ছবি পিটিআই।
নিছক ‘খেজুরে ঝাঁটার আলাপ’। কিন্তু তাকে ঘিরেও দিনভর সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া!
মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের ছগনলাল বর্মা। ঘরে বসেই তৈরি করেন খেজুর পাতার ঝাঁটা। সঙ্গী স্ত্রী। ঠেলাগাড়িতে তা ফেরি করেই দিন গুজরান। বুধবার নেট-প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে ছগন জানালেন, লকডাউনে ব্যবসা শিকেয় উঠেছিল। কিন্তু ফেরিওয়ালাদের জন্য ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সহজ ব্যাঙ্কঋণের যে প্রকল্প কেন্দ্র ঘোষণা করেছে, তার জোরেই ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন তিনি। বস্তুত মধ্যপ্রদেশে ওই প্রকল্পের সুবিধা কে, কেমন এবং কত জন পাচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখতেই এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পের কার্যকারিতা শুনে নরেন্দ্র মোদী খুবই খুশি। তত ক্ষণে তিনি ব্যবসায়িক উপদেষ্টাও!
ছগনের উদ্দেশে তাঁর একের পর এক প্রশ্ন, “দিনে কতগুলি ঝাঁটা তৈরি করেন? কী কী কাঁচামাল জোগাড় করতে হয়? দাম মেটাতে হয় কখন? এক-একটি ঝাঁটা তৈরির গড় খরচ কত?” এবং সব শেষে, “যে লাঠির (পাইপ বা পাইপিং) উপরে বেঁধে ঝাঁটা তৈরি হয়, ক্রেতাদের তা ফেরত দিতে বলেছেন কখনও? তাঁরা পুরনো ঝাঁটা ফেরত দিলে, যদি চার-আট আনা কম নেন, তবে ওই পাইপ ফের ব্যবহারে তো আপনার খরচ বাঁচতে পারে অনেকখানি!”
আমতা-আমতা স্বরে ছগনের উত্তর, “আসলে ঝাঁটা ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায় লাঠিও। অনেকে তো ঝাড়ু বাইরেই ফেলে রাখেন।” কিন্তু মোদী নাছোড়। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “যদি বিক্রির সময়েই ক্রেতাদের ফেরত দেওয়ার সুবিধার কথা বলে রাখা যায়?” এমন আগে ভাবেননি, কবুল করার পরে তবে ক্ষান্ত মোদী।
তবে তখনও ছগনের ছুটি হয়নি! ঠেলাগাড়ির পাশে তিনি যে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে, তার পিছনে দুই পায়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে জলের বোতল। প্রধানমন্ত্রীর নজরে পড়তেই ধেয়ে এল প্রশ্ন, “প্লাস্টিকের বোতল কেন? বাড়ি থেকে কলসি কিংবা কুঁজো আনা যায় না?” ছগনের মুখে অপ্রস্তুত হাসি।
ইন্টারনেটে হেঁটে এমন আলাপচারিতায় এর পর টিকিয়া বিক্রেতা অর্চনা শর্মাকে মোদীর প্রশ্ন, “গ্বালিয়রে গেলে (আপনার হাতে তৈরি) টিকিয়া পাওয়া যাবে?” আনাজবিক্রেতা ডালচাঁদকে বাহবা দিলেন ডিজিটাল লেনদেনের জন্য। এঁরা সকলেই জয়গান করলেন ফেরিওয়ালাদের জন্য ঋণ প্রকল্পের। দাবি করলেন, ‘উজ্জ্বলা’ যোজনার সৌজন্যে তাঁরা পেয়েছেন নিখরচার গ্যাস সিলিন্ডার, প্রধানমন্ত্রী আবাস প্রকল্পে বাড়ি, এমনকি আয়ুষ্মান ভারত বিমা প্রকল্পের সৌজন্যে নিখরচার চিকিৎসাও।
বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, এমন ‘বাছাই’ লোকজনের সঙ্গে ‘সাজানো কথোপকথন’ প্রচার করে আর কত দিন সত্যি ছবিটা চাপা দেবেন মোদী? নেটিজেনদের জিজ্ঞাসা, স্বচ্ছ ভারত অভিযানে নিজের হাতে ঝাঁটা ধরা প্রধানমন্ত্রী হয়তো ব্যবসার খুঁটিনাটি জানেন। পায়ের নীচে রাখা প্লাস্টিকের জলের বোতলও তাঁর নজর এড়ায় না। তা হলে দীর্ঘ লকডাউনের জেরে এত লোকের কাজ যাওয়া, চাকরি খোয়ানো তাঁর চোখ এড়াচ্ছে কী করে? কারও কটাক্ষ, ‘আগের ঝাঁটা ফেরত নিয়ে নতুনটি বিক্রি! এত মুনাফা রাখবেন কোথায় ওই ফেরিওয়ালা!’
মোদী অবশ্য জোরের সঙ্গে দাবি করেছেন, শুধু গত দু’মাসে মধ্যপ্রদেশে এই ঋণের সুবিধা নিয়েছেন অন্তত এক লক্ষ ফেরিওয়ালা। অন্যান্য রাজ্য এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দিলে, এমন ছবি দেখা যাবে সেখানেও। মহাজন কিংবা পরিচিতদের কাছ থেকে চড়া সুদে ধার নিতে হবে না। একই সঙ্গে, তিনি প্রবল ভাবে জোর দিয়েছেন ফুটপাত, ঠেলাগাড়িতে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধির জন্য। বলেছেন, “এই ঋণে সুদ এমনিতেই কম। এক বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দিলে, সুদের হার নগণ্য। তার উপরে ডিজিটাল লেনদেন করতে পারলে, সুদ গুনতেই হবে না প্রায়। পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে যাবেন ব্যাঙ্ককর্মীরাই।”
বিরোধীদের কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রী নোটবন্দির সময়ে ডিজিটাল লেনদেনে জোর দিয়েছিলেন। ফের তা নিয়ে সরব হলেন আনলক-এর সময়ে! সাধারণ মানুষের হাতে কাজ নেই। বহু ব্যবসা বসে যাওয়ার জোগাড়। চাকরি বাড়ন্ত। আর মোদীর মুখে ডিজিটাল লেনদেন আর ঝাঁটা ফেরত নিয়ে দু’পয়সা বাঁচানোর কথা!
ছগন অবশ্য কথা দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব ভেবে দেখবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy