বিতর্কের মধ্যেই দুই চুক্তির তুল্যমূল্য বিচার করে তৈরি হয়েছে সিএজি রাজীব মেহঋষির রিপোর্ট।
ইউপিএ জমানার চেয়ে মোদী জমানার রাফাল চুক্তি অনেক সস্তা! যুদ্ধবিমান পিছু দাম পড়ছে ২.৮ শতাংশ কম। এমনই রিপোর্ট দিলেন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)।কিন্তু রিপোর্টে দামের বিষয়টি উল্লেখই করা হয়নি। বিরোধীরা আগেই ‘পক্ষপাতমূলক’ বলে অভিযোগ তুলে সিএজির রিপোর্ট খারিজ করেছিল। প্রশ্ন তুলেছিল, সিএজি-র স্বার্থের সঙ্ঘাত নিয়েও। কিন্তু আজ রিপোর্ট পেশের পর পাল্টা আক্রমণ করেছে শাসক শিবির। ‘মহাগঠন্ধন’কে কটাক্ষ করেছেন ‘মহাঝুটবন্ধন’ বলে।
লোকসভা ভোটের আগে বর্তমান এনডিএ জমানায় এটাই শেষ সংসদের অধিবেশন। সেই অধিবেশনেরও শেষ দিন আজ বুধবার সংসদে পেশ হল সিএজির রিপোর্ট। ইউপিএ জমানায় ১২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেড বা হ্যালের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি বাতিল করে ফ্রান্সের সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে ৩৬টি রাফাল কেনার চুক্তি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকার। এই চুক্তিতেই দুর্নীতির অভিযোগে সরব কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা।
সেই বিতর্কের মধ্যেই দুই চুক্তির তুল্যমূল্য বিচার করে তৈরি হয়েছে সিএজি রাজীব মেহঋষির রিপোর্ট। তাতেই বলা হয়েছে ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে অনেক কম দামে রাফাল কেনা সম্ভব হচ্ছে। তাতে প্রতিটি রাফালে ইউপিএ জমানার তুলনায় ২.৮ শতাংশ দাম কম পড়ছে। ভারত সর্বমোট ১৭.০৮ শতাংশ টাকা সাশ্রয় করতে পেরেছে।
আরও পড়ুন: আজ দিল্লিতে বিরোধীদের ধর্নায় মমতা-সহ তিন মুখ্যমন্ত্রী, রাহুলকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে
কেন সস্তা? মেহঋষির যুক্তি, ভারত নিজের দেশের সামরিক চাহিদা, বর্তমান শক্তি, পরিবেশ ইত্যাদি নানা বিষয় মাথায় রেখে রাফাল যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তিতে ১৩টি নির্দিষ্ট পরিবর্তন বা আপগ্রেডেশন দাবি করেছিল। সিএজির রিপোর্টে দাবি, এই আপগ্রেডেশনের খরচ বর্তমান চুক্তিতে অনেক সস্তা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আগেই জানিয়েছিল, রিপোর্টে দামের উল্লেখ থাকবে না। কারণ তা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। সেই মতোই রিপোর্টে দামের কথা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তবে দামের অংশগুলি ‘এডিট’ করে পেশ করা হয়েছে। যা নিয়ে বিরোধীরা ফের প্রশ্ন তুলতে পারেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
আরও পড়ুন: ইউপিএ জমানার চেয়ে অনেক বেশি দামে রাফাল কিনেছে মোদী সরকার: রিপোর্ট
এনডিএ জমানার রাফাল চুক্তি যখন হয়, তখন রাজীব মেহঋষি ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থসচিব। কংগ্রেস বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, ২০১৬ সালে ওই চুক্তির সময় রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য এনে মোদী সরকারকে আক্রমণ করে চলেছেন রাহুল গাঁধী। সিএজি রিপোর্ট নিয়ে দলের বক্তব্য, মেহঋষির জ্ঞাতসারেই দুর্নীতি হয়েছিল। তিনিও চুক্তির ‘অংশীদার’ ছিলেন। তাই নিজেকে বাঁচাতেই তিনি রাফাল নিয়ে দুর্নীতির ইঙ্গিতও পাওয়া যায় এমন রিপোর্ট তিনি দেবেন না। রাফাল চুক্তির অসঙ্গতি তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতিতেই হয়েছিল। আর এদিন রিপোর্ট পেশের পর লোকসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘এই রিপোর্টের কোনও মূল্য নেই।’’ মায়াবতীর মন্তব্য, ‘‘রাফাল চুক্তি না সম্পূর্ণ, না সঠিক।’’
বিরোধীদের মোকাবিলায় এত দিন শাসক শিবিরের অস্ত্র ছিল সুপ্রিম কোর্টের রায়। এ বার সিএজি রিপোর্টকেও হাতিয়ার করলেন বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি টুইটারে লিখেছেন, ‘মহাঝুটবন্ধনের মিথ্যে ফাঁস হয়ে গিয়েছে।’ রাহুল গাঁধীকে নিশানা করে তাঁর কটাক্ষ, ‘সুপ্রিম কোর্ট ভুল, সিএজি রিপোর্ট ভুল, আর ওই একটা পরিবারই সত্যি, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
যদিও এ দিনই ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্র একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, রাফাল বিমান কেনার ক্ষেত্রে বেশি দামেই চুক্তি করা হয়েছিল।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy