—ফাইল চিত্র।
নির্ভয়া-কাণ্ডে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত অন্যতম অপরাধী মুকেশ সিংহর উপরে তিহাড় জেলে ‘যৌন নির্যাতন ও মারধর’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তার আইনজীবী। আজ সুপ্রিম কোর্টে মুকেশের হয়ে আইনজীবী অঞ্জনা প্রকাশের অভিযোগ, মুকেশকে আর এক অপরাধী অক্ষয়কুমার সিংহের সঙ্গে যৌনাচারে বাধ্য করা হয়।
নির্ভয়া-কাণ্ডের চার অপরাধীর ১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় ফাঁসির পরোয়ানা জারি হয়েছে। চার জনের মধ্যে মাত্র এক জন, মুকেশ সিংহ, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিল। রাষ্ট্রপতি তা খারিজ করে দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্তের বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনার দাবি তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল মুকেশ। আজ তার আইনজীবীর অভিযোগ, মুকেশ তার উপরে জেলে অত্যাচারের কথা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সমস্ত তথ্য পেশ করেনি। তাই রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত ‘খামখেয়ালি ও বেআইনি’ বলে দাবি করেছেন আইনজীবী।
মুকেশের আর্জি খারিজ করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, গণধর্ষণ এবং কারও শরীরে লোহার রড ঢুকিয়ে অঙ্গ বার করে নিয়ে আসার মতো জঘন্য অপরাধের পরে জেলে অত্যাচার হয়েছে বলে কারও প্রাণভিক্ষা মঞ্জুর হতে পারে না। মেহতার দাবি, রাষ্ট্রপতির কাছে সমস্ত নথিই পেশ করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতের বিচার করার ক্ষমতাও খুব সীমিত বলে মন্তব্য করেন সলিসিটর জেনারেল।
আরও পড়ুন: সিএএ বিরোধী নাটক করায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তোলা হল কর্নাটকের স্কুলের বিরুদ্ধে
মুকেশের আইনজীবীর যুক্তি, যখন কোনও সিদ্ধান্তে কারও জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে, তখন প্রতিটি ধাপে সব কিছু খতিয়ে দেখতে হবে। মেহতা পাল্টা বলেন, ‘‘মানুষের জীবনের মূল্য ও মানুষের জীবনকে কী ভাবে মূল্য দিতে হবে, তা নিয়ে এখানে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বিচিত্র বিষয় হল মুকেশ সিংহ এই প্রশ্ন তুলছে!’’ শুনানির সময়ে বিচারপতি আর ভানুমতীও প্রশ্ন তুলেছেন, রাষ্ট্রপতি সব দিক খতিয়ে দেখেননি তা কী করে বলা যায়? মেহতাও যুক্তি দেন, রাষ্ট্রপতির সমস্ত নথি পড়ার দরকারও নেই। কারণ তিনি আদালতের রায় পর্যালোচনা করতে বসেননি। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ভানুমতীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই বিষয়ে রায় সংরক্ষিত রেখেছে। আজ, বুধবার আদালত তার রায় জানাবে।
মুকেশের প্রাণভিক্ষার আবেদনের পরে রাষ্ট্রপতির তা খারিজ করতে চার দিন সময় লেগেছিল। এত কম সময়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার কোনও নজির নেই। এত দিন সব থেকে কম সময়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হওয়ার ‘রেকর্ড’ ছিল রাজস্থানের রাম চন্দ্রের ক্ষেত্রে। সেখানেও ৪২ দিন লেগেছিল। মুম্বইয়ের ২৬/১১ হামলার ষড়যন্ত্রী আজমল কসাবের ক্ষেত্রেও প্রাণভিক্ষার আর্জি রাষ্ট্রপতির খারিজ করতে ৫৪ দিন লেগেছিল। আজ মেহতা বলেন, সুপ্রিম কোর্টই বলেছে, ফাঁসির আদেশ হওয়ার পরে তা পিছিয়ে যাওয়াটা নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের জন্য অমানবিক। সে কারণেই প্রশাসন এ ক্ষেত্রে কোনও দেরি করেনি। রাষ্ট্রপতিও এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কিন্তু এর পরেও ১ ফেব্রুয়ারি ফাঁসি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ চার অপরাধীর মধ্যে বিনয় শর্মার প্রাণভিক্ষার একটি আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিল। বিনয় আবার রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে জানিয়েছে, ওই আর্জি তার পাঠানো নয়। দু’টিই এখনও রাষ্ট্রপতির টেবিলে। অন্য দুই অপরাধী পবন গুপ্ত ও অক্ষয় এখনও সুপ্রিম কোর্টের ফাঁসির আদেশ সংশোধনের আর্জি বা কিউরেটিভ পিটিশনই করেনি। আইনজীবী সূত্রের ইঙ্গিত, এক জনের তরফে বুধবারই কিউরেটিভ পিটিশন জমা পড়তে পারে। তা খারিজ হলেও প্রাণভিক্ষার আবেদনের জন্য আরও সাত দিন সময় মিলবে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ ও ফাঁসির মধ্যে ১৪ দিনের ব্যবধান থাকতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy