Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

অস্ত্র তুলে নিতে শুরু করেছে স্থানীয়রা, জঙ্গি দলে যোগ বাড়ছে, কাশ্মীরে উদ্বিগ্ন প্রশাসন

ব্যাঙ্ককে প্রবাসী ভারতীয়দের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাই ছিল সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতা ছড়ানোর মূল কারণ।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৬
Share: Save:

সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশের পাশাপাশি যে ভাবে কাশ্মীরের স্থানীয় যুবকেরা সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্র তুলে নিতে শুরু করেছে তাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। পুলওয়ামা থেকে হালের কুলগাম, প্রতিটি হামলায় স্থানীয় যুবকেরা জড়িত আছে বলে দাবি পুলিশের। ওই প্রবণতা রোখাই এখন দিল্লির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

এ দিনও ব্যাঙ্ককে প্রবাসী ভারতীয়দের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাই ছিল সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতা ছড়ানোর মূল কারণ। আজ কাজ শুরু করেছেন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল জি সি মুর্মু। কিন্তু বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে সেনা-আধাসেনার বাড়তি বাহিনী থাকা সত্ত্বেও জঙ্গি হামলায় উদ্বিগ্ন প্রশাসন।

প্রশ্ন উঠেছে, ফের কি কঠিন হতে শুরু করেছে কাশ্মীরের পরিস্থিতি? যেমনটি হয়েছিল হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে। ২০১৬ সালে ২৯ বছরের ওই তরুণের মৃত্যুর পরে জঙ্গি দলে নাম লেখানোর হিড়িক উঠেছিল গোটা কাশ্মীর জুড়ে। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ ও তিন মাসের টানা নিষেধাজ্ঞা ফের সেই পরিস্থিতিকেই দ্রুত ফিরিয়ে আনছে বলে আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরকে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ৯টি, দেশের নয়া মানচিত্র প্রকাশ করল কেন্দ্র

পুলওয়ামায় আধাসেনা কনভয়ে হামলাকারী আদিল দার বা কুলগামে বাঙালি শ্রমিকদের হত্যার পিছনে থাকা হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি গোষ্ঠীর আইজাজ মালিক, সকলেই স্থানীয়। গত তিন মাসে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে যে ক’জন জঙ্গি নিহত হয়েছে তার আশি শতাংশই হল স্থানীয় যুবক। ভারত-বিরোধিতাই হল যাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল। মূলত দক্ষিণ কাশ্মীরে ফের উধাও হয়ে যেতে শুরু করেছে যুবকেরা। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, তাদের অধিকাংশ নাম লিখিয়েছে জঙ্গি দলে।

ভারত সরকারের নয়া মানচিত্রে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। পাক অধিকৃত কাশ্মীর রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের মধ্যেই। ছবি: পিটিআই।

বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে উপত্যকা জুড়ে প্রচার শুরু হয়েছে, কাশ্মীরিয়ত ও ইসলাম বিপন্ন। গোয়েন্দাদের দাবি, এমন ভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে যেন কাশ্মীরিদের অস্তিত্বের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। লাগাতার ওই প্রচারে প্রভাবিত হতে শুরু করেছেন আমকাশ্মীরিও। বিশেষত যুবকেরা। পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বরাবর চেয়ে এসেছে, কাশ্মীরের স্থানীয় যুবকেরাই যাতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়। সে ক্ষেত্রে উপত্যকার মানুষ যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে দিল্লির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে সে কথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতেও সুবিধে হবে।

গোয়েন্দাদের কাছে আশঙ্কার বিষয় হল, এই মুহূর্তে গোটা উপত্যকার জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ৩০-এর কম। তাদের কোনও স্থায়ী রোজগার নেই। জঙ্গি দলে নাম লেখালে এক দিকে আয়ের উৎস তৈরি হয়। অন্য দিকে বুরহান ওয়ানির মতো জঙ্গিরা এখন কাশ্মীরি যুবকদের কাছে রোল মডেল। এক স্বরাষ্ট্র কর্তার আক্ষেপ, ‘‘দুর্ভাগ্য যে বুরহান বা জ়াকির মুসাই হল কাশ্মীরের যুবকদের রোল মডেল। পাল্টা কোনও রোল মডেল আমরা খাড়া করতে পারিনি।’’

শুধু যুবক নয়, জঙ্গিদের নিশানায় এখন স্কুলের পড়ুয়ারা। যাদের একেবারে গোড়া থেকেই ভারত- বিরোধী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন জামাত-ই-ইসলামি। গত মার্চ মাসে ওই সংগঠনটিকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্র। নাম পরিবর্তন করে তারা এখনও উপত্যকায় যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। সম্প্রতি উপত্যকার প্রত্যন্ত এলাকার সরকারি স্কুলগুলিকে নিশানা করছে জামাতের সদস্যরা। যাতে প্রত্যন্ত এলাকার ওই এলাকার বাসিন্দারা সন্তানদের জামাত নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন মাদ্রাসায় পাঠাতে বাধ্য হন। যেখানে পড়ুয়াদের একেবারে ছোট থেকেই ভারত-বিরোধী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আশঙ্কা, অবিলম্বে ওই উদ্যোগ বন্ধ না-করা হলে, ওই পড়ুয়ারাই বড় হয়ে হাতে বন্দুক তুলে নেবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy