বৈঠকে কাশ্মীরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। রবিবার শ্রীনগরে। এর পরেই নামল কোপ। ছবি: পিটিআই।
রাজধানীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিনভর দফায় দফায় বৈঠক আর অন্য দিকে পাকিস্তানের হুঁশিয়ারির আবহে উৎকণ্ঠার পারদ চড়ছিল কাশ্মীরে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল না, কেন্দ্র ঠিক কী পদক্ষেপ করতে চলেছে। রবিবার রাতে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করা হল। গৃহবন্দি হলেন প্রাক্তন বিধায়ক সাজ্জাদ লোনও। গ্রেফতার সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি এবং কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদ। এর পর কী হবে, এই উদ্বেগেই এখন থমথমে উপত্যকা। অনির্দিষ্ট কালের জন্য জারি করা হয়েছে কার্ফু।
কিছু যে ঘটতে চলেছে, সে ইঙ্গিত অবশ্য মিলছিল ক’দিন ধরেই। অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দিয়ে হঠাৎই কাশ্মীরে বাড়ানো হয়েছিল আধাসেনার বহর। সম্ভাব্য জঙ্গি হানার খবর পেয়েই কি এই ব্যবস্থা, নাকি অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে সরকারের, জল্পনা জমছিল তা নিয়েই। ফেরানো শুরু হয়েছিল পর্যটকদের। রবিবার সন্ধ্যায় একটি সূত্রে শোনা যায়, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে কথা অবশ্য স্বীকার করেনি সরকার। তবে সূত্রের খবর, শোপিয়ানের মতো স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে থানা পাহারা দিচ্ছে বিএসএফ। বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরিয়ে আনা হয়েছে যুব ক্রিকেটারদেরও।
এ দিন কাশ্মীরের মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির নেতারা মেহবুবার বাড়িতে এক সর্বদল বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করার চেষ্টা হলে একযোগে তার প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। তার পরপরই তাঁদের কাউকে গ্রেফতার, কাউকে গৃহবন্দি করা হল। মেহবুবা-ওমর দু’জনেই টুইট করে নিজেদের গৃহবন্দিত্বের কথা সকলকে জানিয়েছেন। এই কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত কি আজ দিল্লির বৈঠকেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল? স্পষ্ট করে বলেননি কেউ।
রবিবার সারা দিন
• সর্বদল বৈঠকের পরেই গৃহবন্দি ওমর-মেহবুবারা
• দিনভর কাশ্মীর নিয়ে বৈঠক রাজধানীতে
• ৫ পাক সেনার দেহ ফেরত নিতে নারাজ পাকিস্তান
• কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হল সোমবার
• কাশ্মীরে কিছু থানা পাহারায় বিএসএফ
• শ্রীনগরে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ
• ফেরানো হচ্ছে ক্রিকেটারদেরও
আজ সকালে সংসদে পৌঁছেই অমিত শাহ সকলের আগে ডেকে পাঠিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গৌবাকে। বিদায়ী স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কিছু ক্ষণ আলোচনার পরে আসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। শুরু হয় তিন জনের বৈঠক। কিছু ক্ষণ পরে ওই বৈঠকে যোগ দেন দুই গোয়েন্দাপ্রধান অরবিন্দ প্রধান ও সমন্তকুমার গয়াল। পরে আলাদা ভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জম্মু-কাশ্মীরের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অমিত।
এরই মধ্যে ভারতকে হুঁশিয়ারির বার্তা দেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। নিয়ন্ত্রণরেখায় কেরন সেক্টরে ৩১ জুলাই রাতে পাক সেনার ব্যাট বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছিল ভারত। সেই হামলায় নিহত পাঁচ পাক সেনার দেহ পাক বাহিনীকে নিয়ে যেতে বলেছে ভারতীয় সেনা। কিন্তু ওই হামলার কথা অস্বীকার করে উল্টে এ দিন ভারতের বিরুদ্ধেই সুর চড়িয়েছেন ইমরান।
উৎকণ্ঠা: শ্রীনগর ছাড়ছেন এনআইটি পড়ুয়ারা। রবিবার জম্মু স্টেশনে ট্রেন ধরার তাড়া। ছবি: এপি।
টুইটারে পাক প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতের হামলার নিন্দা করছি। এটা মানবাধিকার আইন ও ১৯৮৩ সালের প্রথাগত অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে চুক্তির পরিপন্থী। এ নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সতর্ক হওয়া উচিত। ভারত কোনও ভুল পদক্ষেপ করলে পাকিস্তান জবাব দেবে।’’ এর পরেই তিনি লেখেন, ‘‘কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হলে তবেই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখা সম্ভব। এখনই মধ্যস্থতা করার সময়।’’ পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী রাজা ফারুক হায়দর পাক বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
“দেশের ভাল যারা চায় না, তারাই হিংসার পথ নেয়। এই ভারতকে বেছে নেয়নি কাশ্মীর। তবু আশা ছাড়ছি না। সবাই শান্ত থাকুন। আইন হাতে নেবেন না।” —ওমর আবদুল্লা, এনসি
“নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা গৃহবন্দি। বিশ্ব দেখছে জম্মু-কাশ্মীরে কী ভাবে মানুষের মুখ বন্ধ করা হচ্ছে। বাজপেয়ীজিকে (অটলবিহারী) এ সময় খুব দরকার ছিল। ভারত জাগো!” —মেহবুবা মুফতি, পিডিপি
“ওমর আবদুল্লা, আপনি একা নন। দেশের প্রতিটি গণতন্ত্রপ্রেমী কাশ্মীরের মূলস্রোতের নেতাদের পাশে রয়েছেন।...সংসদ চলছে। আমাদের কণ্ঠস্বরকে চুপ করানো যাবে না।” —শশী তারুর, কংগ্রেস
আগামিকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাড়িতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক বসতে চলেছে। তার আগে হতে পারে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয় কমিটির বৈঠক। সাধারণত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক হয় বুধবার। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রবল উত্তেজনার মধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকের খবর আসতেই নতুন করে জোরালো হয় জল্পনা। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী এবং জম্মু-কাশ্মীরের সাংসদ জিতেন্দ্র সিংহ সংসদ ভবন থেকে বেরোতেই তাঁদের ঘিরে ধরেন সাংবাদিকেরা। ‘‘আমি কিছু জানি না’’ বলে এড়িয়ে যান জিতেন্দ্র। সন্ধ্যায় বিজেপির কর্মশালা শেষ হওয়ার পরে সংসদে নিজের ঘরে যান প্রধানমন্ত্রী। সূত্রের খবর, অমিত শাহের সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। কিছু ক্ষণ পরে প্রধানমন্ত্রী বেরিয়ে যান। এর পরে অমিত ডেকে নেন দলের কার্যকরী সভাপতি জে পি নড্ডা, পীযূষ গয়ালদের। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সংসদের অধিবেশন শেষ হলেই কাশ্মীর যাবেন অমিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy