Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ভোটের ধাক্কা গা ছমছম ‘ভূতের’ শহরেও

আদি বাসিন্দাদের কেউ কবরে, কেউ বা পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। রাঁচী থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে শাল-মহুয়ার জঙ্গলের ঘেরা এই ম্যাকলাস্কিগঞ্জে স্মৃতি আঁকড়ে রয়ে গিয়েছেন গোটা ১৫ অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুব্রত বসু
ম্যাকলাস্কিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৪
Share: Save:

একের পর এক সাহেবি বাংলো। কিন্তু কোনওটার দরজা নেই, কোনওটার বা জানলা। খসে পড়ছে দেওয়ালের পলেস্তারা। এখানের ‘তুঁত গাছে, ভূত নাচে’। ভরদুপুরেও ছমছম করে গা।

আদি বাসিন্দাদের কেউ কবরে, কেউ বা পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। রাঁচী থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে শাল-মহুয়ার জঙ্গলের ঘেরা এই ম্যাকলাস্কিগঞ্জে স্মৃতি আঁকড়ে রয়ে গিয়েছেন গোটা ১৫ অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবার।

কেমন সেই স্মৃতি? বছর পঞ্চাশের নেলসন গর্ডন বলেন, ‘‘আমার বাবার আমলে কলকাতার হগ-মার্কেটে যা পাওয়া যেত, এখানেও তা মিলত। রাঁচী থেকে লোকে এখানে আসত সেই সব জিনিস কিনতে। তখন এখানে ছিল অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের রমরমা।’’

আরও পড়ুন: এনআরসি চেয়ে সরব রাজনাথও

১৯৩২ সালে আর্নেস্ট টিমোথি ম্যাকলাস্কি তৈরি করেছিলেন ‘কলোনাইজেশন সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’। রাতুর রাজার কাছ থেকে লিজে নিয়েছিলেন ১০ হাজার একর জমি। ইচ্ছে ছিল, দেশের সব অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারকে এনে এখানে তৈরি করবেন শহর। তাঁর ডাকে চল্লিশের দশকে এখানে বাড়ি করে চলে এসেছিলেন প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবার। এর বেশির ভাগই ছিলেন অবসর নেওয়া মানুষ।

যেমন স্ট্যানলি অসওয়াল্ড পটার। তাঁর ৫ একর জমির বাংলোর কেয়ারটেকার বাবলু পাসোয়ান বলেন, ‘‘ওঁর মৃত্যুর পর বাংলোর আর কোনও দাবিদার নেই। আমিই এখানে পরিবার নিয়ে থাকি।’’ গর্ডন জানান, পরের প্রজন্মের যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের প্রায় সবাই কাজ-কর্ম বা পড়াশোনার জন্য এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের একাংশ জীবিকার প্রয়োজনে বাংলোতে তৈরি করেছেন গেস্টহাউস। আর এই ব্যবসায় নেমে বিস্তর ক্ষোভ গর্ডনদের। নেলসন বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম ঝাড়খণ্ড রাজ্য তৈরি হওয়ার পরে সরকার পর্যটনে বেশি করে গুরুত্ব দেবে। আমাদেরও কপাল খুলবে। কিন্তু কোথায় কী? পরিকাঠামো তৈরিতে বিন্দুমাত্র সহায়তা করলেন না কেউ!’’ কী রকম? গর্ডনের ব্যাখ্যা, ‘‘নিজেদের সব ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়েছে। আগে ছিল হ্যারিকেনের আলো। এখন বিদ্যুৎটুকু এসেছে। তা-ও সব সময়েই লোড-শেডিং। সরকার স্টেশনের প্লাটফর্মটা পর্যন্ত একটু উঁচু করে পর্যটকদের সুবিধা করে দেয়নি।’’ গর্ডন বলেন, ‘‘শুধু ‘ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’-ই নয়, এখানে অনেক সিনেমাই হয়েছে। ঠিকমতো প্রচার ও পরিকাঠামো তৈরি হলে আরও হতে পারে। কিন্ত কে এ সব নিয়ে ভাববে!’’ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, পর্যটন দফতর একটু উদ্যোগী হলেই এই গরিব এলাকার অর্থনীতি পাল্টে যেত।’’

তবে অর্থনীতি পাল্টে দেওয়ার ‘স্বপ্ন’ দেখিয়ে প্রার্থীদের কাট-আউট লাগানো প্রচারগাড়ি ঘুরছে চারদিকে। আর কয়েকদিন পরেই ভোট কাঁকে বিধানসভার এই এলাকায়। গাড়ির দিকে তাকিয়ে বাবলু বলেন,‘‘গতবার যাঁকে ভোট দিয়েছিলাম, পাঁচ বছরে একবারও তিনি এখানে আসেননি। কোনও উন্নয়নও হয়নি।’’

মানুষের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে বিজেপি প্রার্থী বদল করেছে। কিন্তু তাতে যে শেষরক্ষা হবেই, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না এলাকার বিজেপি নেতা-কর্মীরাই।

স্থানীয় এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘বাবুলাল মারান্ডি বা অর্জুন মুন্ডার সরকারে বিরুদ্ধে মানুষের এত ক্ষোভ ছিল না। এখন তো অনেক এলাকার মানুষ কথাই শুনতে চাইছেন না। এমন বিপদে আগে কখনও পড়িনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

McCluskieganj Jharkhand Assembly Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy