বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে ভোপালের প্রার্থী করার পর থেকে দেশ জুড়ে প্রবল সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মালেগাঁও বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত সেই সাধ্বী প্রজ্ঞাকে নিয়ে বিজেপির কেউই এত দিন প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। কিন্তু এ বার এক নিউজ় চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রজ্ঞার হয়ে সওয়াল করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, ‘‘এক জন সাধ্বী মহিলাকে প্রার্থী করার জন্য এ দেশের বিরোধী দলগুলি যে ভাবে নিন্দা করছে, তা দুর্ভাগ্যজনক।’’
সাধ্বী প্রজ্ঞার পাশে দাঁড়িয়ে বিহারের অররিয়ায় ফড়বিসগঞ্জের ভোট-সভায় এ দিন ২৬/১১-র জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন মোদী। তখনকার কংগ্রেস সরকারকে নিশানা করে বলেন, ‘‘ওই হামলার পরেও পাকিস্তানকে সাজা দেওয়ার বদলে হিন্দুদের ফাঁসানোর চক্রান্ত করা হয়েছিল। ভোটভক্তির রাজনীতি করে বলেই কংগ্রেস এই ষড়যন্ত্র করেছিল।’’
মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও এবং রাজস্থানের অজমের দরগার সামনে বিস্ফোরণ মামলার মূল অভিযুক্ত সাধ্বী প্রজ্ঞা এখন জামিনে মুক্ত। দিন কয়েক আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভোপাল লোকসভা কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করে বিজেপি। প্রবীণ নেতা দিগ্বিজয় সিংহ ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী। প্রজ্ঞার মতো এক জন অভিযুক্ত ‘জঙ্গি’, যিনি জামিনে মুক্ত, তাঁকে কী করে বিজেপি টিকিট দিল, সেই প্রশ্ন তুলে প্রথম থেকেই সরব কংগ্রেস। সাধ্বীর পাশে ওই সাক্ষাৎকারে তাই মূলত কংগ্রেসকেই নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী এবং তাঁর মা সনিয়াকে নাম না করে বিঁধেছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘অমেঠী আর রায়বরেলীতেও দু’জন লড়ছেন যাঁরা জামিনে মুক্ত। কই, তাঁদের নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তুলছেন না। অন্য দিকে, এক জন মহিলা যিনি সন্ন্যাসিনী, তাঁকে কী ভাবে অপমানিত করা হচ্ছে।’’ মোদীর বক্তব্য, পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন সনাতন হিন্দু ধর্ম যা গোটা পৃথিবী এক বলে বার্তা দিতে শিখিয়েছে, তার বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ তুলছে কংগ্রেসের মতো দলগুলি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মোদীর কথায়, ‘‘কংগ্রেস আগে থেকেই সব কিছু পরিকল্পনা করে রাখে। সমঝোতা কাণ্ডে কী হল? কিছুই প্রমাণিত হয়নি। বিচারপতি লোয়ার মৃত্যুতেও কোনও রহস্য ছিল না। কিন্তু কংগ্রেস বলল তাঁকে নাকি খুন করা হয়েছে। কংগ্রেস আসলে চিত্রনাট্য লিখে রাখে। এক জন খলনায়ক, এক জন নায়ক থাকে তাতে। তার পর নিজেদের মতো করে ছবির গল্প সাজায় ওরা।’’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুর পরে দেশ জুড়ে যে শিখ-বিরোধী দাঙ্গা
হয়েছিল, তাকেও সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর কথায়, ‘‘ওঁর (ইন্দিরা গাঁধী) ছেলে (রাজীব গাঁধী) বলেছিলেন যখন বড় গাছ পড়ে পৃথিবী কাঁপে। তার পরে দিল্লি হাজার হাজার শিখ মারা গিয়েছিলেন। সেটাও কি সন্ত্রাসবাদ ছিল না? তার পরেও উনি (রাজীব গাঁধী) প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ওই দাঙ্গার প্রত্যক্ষদর্শীরা পরে মন্ত্রী হয়েছেন, এক জনকে তো সম্প্রতি (কমলনাথ) মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও করা হল। নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম সে নিয়ে কাউকে কোনও প্রশ্ন করে না।’’
আজ আবার সাধ্বী প্রজ্ঞার পাশে দাঁড়িয়েছে শিবসেনাও। ২৬/১১-র জঙ্গি হামলায় নিহত এটিএস প্রধান হেমন্ত কারকারেকে নিয়ে কালই বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন প্রজ্ঞা। বলেছিলেন, তাঁরই অভিশাপে মৃত্যু হয়েছে হেমন্তের। সেই মন্তব্যের সূত্রে শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘‘যে সময়ে প্রজ্ঞাকে ধরা হয়, তখন কেন্দ্রে ছিল ইউপিএ সরকার। আর সেই সরকারের চাপেই প্রজ্ঞাকে মালেগাঁও কাণ্ডে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছিলেন কারকারে। আমাদের উচিত প্রজ্ঞার দুঃখ আর যন্ত্রণা অনুভব করা।’’ কংগ্রেস যে হিন্দু সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে, তার বিরোধিতা করে সঞ্জয়ের বক্তব্য, ‘‘কোনও ধর্মের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদকে জোড়া সমর্থন করে না আমাদের দল। এক জন মহিলাকে যে ভাবে গ্রেফতার করে অত্যাচার করা হয়েছে, তা কোনও আইনের আওতায় পড়ে না। আর কেউ কেউ (কংগ্রেস) হিন্দু সন্ত্রাস নিয়ে বড় বড় কথা বলে।’’ মোদীর দাবি, ‘‘প্রথম দু’দফার ভোটে বিজেপি ভাল ফল করেছে। ভারত মাতা কি জয় শুনলে যাঁদের বুকে ব্যথা হয় প্রথম দু’দফার ভোটে তাঁরা জবাব পেয়েছেন। এখন আর তাঁরা সার্জিকাল স্ট্রাইকের প্রমাণ চাইছেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy