ফৈয়জের গীতিকবিতাই প্রতিবাদীদের মুখে মুখে ফিরছে। ছবি: সংগৃহীত।
আইআইটি কানপুরের তদন্তকারী প্যানেলের কাঠগড়ায় উঠতে চলেছেন উর্দু কবি ফৈয়জ আহমেদ ফৈয়জ। ঠিক তিনি নন। তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘হম দেখেঙ্গে’। প্যানেল বলছে তারাও ‘দেখবে’— পাকিস্তানি কবির এই কবিতাটি ‘হিন্দু-বিরোধী’ কি না!
‘‘হম দেখেঙ্গে, লাজ়িম হ্যায় কে হম ভি দেখেঙ্গে..।’’ আশির দশক থেকে বিখ্যাত শিল্পীদের কণ্ঠে, টিভি চ্যানেলে অত্যাধুনিক সঙ্গীতায়োজনে, আজকের কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই উর্দু ‘নাজ়ম’। জামিয়া মিলিয়ায় পুলিশি ধরপাকড়ের প্রতিবাদে গত ১৭ নভেম্বর আইআইটি কানপুর ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে করতে ফৈয়জের সেই গীতিকবিতাই গাইছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। আর তা নিয়েই নালিশ ঠুকেছেন আইআইটি কানপুরের এক শিক্ষক। তাঁর প্রধান আপত্তি ফৈয়জের কবিতার কয়েকটি পংক্তি নিয়ে—‘‘ জব আর্জ়-এ-খুদা কে কাবে সে/ সব বুত উঠওয়ায়ে জায়েঙ্গে... সব তখ্ত গিরায়ে জায়েঙ্গে/ বস নাম রহেগা আল্লা কা।’’
বশীমন্ত শর্মা নামে আইআইটি-র ওই শিক্ষক তাঁর অভিযোগপত্রে লাইনগুলির ব্যাখ্যা করেছেন এই ভাবে, ‘‘যখন মূর্তিগুলো সরিয়ে দেওয়া হবে, শুধু আল্লার নাম থেকে যাবে।’’ তাঁর দাবি, জামিয়ার সমর্থনে বিক্ষোভ দেখানোর সময়ে ভারত-বিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক বিবৃতি দিয়েছেন আইআইটি-র পড়ুয়ারা। কাজেই মিছিলের উদ্যোক্তা ও পাণ্ডাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে বহিষ্কার করা হোক। বশীমন্তের সঙ্গে একমত হয়ে অভিযোগপত্রে সই করেছেন ১৫ জন পড়ুয়াও।
আরও পড়ুন: অনুপ্রবেশকারীরা কেন ভোটব্যাঙ্ক? প্রশ্ন সঙ্ঘের
উর্দু কবি ফৈয়জ আহমেদ ফৈয়জ।
অতএব প্যানেল। যারা ফৈয়জের কবিতা হিন্দু-বিরোধী কি না, তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি এ-ও তদন্ত করে দেখবে যে, ছাত্রছাত্রীরা শহর জুড়ে বলবৎ হওয়া ১৪৪ ধারা ভেঙেছিলেন কি না, সমাজমাধ্যমে আপত্তিকর কিছু পোস্ট করেছিলেন কি না। আইআইটি-র ডেপুটি ডিরেক্টর মণীন্দ্র আগরওয়ালের বক্তব্য, ‘‘ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পড়ুয়ারা ফৈয়জের কবিতা বলছেন। সেই কবিতাকে কেউ কেউ হিন্দু-বিরোধী বলতে পারেন।’’
এখানেই সাহিত্যপ্রেমীদের প্রশ্ন, ‘হম দেখেঙ্গে’ হিন্দু-বিরোধী হবে কেন! বরং ওই অধ্যাপক একটু পড়াশোনা করলেই ফৈয়জের মতাদর্শ-চিন্তাধারা, কবিতাটির ইতিহাস, সবই জানতে পারতেন। ফৈয়জ এই কবিতা লিখেছিলেন ১৯৭৯ সালে। পাকিস্তানে তখন একনায়ক জিয়া-উল-হকের রাজত্ব। জিয়ার সামরিক শাসনের বিরুদ্ধেই ‘হম দেখেঙ্গে’ লিখেছিলেন ফৈয়জ। বামপন্থী মানুষটি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন। জেলও খেটেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাসকের সিংহাসন-পতনের স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে কবিতায়। স্বৈরাচারীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে লেখা এই কবিতা শুধু আজ নয়, বছর তিনেক আগে জেএনইউয়ে ছাত্র আন্দোলনের সময়েও গাওয়া হয়েছে সেই ক্যাম্পাসে।
কানপুরের প্রতিবাদী ছাত্রেরা নিজস্ব পোর্টালে বলেছেন, ওই শিক্ষক নিজেই এক বার সোশ্যাল সাইটে সাম্প্রদায়িক বিষয় পোস্ট করেছিলেন। ফলে সমাজমাধ্যম তাঁকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। অথচ এ বার ছাত্রদের প্রতিবাদকেই সাম্প্রদায়িক ও বিভ্রান্তিকর রং দেওয়া হচ্ছে, যাঁরা শুধু ফৈয়জের কবিতায় জামিয়ায় পুলিশি ধরপাকড়ের প্রতিবাদ করছিলেন।
উত্তরপ্রদেশে এই প্রবণতা কিন্তু নতুন নয়। সম্প্রতি ছাত্রদের ‘ইসলামি স্তোস্ত্র’ গাওয়ানোর অভিযোগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অভিযোগের ভিত্তিতে সাসপেন্ড করা হয় পিলিভিটের এক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। জানা যায়, প্রার্থনা সঙ্গীতে ছাত্রেরা গাইছিল মহম্মদ ইকবালের লেখা একটি বিখ্যাত গান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy