Advertisement
E-Paper

কখন পড়বে গোলা, আতঙ্ক কামালকোটে

কাঁটাতারে ঘেরা কামালকোট কৃষ্ণগঙ্গা নদীর তীরে। গত কালের সংঘর্ষের সময়ে পাক গোলায় নিহত হয়েছেন সেখানকার বাসিন্দা ইরশাদ আহমেদ।

সীমান্তের গ্রামে পড়েছে পাক গোলা।

সীমান্তের গ্রামে পড়েছে পাক গোলা।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৩২
Share
Save

গত কাল গভীর রাতের পরে আর গোলাবর্ষণ হয়নি। আজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে তুষারপাত। জমে গিয়েছে প্রায় ২ ইঞ্চি বরফ। দীপাবলির আগে নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের পরে আপাতত শান্তই উত্তর কাশ্মীরের বারামুলায় উরি সেক্টরের গ্রাম কামালকোট। কিন্তু আতঙ্ক এখনও স্পষ্ট এলাকার সব বাসিন্দার চোখেমুখে।

পাহাড়, দেবদারু গাছের সঙ্গে কাঁটাতারে ঘেরা কামালকোট কৃষ্ণগঙ্গা নদীর তীরে। গত কালের সংঘর্ষের সময়ে পাক গোলায় নিহত হয়েছেন সেখানকার বাসিন্দা ইরশাদ আহমেদ। পাশের গ্রাম বালকোট আর গোহালানেও মৃত্যু হয়েছে দুই বাসিন্দার। গুরুতর আহত কয়েক জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শ্রীনগরের এসএমএইচএস হাসপাতালে।

নিয়ন্ত্রণরেখায় ‘জ়িরো লাইন’-এ থাকা গ্রাম কামালকোটে যাওয়ার অনুমতি পেতে কাঠখড়় পোড়াতে হল বিস্তর। ছবি বা ভিডিয়ো না তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবশেষে মিলল ছাড়পত্র। উরি থেকে কামালকোটে যাওয়ার পথে চারটি চেকপোস্টে ক্যামেরা আর মোবাইল ফোনের খোঁজে তল্লাশি চালাল সেনা। ক্যামেরা নেই আর মোবাইল বন্ধ দেখে তবে নিশ্চিন্ত হলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা অফিসারেরা। কামালকোটে পৌঁছে ফোন রেখে যেতে হল গাড়িতে। ফেরার পথে মোবাইল চালু করে দেখি ১৯টা মিসড কল। ৬ বার ফোন করেছে ছেলে-মেয়ে।

আরও পড়ুন: নেহরু-স্মরণ মোদীর, চলছে বিতর্ক-জল্পনা

পাক গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। প্রবল শীতের মধ্যে আশ্রয়হীন ১২টি পরিবার। ‘‘লাদাখে ভারত-চিন সংঘর্ষের পর থেকেই আমরা ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কারণ তখন থেকেই এখানে ভারী অস্ত্রশস্ত্র আর অনেক সেনা মোতায়েন শুরু হয়’’, গ্রামের মধ্যে দাঁড়িয়ে বলছিলেন কামালকোটের গ্রামপ্রধান সইদউদ্দিন বাজাড। ‘‘ধরুন যেখানে ভারী অস্ত্রশস্ত্র আর গোলাবারুদ মজুত রয়েছে সেখানে যদি একটা মর্টারের শেল গিয়ে পড়ে? গ্রামের কেউ বাঁচবে বলে মনে হয় না,’’ বলতে গিয়েও গলা কেঁপে গেল গ্রামপ্রধানের।

গ্রামের সরকারি স্কুলে পড়ান মহম্মদ ইকবাল গুজ্জর। বললেন, ‘‘প্রতি বার নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষের সময়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়। আমাদের কথা শোনার কেউ নেই।’’ পাশের গ্রাম বালকোটের প্রধান মুখতা খানের বক্তব্য,
‘‘গোলাবর্ষণের হাত থেকে যথাসম্ভব রক্ষা করার জন্যই কৌশলগত স্থানে সেনা শিবির তৈরি করা হয়। পাক গোলাবর্ষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি আমাদেরই হয়।’’ আর এখানেই উঠে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বাঙ্কার তৈরির সরকারি দাবি নিয়ে প্রশ্ন। মুখতা খানের দাবি, প্রতি পরিবারের জন্য বাঙ্কার তৈরি করতে জনপ্রতি ২ লক্ষ টাকা দিতে অনেক দিন ধরেই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু এখনও সেই দাবি মানার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি সরকার।

বাসিন্দাদের জন্য ‘কমিউনিটি বাঙ্কার’ তৈরি হয়েছে ঠিকই। সেগুলিতে ২৫০ জন আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু ওই বাঙ্কারগুলি লোকালয় থেকে ২৫০-৩০০ মিটার দূরে। বালকোটের বাসিন্দা আব্দুল সাত্তার খাটানার প্রশ্ন, ‘‘যখন বৃষ্টির মতো মর্টারের শেল পড়তে থাকে তখন অত দূর যাওয়া সম্ভব কি?’’ উরির সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট রিয়াজ় আহমেদের বক্তব্য, ‘‘আমরা আরও বাঙ্কার তৈরির জন্য দরপত্র প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু অতিমারির জন্য সাড়া পাওয়া গিয়েছেজ কম।’’ তাঁর আশ্বাস, আরও বাঙ্কার তৈরি করা হবে।

কামালকোট-বালকোট ছাড়ার আগে আব্দুল সামাদ খাটানা বললেন, ‘‘দেখলেন তো এখানকার অবস্থা। আমাদের গ্রামকে এমন ভাবে নিশানা করা হবে ভাবিনি।’’

ফেরার পথে এক চেকপোস্টে দেখা হল ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনার লেফটেন্যান্ট কর্নেলের সঙ্গে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘‘গত কাল আমার কমান্ডে থাকা তিন জন জওয়ান নিহত হলেন। জওয়ানদের রক্ষা করাই কঠিন হচ্ছে, গ্রামবাসীদের বাঁচাব কী করে?’’ তাঁর পাশ থেকে সেনার এক তরুণ ক্যাপ্টেনের সংযোজন, ‘‘কখন যে ফের গোলা এসে পড়বে, কেউ জানে না।’’

India Pakistan Kamalkot

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}