Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নেতারা তো পুরো দেশটাকেই ‘মিম’ করে ফেলেছেন

এই দেশে পুলিশের কোনও নীতি নেই।  অনেক সময় তাদের  সরকারের গুন্ডাবাহিনী হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এই ব্যবস্থার বদল প্রয়োজন। একজন সাংবাদিক তো আর বন্দুক নিয়ে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লড়বেন না!

প্রশান্ত কানোজিয়া (সাংবাদিক, দিল্লি)
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০২:৪৫
Share: Save:

বাজার করতে বেরিয়েছিলাম। গত ৮ জুন দুপুর ১২টায় দিল্লিতে বাড়ির নীচ থেকে ক’জন লোক যখন নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমায় গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল, তখনও জানি না, আমার অপরাধ কী। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পরে রাস্তায় বলা হল, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে টুইট করায় আমায় গ্রেফতার করে লখনউ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাড়িতে বসে ভাবছি আমায় এনকাউন্টার করে দেওয়া হবে না তো! তখনও জানি না আদৌ ওঁরা পুলিশের লোক কিনা! পরে লখনউ পৌঁছে আশ্বস্ত হলাম। দিল্লি থেকে লখনউ-য়ে নিয়ে যাওয়ার কারণ কী জানতে চাওয়ায় বলা হল— আমি নাকি অনেক দিন ধরেই নজরে রয়েছি। এর পর আমার বাবাকেও তোলা হবে।

তত ক্ষণে আমার মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু স্ত্রীকে একবার ফোন করে বলতে পেরেছি, আমায় লখনউ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাইওয়ে-তে অনেক ক্ষণ ধরে ঘোরানোর পর রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আমায় পেশ করা হল লাশের মতো। বসলাম। তার পরেই হাজতে।

ওই চার দিন আমায় হাজতে রাখা হয়েছিল খুনে অভিযুক্ত, অপরাধী, ড্রাগ পাচারকারীর সঙ্গে। তারা জানতে চাইত, আমি কেন এখানে? চেষ্টা করেও বোঝাতে পারিনি। আমার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য ছিল— আদালত প্রশান্তের টুইটের সঙ্গে সহমত পোষণ করে না। এটা খুব ভাল নিদর্শন বলে মনে করি। আমার মতামতের সঙ্গে কেউ সহমত হতে না-ই পারেন। কিন্তু সে কারণে কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। বাক্-স্বাধীনতা খর্ব করা যায় না।

জামিনের পরে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরেছি। তবে লড়াইয়ে নামব। সাংবাদিক রূপেশ কুমার এবং আরও যে সাংবাদিক বন্ধুরা এখনও হাজতে, তাঁদের মুক্তির জন্য লড়ব। ক্ষমতায় আসার আগে যে দলই বলুক, তারা গণতান্ত্রিক, উদারপন্থী, নিরপেক্ষ, সামাজিক, ক্ষমতায় এলেই সকলে সমান। তাই সাংবাদিকদের লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। আমি ভাগ্যবান। সর্বোচ্চ আদালতে বিষয়টি নিয়ে পৌঁছতে পেরেছি। সকলের পক্ষে সেটা সম্ভব হয় না। এই দেশে সাংবাদিকদের ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, সেটা নিশ্চিত করতেই লড়ব।

এই দেশে পুলিশের কোনও নীতি নেই। অনেক সময় তাদের সরকারের গুন্ডাবাহিনী হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এই ব্যবস্থার বদল প্রয়োজন। একজন সাংবাদিক তো আর বন্দুক নিয়ে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লড়বেন না! না ভোটে দাঁড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন! ব্যঙ্গাত্মক আক্রমণ বা সমালোচনা দিয়েই তিনি তাঁর বক্তব্যকে তুলে ধরবেন। আমার কাছে কলম আছে আর শব্দ আছে, তা দিয়েই আমি সরকারের বিরোধিতা করব। সমাজের নিচুতলার মানুষগুলোকে নিয়ে তো মজা সবাই করতে পারেন। ক্ষমতাশালীর বিরুদ্ধে ব্যঙ্গবিদ্রুপের সাহস দেখাতে পারলে সেখানেই বাক্-স্বাধীনতার প্রকাশ। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে প্রিয়াঙ্কা শর্মাকে গ্রেফতার করেছিল, তারও তীব্র বিরোধিতা করছি। এই রাজনীতিকেরা দেশটাকেই ‘মিম’ বানিয়ে ফেলছেন পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে, আর কেউ তাঁদের নিয়ে ‘মিম’ বানালেই হাজতবাস! কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সকলের নিজের মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। না আরএসএস, না তৃণমূল, না অন্য কেউ— এদের ব্যক্তিগত মতাদর্শের প্রভাব সংবিধানে পড়বে না।

(অনুলিখন চৈতালি বিশ্বাস)

অন্য বিষয়গুলি:

Uttar Pradesh Luckno Journalist Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy