সিএএ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে মোদী সরকার। —ফাইল চিত্র।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার তাদের সমালোচনায় সরব হল লন্ডনের ‘দ্য ইকনমিস্ট’ পত্রিকা। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে নরেন্দ্র মোদী বিভাজনের ইন্ধন জোগাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের।
বিজেপির আমলে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে‘অসহিষ্ণু ভারত’ নামে চলতি সপ্তাহের সংখ্যা প্রকাশ করেছে ‘দ্য ইকনমিস্ট’। কাঁটাতারের উপর পদ্মের ছবি আঁকা ওই প্রচ্ছদ কাহিনীতে মোট তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে প্রথমটিতেই সিএএ এবং এনআরসির কথা উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, ‘‘ভারতের ২০ কোটি মুসলিম আতঙ্কিত। তাঁদের আশঙ্কা, নরেন্দ্র মোদী হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগোচ্ছেন। গত মাসে ভারত সরকার যে আইন এনেছে, তাতে মুসলিম ছাড়া বাকিদের নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ১৩০ কোটি মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করতে উদ্যত হয়েছে বিজেপি সরকার, যাতে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বার করা যায়। কিন্তু ২০ কোটি মুসলিমদের অধিকাংশেরই নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। দেশ হারানোর পথে তাঁরা। যাঁরা জালে ধরা পড়বেন, তাঁদের জন্য ডিটেশন ক্যাম্প তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছে সরকার।’’
আশির দশকে যে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের মাধ্যমে বিজেপির উত্থান, এই মুহূর্তে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করে, উত্তেজনা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলাই তাদের উদ্দেশ্য বলেও দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ‘‘বিজেপির জন্য যা অমৃত সমান, ভারতের জন্য তা বিষ। সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি-নিয়ম বিসর্জন দিয়ে যে পদক্ষেপ করছেন মোদী, তা ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর ক্ষতিসাধন করবে। আগামী কয়েক দশক ধরে এর ফল ভুগতে হবে ভারতকে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে বিপদ ডেকে আনছেন মোদী।’’
আরও পড়ুন: ‘মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর শেষ দিন’, ভাইরাস আতঙ্কে চিন, সৌদিতে আক্রান্ত ভারতীয়
‘দ্য ইকনমিস্ট’-এর দাবি, গত বছর দ্বিতীয় দফায় নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের অর্থনীতি ক্রমশ নিম্নমুখী হয়েছে। অর্থনীতির শ্লথ গতি ও মূল্যবৃদ্ধির চড়া হারের প্রভাব দেশের ঘাড়ে চেপে বসেছে। এমন পরিস্থিতিতে যেনতেন প্রকারে আসল সমস্যা থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরানোই লক্ষ্য মোদী সরকারের। তার জন্যই জোর করে সিএএ-এনআরসি-র বিষয় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে দ্বিতীয় বার বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদী যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী এবং বুঝে শুনেই তিনি এগোচ্ছেন বলে দাবি করেছে ‘দ্য ইকনমিস্ট’। তাদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপ ভারতের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে ভেঙে দিচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় বার ক্ষমতায়। এসে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর। জানেন জনসংখ্যার একটা অংশের সমর্থন রয়েইছে তাঁর কাছে। তাই হিন্দুত্বের হাওয়া আরও জোরদার করার পথে এগোচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুন: হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার তাগিদে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করছেন মোদী, দাভোস থেকে তোপ ধনকুবের সোরসের
চলতি সপ্তাহেই ব্রিটেনের ইকনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)-এর বিশ্ব গণতন্ত্র সূচকে একধাক্কায় ১০ ধাপ নীচে নেমে গিয়েছিল ভারত। এই পতনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভারত সরকারের সাম্প্রতিক বেশ কিছু সিদ্ধান্তকেই দায়ী করেছিল ইআইইউ। সে নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই ‘দ্য ইকনমিস্ট’-এর এই নয়া সংখ্যা সামনে এসেছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেতা বিজয় চৌথাইওয়ালে। ওই পরিচ্ছেদটি তুলে ধরে টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, ১৯৪৭-এ ব্রিটিশরা চলে গিয়েছে। কিন্তু দ্য ইকনমিস্টের সম্পাদকরা এখনও ঔপনিবেশিক যুগেই বাস করছেন। দেশের ৬০ কোটি মানুষ মোদীকে ভোট দিয়েছেন। তাতেই গোঁসা হয়েছে ওঁদের।’’
We thought the Brits had left in 1947! But the editors of @TheEconomist are still living in in colonial era. They are furious when 600m Indians do not follow their explicit instructions of not voting Modi. https://t.co/LmPZlLZlny
— Dr Vijay Chauthaiwale (@vijai63) January 24, 2020
So arrogant they are that they are now advising/threatening Indian Supreme Court. Illegal emigrants are allegedly hunted down in India !! And in the UK? Which country talks about returnees? And how clever to fudge the intent of the CAA? Colonial mindset of few willl never change.
— Dr Vijay Chauthaiwale (@vijai63) January 24, 2020
চৌথাইওয়ালের টুইট।
সিএএ-এনআরসি নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য ওই পত্রিকাকে একহাত নেন চৌথাইওয়ালে। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের এত দম্ভ যে ভারতের সুপ্রিম কোর্টকেও এখন জ্ঞান দিচ্ছে। ভারতেই নাকি বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের ধরপাকড় চলছে! তাহলে ব্রিটেনে কী চলছে? কারা অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানোর কথা বলে? সিএএ-র উদ্দেশ্য নিয়ে অপরিণত কথাবার্তা কি আদৌ বুদ্ধিমত্তার পরিচয়? কিছু মানুষের ঔপনিবেশিক চিন্তা-ভাবনা কখনও পাল্টাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy