ঠাণের ওয়াঙ্গানির কাছে আটকে পড়া মুম্বই-কোলাপুর মহালক্ষ্মী এক্সপ্রেস। চলছে বায়ুসেনার উদ্ধার অভিযান (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই ও বায়ুসেনা
রেললাইন দেখা যাচ্ছে না। প্রবল বৃষ্টিতে চলে গিয়েছে জলের তলায়।
মহারাষ্ট্রের ঠাণে জেলার ওয়াঙ্গানির কাছে সেই কোমর-সমান জলে শুক্রবার রাতে আটকে পড়েছিল মুম্বই-কোলাপুর মহালক্ষ্মী এক্সপ্রেস। যাত্রীদের সঙ্গী তখন শুধুই আতঙ্ক আর দুর্ভোগ। প্রায় ১৭ ঘণ্টা আটকে থাকার পরে শনিবার জলবন্দি ওই ট্রেন থেকে উদ্ধার করা হল ১০৫০ জন যাত্রীকে। তাঁদের মধ্যে ন’জন সন্তানসম্ভবা। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ), সেনা, নৌসেনা, বায়ুসেনা, রেল এবং পুলিশের সাহায্যে এই উদ্ধারকাজ সম্ভব হওয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস।
প্রবল বৃষ্টিতে বেড়েছে উলহাস নদীর জলস্তর। সেই জল উঠে এসেছে রেললাইনে। সেই কারণে শুক্রবার রাতে বদলাপুর এবং ওয়াঙ্গানির মাঝখানে একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে মহালক্ষ্মী এক্সপ্রেস। জায়গাটি লোকালয় থেকে বেশ খানিকটা দূরে। রাতে বিশেষ কিছু নজরে আসছিল না। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। অনেকেই নিজেদের দুর্ভোগের ভিডিয়ো মোবাইলে তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সাহায্যের আবেদন জানান। যাত্রীরা জানিয়েছেন, পানীয় জল এবং খাবার ছাড়াই বহু ক্ষণ তাঁদের ট্রেনের মধ্যে বসে থাকতে হয়েছে। তাঁরা ট্রেন থেকে নামতেও পারছিলেন না। কারণ ট্রেনের বাইরে কোমর সমান জল। টুইট করে যাত্রীদের ট্রেন থেকে নামতে বারণ করে রেল। যাত্রীদের তারা বলে, ট্রেন থেকে নীচে নামবেন না। ট্রেনই সব থেকে নিরাপদ জায়গা। ট্রেনের মধ্যে থেকেই সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করুন।
উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। শনিবার।
যাত্রীদের আটকে থাকার খবর পেয়ে প্রথম ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ এবং রেলপুলিশ। আটকে পড়া যাত্রীদের তাঁরা বিস্কুট এবং জল দেন। এর পরে উদ্ধার কাজে নামে এনডিআরএফ। উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হয় বায়ুসেনার দু’টি বিমান। দিনের আলো ফুটতে দেখা যায়, চার দিকে শুধু জল আর জল। সুতোর মতো জেগে আছে ট্রেনটি। হাত লাগায় নৌসেনা, সেনা, রেল, দমকল এবং স্থানীয় প্রশাসন। এনডিআরএফের আটটি নৌকোর সাহায্যে ট্রেনের কাছে গিয়ে নামিয়ে আনা হয় যাত্রীদের। প্রায় ১৭ ঘণ্টা আটকে থাকার পরে শনিবার বিকেল তিনটে নাগাদ উদ্ধার করা সম্ভব হয় ট্রেনের সব যাত্রীকে। সেন্ট্রাল রেলওয়ের মুখপাত্র সুনীল উদাসি জানিয়েছেন, এক হাজার ৫০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠানো হয়েছে। পাঠানো হয়েছে ৩৭ জন চিকিৎসক ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। এবং অ্যাম্বুল্যান্সও। যাত্রীদের জন্য ১৯ কামরার একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কল্যাণ থেকে কোলাপুর যাবে ট্রেনটি। উদ্ধার হওয়া ন’জন সন্তানসম্ভবাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদ্ধারকাজের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ওই ন’জন সন্তানসম্ভবা এবং এক মাসের একটি মেয়ে ভাল আছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টির উপরে নজর রেখে গিয়েছে কেন্দ্র। টুইট করে উদ্ধারকারী দলের প্রশংসা করেছেন তিনি। গোটা বিষয়টি নিয়ে ফডণবীসের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
প্রবল বৃষ্টিতে থেকে বেহাল দশা মুম্বই এবং মুম্বই শহরতলির। বেশ কিছু জায়গা জলের তলায়। বিপর্যস্ত সড়ক এবং বিমান পরিষেবা। এ দিন সকালে ১১টি উড়ান বাতিল করা হয়েছে। বদল করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিমানের পথ। কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। তাদের পূর্বাভাস, আরও বৃষ্টি হবে মুম্বই এবং ঠাণে এবং রায়গড় জেলায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy