Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
National News

পরিবারের পাশে, দোষীদের পাশে কিন্তু নয় মহল্লা

ফাঁসি আটকাতে সাত বছর ধরে লড়ে গিয়েছে মুকেশ, বিনয় আর পবনের পরিবার।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৩:৩৯
Share: Save:

সমবেদনা যতটুকু, তার তুলনায় বহু গুণ চড়া কৌতূহলের পারদ। পরিবার এবং আত্মীয়রা ছাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যেও ‘স্বস্তি’ পাওয়া মুখের সংখ্যাই বেশি।

তবু দক্ষিণ দিল্লির আর কে পুরমের রবিদাস ক্যাম্পের কানাগলি গত কাল সন্ধে থেকে থমথমে। সকাল থেকে মৃতদেহের অপেক্ষায় উদ্‌গ্রীব! গলির মুখের ছোট্ট দোকানের জটলা জানাল, ‘‘যে অপরাধ এরা করেছে, তার ক্ষমা নেই। তবু যাঁদের বাড়ির ছেলে, কষ্ট তো তাঁদের হবেই। ওঁদের জন্যই খারাপ লাগছে আমাদের।’’

আজ ভোরে যে চার জনের ফাঁসি হল, তাদের তিন জনই এই বসতির বাসিন্দা। মুকেশ সিংহ, বিনয় শর্মা এবং পবন গুপ্ত। অক্ষয় ঠাকুরের বাড়ি সঙ্গম বিহারে। মুকেশের দাদা রাম সিংহের বাড়িও ছিল এই রবিদাস ক্যাম্পে। জেলের মধ্যে যার মৃতদেহ মিলেছিল ঝুলন্ত অবস্থায়।

আরও পড়ুন: আস্থাভোটের আগেই পদত্যাগ কমল নাথের

ফাঁসি আটকাতে সাত বছর ধরে লড়ে গিয়েছে মুকেশ, বিনয় আর পবনের পরিবার। সেই যুদ্ধ ব্যর্থ করে বিনয় আর পবনের মৃতদেহ দুপুর আড়াইটা নাগাদ মহল্লায় এল। তার উপরে আছড়ে পড়লেন বাড়ির লোক আর আত্মীয়-পরিজনরা। এলাকার প্রধান বিহারীলাল শ্রীবাসের বাড়ির সামনে সকাল সাতটা থেকে সাদা চাঁদোয়ার তলায় বসে ছিলেন তাঁরা। ডিউটিতে থাকা এক পুলিশ কর্তা জানালেন, ‘‘মুকেশের মৃতদেহ সরাসরি রাজস্থানের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন বাড়ির লোক। তাই এখানে এসেছে বাকি দু’টি দেহই।’’

ভিড় সামলানো থেকে শুরু করে হঠাৎ জ্ঞান হারানো মধ্যবয়সিনীকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা— সব দেখভাল করছিলেন বিহারীলালই। দু’জনের শেষযাত্রাতেও সঙ্গী হলেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন করতেই উত্তর এল, ‘‘যারা একটি মেয়েকে অকথ্য অত্যাচার করেছে, ধর্ষণ করে খুন করেছে, তাদের ক্ষমা নেই। নেহাত প্রতিবেশী বলে ওদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। নইলে আজ মিষ্টি বিলি করতাম।’’ এলাকার অনেকেই মনে করেন ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের ওই এক অভিশপ্ত রাত চুনকালি লেপে দিয়েছে মহল্লার গালে। এত দিনেও যা পুরো মোছেনি। তবু দেহ আসার পরে চোখ ভিজেছে বহু পড়শিরই। সোম দত্ত বললেন, ‘‘খারাপ লাগছে বাড়ির লোক আর আত্মীয়স্বজনদের জন্য। সহ্য করা সত্যিই কঠিন।’’ এক প্রৌঢ় বললেন, ‘‘১৬ ডিসেম্বর রাতে যখন বাসে চড়ে হই-হল্লা করতে-করতে রওনা দিয়েছিল এরা, কেউ ভেবেছিল যে, এমন ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে?’’ কিছু দূরে দাঁড়ানো অধীশ যোগ করলেন, ‘‘আর এ সব ভেবে লাভ কী? যারা সমাজের শত্রু ছিল, তারা তো এখন মৃত। মৃতদেহ আর কী-ই বা করতে পারে?’’

সকাল থেকে পাশাপাশি তিনটি ঠেলাগাড়ি লাগিয়ে গলির মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন আসামিদের পরিবার আর পড়শিরা। পরিবারের ক্ষোভ, ‘ঘরের ছেলের’ মৃত্যুর জন্য দায়ী সংবাদমাধ্যমও। এত দিন ধরে নাগাড়ে ‘দ্রুত ফাঁসির দাবিতে’ প্রচার করে গিয়েছে যারা। যে কারণে মৃতদেহ আসার পরে ছবি তোলার চেষ্টায় থাকা জনা কয়েক সাংবাদিকের উপরে চড়াও হলেন কয়েক জন। পরিস্থিতি বিগড়োতে পারে আঁচ করে তৈরি ছিল পুলিশও। পদস্থ কর্তারা এবং মহিলা পুলিশ ছাড়াও মোতায়েন ছিল তিন বাস ভর্তি আধাসেনা। প্রথমে দেহ নিতে অস্বীকার এবং তার পরে মাঝরাস্তায় এমন ঝামেলার জন্য ক্ষুব্ধ তাঁরাও। শেষ পর্যন্ত আধ ঘণ্টা মৃতদেহ গলিতে রেখে শ্মশানের দিকে রওনা করিয়ে দিয়ে তবে তাঁদের স্বস্তি।

বিহারী লাল জানালেন, ‘‘মুকেশরা পাঁচ ভাই ছিলেন। আর মা। তিন ভাই রইলেন। পবনের পরিবারে রইলেন এক ভাই-এক বোন। দুই ভাই-দুই বোনের পরিবার ছিল বিনয়েরও। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সামনেই বিয়ে অন্য ভাইয়ের।’’ কবে? এক হাত জিভ কাটলেন বিহারী লাল। চার পাশে জড়ো হওয়া বাকিরা বললেন, ‘‘এমন বদনাম হয়েছে, যে এখানকার ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হওয়া শক্ত। স্কুলে গিয়ে লজ্জায় পড়তে হয় বাচ্চাদের। ক্যামেরা দেখলে মুখ ঢাকেন স্থানীয় মহিলারা। এখনও!’’

ফাঁসির পরে এই ছবি বদলাবে? রাগত স্বরে উত্তর এল, ‘‘এরা অপরাধী। সাজা পেয়েছে। কিন্তু বাকিরা কী দোষ করেছিল?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Nirbhaya Case Nirbhaya Gang Rape Crime Crime Cases Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy