প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার ভবিষ্যৎ কৌশল আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফাররেন্সে বলার সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না বাংলাকে।
রাজ্যগুলিকে দু’দফায় ভাগ করে আজ, মঙ্গল ও কাল, বুধবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলা রয়েছে কালকের বৈঠকের সূচিতে। কিন্তু সে দিন বক্তা হিসেবে যে সব রাজ্যের নাম সোমবার নবান্নের হাতে এসেছে, তাতে বাংলা নেই। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী নিজে বৈঠকে থাকবেন, তার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে প্রোটোকল অনুযায়ী, রাজ্যের কোনও আধিকারিক প্রতিনিধি হিসেবে থাকতে পারেন। প্রশ্ন উঠেছে, করোনা পরিস্থিতি যথেষ্ট গুরুতর হওয়া সত্ত্বেও বাংলাকে বলার সুযোগ দেওয়া হবে না কেন? বিষয়টিতে রাজনৈতিক বিতর্কের আঁচও লেগেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, এই নিয়ে ষষ্ঠ বার প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সব মুখ্যমন্ত্রীই কোনও না কোনও বার বলার সুযোগ পেয়েছেন। যাঁরা সুযোগ পান না, তাঁদের সকলকেই প্রধানমন্ত্রী চিঠি লিখে মতামত জানানোর অনুরোধ করেন। চতুর্থ দফার লকডাউন শেষের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। কেন্দ্রীয় সূত্রের আরও বক্তব্য, বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে যে রাজ্যগুলিকে বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এ বার, তার মধ্যে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু বা কর্নাটকে করোনা সংক্রমণ এখনও ঊর্ধ্বমুখী। আবার ওই রাজ্যগুলি থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা সব চেয়ে বেশি সংখ্যায় ফিরেছেন। পাশাপাশি, বিহার, উত্তরপ্রদেশ বেশি সংখ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়েছে। তাই রোগ ও অর্থনীতির প্রশ্নেই রাজ্যগুলিকে বাছা হয়েছে। এর মধ্যে অন্য কোনও ‘সমীকরণ’ খোঁজা উচিত নয়।
আরও খবর: লকডাউন: যেখানে যেমন অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নিদান?
কিন্তু প্রশ্ন বা বিতর্ক তাতে থামছে না। প্রশ্ন থাকছে এ বারের বৈঠকে বিরোধী শিবির থেকে অনেক কম মুখ্যমন্ত্রীকে বলার সুযোগ দেওয়া ঘিরে। প্রথম দিনে একমাত্র পঞ্জাব ছাড়া বাকি তিন রাজ্যেই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয় দিনে শুধু মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী শিবিরের। তা হলে কি বিরোধী শিবিরের ‘অপ্রিয় প্রশ্নে’র মুখোমুখি হতে চাইছেন না মোদী, প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিযায়ীদের ট্রেন ও কেন্দ্রীয় দল পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তাঁরা কেন্দ্রের ‘কেনা গোলাম’ নন! কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি ‘করোনা এক্সপ্রেস’ নিয়ে বিতর্ক শুরু করিয়ে দেওয়ার পরে পাছে ফের অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ মোদীর বৈঠকে এসে পড়ে, তা-ই কি বাংলা বক্তা নয়? প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক শিবিরে।
আরও খবর: দ্রুত পরীক্ষা, সায় র্যাপিড অ্যান্টিজেনে
রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়েই এই প্রশ্নে সরব হয়েছে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক! বাংলায় করোনা মোকাবিলা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। সেই জন্যও তো বাংলার কথা শোনার প্রয়োজন ছিল কেন্দ্রের। তা হলে কি ধরে নিতে হবে, বাংলায় কী হচ্ছে, তা নিয়ে কেন্দ্র মাথাই ঘামাচ্ছে না? নাকি তারা নিজেদের মত ছাড়া অন্য কিছু শুনতেই চায় না?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, ‘‘করোনা মোকাবিলায় রাজ্যগুলো প্রথম সারিতে থেকে লড়াই করলেও তাদের কোনও দাবি-দাওয়া মানেনি কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বা বিরোধী দলগুলির সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক হলেও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। এখন কোন কোন রাজ্য কথা বলবে, সেটাও তো আলোচনা করে ঠিক হচ্ছে না। গোটা প্রক্রিয়াটাই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে!’’
রাজ্যের তরফে সরকারি ভাবে অবশ্য কেউ এ দিন মুখ খোলেননি। তবে নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘বাংলায় করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রী যে দক্ষ, তা কেন্দ্রও বুঝে ফেলেছে। তাই হয়তো তারা বাংলা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy