ভোটের ফলাফলের প্রবণতা আসতেই রাঁচিতে বিজেপির সদর কার্যালয় ফাঁকা। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি ছাড়া কেউ নেই। ছবি: টুইটার থেকে
অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আজসু)এর সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়াই কি কাল হল বিজেপির! গেরুয়া শিবিরের হাত থেকে হাতছাড়া হওয়ার মুখে ঝাড়খণ্ডের মসনদ। ২০১৪ সালের বিধানসভা ভোটে শতাংশের হিসেবে প্রাপ্ত ভোটের তুলনায় খুব বেশি হেরফের না হলেও বিজেপির আসন কমেছে বেশ কয়েকটি। আবার প্রাপ্ত ভোটের হার বেড়েছে আজসুর। ফলে জোট থাকলে যে ফল অন্যরকম হতে পারত, রাজ্যের বিজেপি নেতারাও ঘনিষ্ঠমহলে সে কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন।
২০১৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট করে আজসু আটটি আসনে প্রার্থী দিয়ে জিতেছিল পাঁচটিতে। কিন্তু এ বার প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময় থেকেই বিজেপির সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হয়। বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনার আগেই অনেকগুলি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দেয় আজসু। তাতে দ্বন্দ্ব আরও বাড়ে। শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষই অনড় থাকায় ভেস্তে যায় জোট। ভোটের ময়দানে নামে দুই দল নামে আলাদা আলাদা ভাবে।
ফল ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, বিজেপির ভোট কমেনি, বরং কিছুটা বেড়েছে। ২০১৪ সালে বিজেপি ৩১.২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আসন ছিল ৩৭টি। কিন্তু এ বার তাদের প্রাপ্ত ভোট ৩৩ শতাংশের বেশি। কিন্তু প্রাপ্ত আসন কমে দাঁড়িয়েছে ২৪টিতে (চূড়ান্ত ফল এখনও আসেনি)। যদিও ভোটবৃদ্ধির এই পরিসংখ্যান আটটি বেশি আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য হতে পারে বলে অনেকেরই মত। অর্থাৎ প্রাপ্ত ভোট খুব বেড়েছে এমন বলা যায় না। আবার কমেছে এমনও নয়।
তাহলে বিজেপির আসন কমল কোন সমীকরণে? এই প্রশ্নেই ভোট বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘আজসু ফ্যাক্টর’। তাঁদের বক্তব্য, প্রাপ্ত ভোট ধরে রেখেও বিজেপির আসন ধরে রাখতে না পারার অন্যতম কারণ আজসুর প্রাপ্ত ভোট। আজসু যে ভোট পেয়েছে, সেটা বিজেপির ঝুলিতে গেলে আরও বেশ কয়েকটি আসনে জয় নিশ্চিত ছিল বিজেপি বা আজসু প্রার্থীদের। অর্থাৎ আজসুর ভোট কাটার জন্যই এমন ফল। আবার অনেকগুলি আসনে যেখানে বিরোধী প্রার্থীরা জিতেছেন, সেখানে জয়ের ব্যবধান খুব সামান্য। এই ফলও সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে। অন্য দিকে বিরোধী ভোটও একমুখী। বিজেপির আসন কমার পিছনে সেটাও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ বলেই মত বিশ্লেষকদের।
আজসুর দিক থেকে দেখলে, বিজেপির সঙ্গ ছাড়ায় মোটের উপর ক্ষতি হয়েছে তাদেরও। কারণ শতাংশের হিসেবে প্রাপ্ত ভোট অনেকটা বাড়লেও আসন সংখ্যা পাঁচ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে চারে। যদিও ২০১৪ সালের তুলনায় ভোট বেড়েছে অনেকটাই (৩.৬৮ শতাংশ থেকে ৮.৪০)। এ ক্ষেত্রেও অবশ্য বিজেপির মতোই বেশি আসনের যুক্তি দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। গত বার যেখানে মাত্র আটটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল আজসু, এ বার সেখানে প্রায় সব আসনে লড়েছে। ফলে প্রাপ্ত ভোটের হার বাড়াটাই স্বাভাবিক। আজসুর কাছে এখন একমাত্র সান্ত্বনা সেটাই।
কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, আপাতত আর সেই ক্ষত মেরামত করা সম্ভব নয়। কারণ বিরোধী ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম), কংগ্রেস এবং আরজেডি জোট প্রায় ম্যাজিক ফিগারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। এক সময় ৪২টিতেও এগিয়ে ছিল। দু’-একটি আসন কম থাকলেও সেই সংখ্যা জোগাড় করা খুব কঠিন হবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। উল্টো দিকে বিজেপির প্রাপ্ত আসন ৩০-এর দু’-একটি কম-বেশি। সেখান থেকে ৪১-এ পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব বলেও মনে করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy