Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mob Lynching

‘সব সাজানো’, পিটিয়ে মারার ঘটনা নিয়ে এ বার বিতর্কিত মন্তব্য নকভির

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত কয়েক বছরে গণপিটুনি এবং পিটিয়ে মারার মতো ঘটনা যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টেও।

বিতর্কিত মন্তব্য মুখতার আব্বাস নকভির। —ফাইল চিত্র।

বিতর্কিত মন্তব্য মুখতার আব্বাস নকভির। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ১২:৩৪
Share: Save:

জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানো যায় না, ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা নিয়ে অতি সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি। কিন্তু এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই মত পাল্টে ফেললেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত একের পর এক যে পিটিয়ে মারার ঘটনা সামনে আসছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই সাজানো। ভুয়ো অভিযোগ।

গত শুক্রবার বিহারের বানিয়াপুরে গরুচোর সন্দেহে উপজাতি সম্প্রদায়ের দু’জন এবং এক মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মারে একদল মানুষ। সেই নিয়ে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেন সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান। বিশেষত সংখ্যালঘুদেরই বার বার নিশানা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। আজম খান বলেন, ‘‘দেশভাগের সময় পাকিস্তান চলে গেলে এ ভাবে শাস্তি পেতে হত না মুসলিমদের। আমাদের পূর্বপুরুষরা পাকিস্তান যাননি কেন? আজ তার খেসারত দিতেই হবে আমাদের।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘মৌলানা আজাদ, জওহরলাল নেহরু, সর্দার পটেল, বাপুকে জিজ্ঞাসা করুন। ওঁরা মুসলিমদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ হয়ে গেলেও, আজও মাথা উঁচু করে বাঁচার সুযোগ পায়নি মুসলিমরা। আজও শাস্তি ভোগ করছি আমরা।’’ আজম খানের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই শনিবার মুখতার আব্বাস নকভির প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। তার জবাবেই গণপিটুনির অভিযোগকে ‘সাজানো এবং মিথ্যা ঘটনা’ বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন: রেকর্ড ভাঙার চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের, হুমকি বিজেপির, সব চোখ ধর্মতলায়​

কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা। তিনি বলেন, ‘‘নকভিজিকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এই মুহূর্তে দেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তার খবর কি আদৌ রাখেন উনি? আসলে সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিজেপির মাথাব্যথাই নেই। শাসকদলের প্রত্যেকে অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন।’’

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও তাঁর সংযুক্ত জনতা দল বিজেপির শরিক। বানিয়ালের ঘটনায় কড়া অবস্থান নিতে দেখা যায়নি তাঁকেও। বরং এই ঘটনাকে গণপিটুনির জেরে মৃত্যু না বলার পক্ষপাতী তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘গরু চুরি করতে গিয়ে যেহেতু ধরা পড়েছিল, তাই এই ঘটনাকে গণপিটুনির জেরে মৃত্যু বলা উচিত নয়।’’ কিন্তু যদি সে রকম কিছু ঘটেও থাকে, এ ভাবে পিটিয়ে খুন করা কতটা যুক্তিযুক্ত? এই প্রশ্নের জবাব সযত্নে এড়িয়ে যান তিনি।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত কয়েক বছরে গণপিটুনি এবং পিটিয়ে মারার মতো ঘটনা যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টেও। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ২০১৬-২০১৯ সালের গোড়া পর্যন্ত দু’হাজার আটটি সংখ্যালঘু ও দলিত হেনস্থার অভিযোগ জমা পড়েছে তাদের কাছে। যার মধ্যে ৮৬৯টি ঘটনাই ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। উত্তরপ্রদেশের বেশিরভাগ সময়ই দলিত এবং সংখ্যালঘুরাই আক্রান্ত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: একুশের আগের রাতে ভিড় কম কলকাতায়, লোক কত হবে, সংশয়ী মমতাও​

এই ধরনের ঘটনায় অপরাধীদের কী সাজা হওয়া উচিত, তা নিয়ে সম্প্রতি যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে একটি রিপোর্ট জমা দেয় উত্তরপ্রদেশের আইন কমিশন। তাতে অপরাধীদের সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাবাসের সুপারিশ করা হয়। নিজ নিজ এলাকায় এই ধরনের ঘটনা রুখতে ব্যর্থ হলে, দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার এবং আমলাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করার পক্ষে সওয়াল করে ওই কমিশন। তবে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

অন্য দিকে, দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেখানে সকলের উন্নতির কথা বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে জোর দিয়েছিলেন, সেইসময় তাঁরই মন্ত্রীর মন্তব্যে সরকারের উদাসীনতা আরও স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ছে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy