Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমানের ধাঁচেই তৈরি হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর বিমান, বিপুল খরচে উঠছে প্রশ্ন

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘রাজকীয়’ বিমানে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে পাড়ি দিতে হলেও তেল ভরতে হয় না চট করে। মাঝ আকাশেই দিব্যি সেরে ফেলা যায় যে কোনও মিটিং।

নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৫৯
Share: Save:

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমান যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে মোড়া, এ বার সুরক্ষার সেই বলয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিমানেও। শোনা যাচ্ছে, কার্যত প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ছোট সংস্করণ উঠে আসবে সেখানে। মাঝ আকাশ থেকে দুনিয়ার যে কোনও প্রান্তে যোগাযোগের বন্দোবস্তেও নাকি তা রীতিমতো পাল্লা দিতে পারবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিমানের সঙ্গে। যে দেশ নিয়মিত সন্ত্রাসবাদী হানার শিকার, যে দেশে আততায়ীর হাতে প্রাণ গিয়েছে এক ক্ষমতাসীন ও এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর, সেখানে আকাশেও এই বাড়তি নিরাপত্তা হয়তো জরুরি। তবু অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এখনই এই বিপুল খরচের সত্যিই প্রয়োজন ছিল কি?

শুধুমাত্র ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য একজোড়া বিশেষ বিমান আপাতত তৈরি হচ্ছে মার্কিন বিমান নির্মাতা সংস্থা বোয়িংয়ের ডালাসের কারখানায়। তা দিল্লির হাতে আসার কথা ২০২০ সালের জুন-জুলাই নাগাদ। ওই বোয়িং-৭৭৭ বিমানে থাকবে এসপিএস এবং এলএআইআরসিএম প্রযুক্তি। যা আকাশে আচমকা ক্ষেপণাস্ত্র হানা থেকে সুরক্ষা দেবে এই ‘ভিভিআইপি’ বিমানকে। এই প্রযুক্তিতে রেডার জ্যাম হয়ে যাওয়ায় চট করে বিমানের টিকি খুঁজে পাবে না মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও। উত্তাপ মেপে আছড়ে পড়তে চাওয়া ক্ষেপণাস্ত্রকে বোকা বানাতেও নাকি এই প্রযুক্তি পটু।

ভারতই প্রথম দেশ, যাকে এই প্রযুক্তি বেচতে রাজি হয়েছে আমেরিকা। মার্কিন কংগ্রেসকে দেওয়া সে দেশের প্রতিরক্ষা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ওই প্রযুক্তি হস্তান্তরে চুক্তি হয়েছে ১৯ কোটি ডলারের (প্রায় ১,৩৩০ কোটি টাকা)। বিশেষ বিমানগুলি ছাড়া তা অবশ্য কাজে লাগবে প্রতিরক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রেও।

এত দিন বিদেশে দূরপাল্লার সফরে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বোয়িং-৭৪৭-৪০০ বিমানে পাড়ি দিতেন এই তিন ভিভিআইপি। এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলে এই বিমানের নামকরণও ছিল ‘এয়ার ইন্ডিয়া-ওয়ান’ বলে। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার। কিন্তু

শোনা যাচ্ছে, নতুন বিমানের ককপিটে থাকবেন বিমানবাহিনীর বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত পাইলটেরা। আর বিমানবাহিনী বা এয়ার ফোর্স পুরো দায়িত্ব নিলে, এই বিমানের নামও (কল সাইন) বদলে যেতে পারে এয়ার ফোর্স ওয়ানে। ঠিক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘রাজকীয়’ বিমানে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে পাড়ি দিতে হলেও তেল ভরতে হয় না চট করে। মাঝ আকাশেই দিব্যি সেরে ফেলা যায় যে কোনও মিটিং। তা-ও দুনিয়ার যে কোনও শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে। কিন্তু এই বিপুল সুবিধার খরচও নেহাত মন্দ নয়। তেল থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রতি ঘণ্টায় এই বিমানের ওড়ার গড় খরচ ২ লক্ষ ডলার। মানে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা!

আমেরিকা এখন দু’টি বোয়িং-৭৪৭-২০০বি বিমানকে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ হিসেবে ব্যবহার করে। ভারতের নতুন দু’টি ভিভিআইপি বিমানের সুরক্ষা-ব্যবস্থা সেগুলির মতোই হবে বলে সরকারি সূত্রের বক্তব্য। যদিও এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্যও তৈরি হচ্ছে দু’টি নতুন বিমান। সে দেশের প্রতিরক্ষা দফতরের প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, এই দু’টি বিমানের শুধু তৈরির খরচ গিয়ে ঠেকতে পারে ৫২০ কোটি ডলারে। অর্থাৎ এক-একটি ২৬০ কোটি ডলার (প্রায় ১৮,২০০ কোটি টাকা)।

ভারতের নতুন দু’টি ‘ভিভিআইপি’ বিমানের নির্মাণ ও ওড়ার খরচ কেমন হতে পারে, তা কিন্তু এখনও অজানা। রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর জীবনের সামান্যতম ঝুঁকি অবশ্যই বরদাস্ত করার মতো নয়। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমানের বিপুল খরচ দেখে অনেকের প্রশ্ন, ভারতের নতুন বিমানে ভিভিআইপি-সফরের খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে না তো? বিশেষত যেখানে কিছু দিন আগেও তথ্যের অধিকার আইনে করা প্রশ্নে দেখা গিয়েছিল, দেনার দায়ে ধুঁকতে থাকা এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে কেন্দ্রের বকেয়ার অঙ্ক ১,১৪৬
কোটি টাকা।

‘ট্রাম্পের ঘরে যে ধন আছে’, এ বার তা থাকবে দিল্লির দরবারেও। কিন্তু কত দামে, প্রশ্ন সেখানেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Boeing 777 Donald Trump Air Force One
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy