—ফাইল চিত্র।
যে শ্রম সংস্কারের সলতে পাকানোর চেষ্টা সতেরো বছর ধরে হয়েছে, বুধবার রাজ্যসভায় তার তিন-তিনটি বিধি পাশ হতে সময় লাগল বড়জোর দু’ঘণ্টা! লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে মেরেকেটে ঘণ্টা ছয়েক। এমন বিতর্কিত এবং নিদেনপক্ষে ৫০ কোটি শ্রমিকের ভাগ্য নির্ধারণের বিল সংসদের দুই কক্ষই বিরোধীশূন্য থাকাকালীন পাশ করিয়ে ফেলল মোদী সরকার।
৪৪টি কেন্দ্রীয় শ্রম আইনের মধ্যে ১৫টিকে বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক বলে বাতিল করেছে কেন্দ্র। বাকি ২৯টিকে তারা নিয়ে আসছে চারটি শ্রমবিধির আওতায়। এর মধ্যে লোকসভা ও রাজ্যসভায় মজুরিবিধি পাশ হয়েছে গত বছর। মঙ্গলবার বিরোধীশূন্য লোকসভা অনুমোদন দিয়েছে বাকি তিনটির (শিল্পে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কবিধি, সামাজিক সুরক্ষাবিধি এবং কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চয়তা-বিধি)। বুধবার অনুপস্থিত বিরোধীদের লিখিত আপত্তি অগ্রাহ্য করে ওই তিনটি বিধি পাশ হয়ে গেল রাজ্যসভাতেও।
অনেকের অভিযোগ, সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস পর্যন্ত যে ভাষায় এ দিন ওই সদ্য পাশ হওয়া বিধির সমালোচনা করেছে, তাতে সংসদে প্রবল প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে আঁচ করেই ‘কোনওক্রমে তড়িঘড়ি’ এই তিনটি বিধি পাশ করিয়ে নিয়েছে কেন্দ্র। তোয়াক্কা করেনি গণতান্ত্রিক সৌজন্যের। যে বিলের সঙ্গে বহু কোটি শ্রমিকের ভবিষ্যৎ জড়িত, বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে যাতে তা রাজ্যসভায় পাশ করানো না-হয়, চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে সেই অনুরোধ জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ। চিঠিতে লিখেছিলেন, বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া একতরফা ভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানো হলে, তা হবে গণতন্ত্রের উপরে কালির পোঁচ। তাতে সই ছিল তৃণমূল-সহ অন্যান্য বিরোধী দলেরও। কিন্তু রাজ্যসভায় সে কথা জানিয়েও নায়ডুর দাবি, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেই বিল নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁর যুক্তি, সংসদের এই কক্ষে কারও অনুপস্থিতি কোনও আলোচনা থমকে যাওয়ার কারণ হতে পারে না। এর আগেও বিরোধীরা না-থাকাকালীন গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে আলোচনা ও তা পাশ হওয়ার নজির ভূরি ভূরি। এক গুচ্ছ টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি, বহু প্রতীক্ষিত এই শ্রম সংস্কারে উপকৃত হবেন শ্রমিকেরা। সময়ে বেতন পাওয়া থেকে শুরু করে সকলের জন্য ন্যূনতম বেতন— নিশ্চিত হবে বহু বিষয়ই। একই সঙ্গে সহজ হবে ব্যবসা করার পথও। শ্রমিক-মালিক বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য যে ধাঁচে সালিশি আদালত (ট্রাইবুনাল) তৈরির কথা বলা হয়েছে, তা-ও আগামী দিনে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে অনেকের ধারণা। গতকাল লোকসভা আর এ দিন রাজ্যসভাতেও বার বার এই বিলকে ঐতিহাসিক সংস্কারের তকমা দিয়েছেন বিজেপি সাংসদেরা। বিরোধীদের প্রশ্ন, এত ‘শ্রমিকদরদি’ বিল বিরোধীদের এড়িয়ে এমন তাড়াহুড়ো করে পাশ করানোর প্রয়োজন হল কেন? কাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এত তাড়া?
আরও পড়ুন: কৃষি বিল ফেরাতে রাষ্ট্রপতিকে ১৭টি বিরোধী দলের চিঠি, ধর্না-ঐক্যে ফাঁক
আরও পড়ুন: নতুন কৃষি বিল: কী কী হচ্ছে, কী কী বদলাচ্ছে, কী কী বলছে দু’পক্ষ
আরও পড়ুন: অতিমারির অধিবেশন শেষ অচেনা সংসদে
বিএমএসের অভিযোগ, এই বিধির বহু অংশ শ্রমিকদের স্বার্থের পরিপন্থী। এতে একতরফা ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে মালিক এবং আমলাদের হাতে। এ দিন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে বামপন্থী, কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের ট্রেড ইউনিয়নগুলি। অভিযোগ, শিল্পপতিদের স্বার্থেই ছাঁটাইয়ের রাস্তা এমন অবাধ করেছে কেন্দ্র। কার্যত শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছে পাকা চাকরির কফিনে। এমনকি এ ধরনের বহু প্রশ্ন রাজ্যসভায় তুলেছেন শরিক দলের সাংসদেরাও। যে বিলের ছত্রে ছত্রে এত প্রশ্ন, তা কী করে সংসদের দুই কক্ষেই বিরোধীদের বক্তব্য না-শুনে পাশ করানো হল, সেই প্রশ্ন তাই সরকারকে তাড়া করছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy