধী। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০ বছরের মধ্যে এক বারও কৃষকদের স্বার্থে কোনও মিছিল-মিটিং করেননি। আর এখন পঞ্জাবে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন। কেরলে বামেদের সরকার রয়েছে। কিন্তু সেখানে কৃষক মান্ডিই চালু করেনি। এরা কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছে। বিপথে চালিত করছে।’’ প্রায় এক পঙক্তিতে বসিয়ে কংগ্রেসকেও ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলছেন, ‘‘একটা দল (কংগ্রেস) কয়েক দশক ধরে দেশের সরকারে ছিল। তখন কৃষকদের কথা ভাবেনি। এখন কৃষকদের কথা মনে পড়েছে। এখন দলের নেতারা বলছেন, নতুন আইনে নাকি কৃষকদের জমি নিয়ে নেওয়া হবে। কৃষকদের জমি-বাড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে কাদের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে, আমরা জানি।’’
আরও পড়ুন: সোমেনের জন্মদিনে একই মঞ্চে সব দলকে আমন্ত্রণ রোহন-শিখার
কিন্তু কৃষকদের মূল আন্দোলন কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে। তাঁদের যে সব সংশয়, সেগুলি দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা মান্ডি কোনওটাই যে উঠে যাবে না, এবং নয়া আইন যে পুরনো প্রথার সংযোজন মাত্র, সে কথা তুলে ধরে মোদী বলেন, ‘‘নয়া আইনে কৃষকরা ফসল বিক্রি করার স্বাধীনতা পেয়েছেন। যেখানে বেশি দাম পাবেন, সেখানেই বিক্রি করতে পারবেন। আবার চাইলে মান্ডিতে গিয়ে সরকারি সহায়ক মূল্যেও বিক্রি করতে পারবেন। এতে কৃষকদের লাভই হবে।’’
খোলা মনে কৃষকদের আলোচনার আহ্বানও জানিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘কোনও নতুন ব্যবস্থা হলে তার কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। আমরা বলছি না যে, আমরা ১০০ শতাংশ ঠিক। কিন্তু তার জন্য আলোচনার রাস্তা খোলা আছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনের সব রাস্তা খোলা।’’ কৃষকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘আপনাদের যে কোনও সমস্যা সরকার শুনতে রাজি। খোলা মনে আলোচনা করতে রাজি। তথ্য-পরিসংখ্যান-যুক্তি দিয়ে আলোচনায় বসুন। সমস্যা মিটে যাবে।’’
কৃষকদের উদ্দেশে ভাষণের আগে বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বার্তালাপ করেছেন মোদী। অরুণাচল প্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যের কৃষকদের সাফল্যের কথা শুনেছেন। তাঁদের সমস্যার কথাও শুনেছেন। নয়া কৃষি আইনের ফলে তাঁরা কোনও সমস্যার মুখে পড়েছেন কি না, জানতে চেয়েছেন তা-ও। তবে সেই বার্তালাপের ফাঁকেও পশ্চিমবঙ্গে কিসান নিধি প্রকল্প চালু না করা নিয়ে ক্ষোভের কথা টেনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy