পোখরানে এমন মন্তব্য করেন রাজনাথ। —ফাইল চিত্র।
এ বার কি পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ নীতিতেও বদল ঘটাতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার? শুক্রবার এমন জল্পনাই উস্কে দিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখা দিলে, শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে ভারত কখনও প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না বলেই এখনও পর্যন্ত স্থির রয়েছে। কিন্তু আগামী দিনে এই নীতি বদল করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাজনাথ। তাঁর কথায়, সব কিছুই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।
গত বছরের ১৬ অগস্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী মারা গিয়েছিলেন। সেই স্মরণে রাজস্থানের পোখরানে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে শুক্রবার বক্তৃতা করছিলেন রাজনাথ। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘ভারতকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন অটলজি। তবে, পরমাণু অস্ত্রের প্রথম ব্যবহার আমরা করব না, এই নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত সেই নীতি মেনেই চলছে ভারত। তবে ভবিষ্যতে কী হবে, তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।’’
১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রথম বার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করে ভারত। তার দু’দশক পরে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে এই পোখরানেই দ্বিতীয় বার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করে ভারত। জবাবে দু’সপ্তাহ পরে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করে দেখায় পাকিস্তানও। তাতে নড়েচড়ে বসে আন্তর্জাতিক মহল। ফ্রান্স-সহ বেশ কিছু দেশ ভারতের পাশে দাঁড়ালেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ অনেকেই ভারতের তীব্র সমালোচনা করে। ভারত-পাকিস্তান, দু’দেশের উপরেই পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা বসায় মার্কিন সরকার। যদিও ছ’মাস পরেই তা উঠে যায়।
#WATCH: Defence Minister Rajnath Singh says in Pokhran, "Till today, our nuclear policy is 'No First Use'. What happens in the future depends on the circumstances." pic.twitter.com/fXKsesHA6A
— ANI (@ANI) August 16, 2019
আরও পড়ুন: মনে হচ্ছে আমরা যেন খাঁচাবন্দি পশু, খোলা চিঠিতে অমিত শাহকে তোপ মেহবুবা-কন্যার
তবে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও, পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে ভারত-পাক বিরোধ চরমে ওঠে। তা নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয় দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে। এর পর পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি স্থাপনে উদ্যোগী হন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। ১৯৯৮-৯৯ পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে একাধিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এবং সেই সময়ই পরমাণু অস্ত্র ‘প্রথম ব্যবহার নয়’ নীতি গ্রহণ করে ভারত। সেই নীতিতেই পরিবর্তন আনা হবে কি? জল্পনাটা উস্কে দিয়েছেন রাজনাথ।
এর আগে, প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরও এই নীতির সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘দায়িত্বশীল পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র আমরা। কোনও পরিস্থিতিতেই ক্ষমতার অপব্যবহার করব না। কিন্তু তাই বলে খামোকা হাত বেঁধে রাখবই বা কেন?’’ সম্প্রতি একই সুর ধরা পড়ে ভারতের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার ও দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কম্যান্ড-এর প্রাক্তন কম্যান্ডার ইন চিফ বিএস নাগপালও। এই নীতি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আজ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক
সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সে সবের উল্লেখ ছিল তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারেও। যদিও পরমাণু অস্ত্র নীতিতে পরিবর্তনের কথা ২০১৪-র নির্বাচনী ইস্তেহারেই দিয়ে রেখেছিল বিজেপি। এ বার কি তা হলে সেই পথেই এগোচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা? রাজনাথের মন্তব্য ঘিরে এখন এই প্রশ্নই তুলছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy