গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সেনাবাহিনীতে চাকরি ৩০ বছর। তার পর অসম বর্ডার পুলিশে কর্মরত। অসমের এ হেন সেনা অফিসার মহম্মদ সানাউল্লাকেই‘বিদেশি’ বলে বন্দি করা হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। কিন্তু সেই ‘বিদেশি’ চিহ্নিতকরণনিয়েই উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য। প্রশ্ন উঠে গেল গোটা প্রক্রিয়া নিয়েই। সানাউল্লার তদন্তে তাঁর গ্রামের যে তিন জনের স্বাক্ষর রয়েছে, তাঁরাই দাবি করলেন, কোনও তদন্তই করা হয়নি। তাঁদের সঙ্গে কথাই বলা হয়নি। তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার চন্দ্রমল দাসের বিরুদ্ধে তিন জনই আলাদা আলাদা করে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর চন্দ্রমল দাস আবার আরও বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। অসম বর্ডার পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্তার বক্তব্য, সানাউল্লার বিরুদ্ধে কোনও তদন্তই হয়নি। সানাউল্লা নামে এক জনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট তিনি জমা দিয়েছেন। কিন্তু সেই সানাউল্লা এই সুবেদার সানাউল্লা নন। প্রশাসনিক স্তরে কোনওভাবে রিপোর্ট মিশে গিয়ে গন্ডগোল হতে পারে।
সানাউল্লার বাড়ি অসমের কামরূপ জেলার কলহিকশ গ্রামে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্টে যে তিন জনের সই রয়েছে, তাঁরা চন্দ্রমল দাসের বিরুদ্ধে ‘সাজানো’ রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের সঙ্গে কেউ কথাই বলেননি বলে দাবি তিন জনেরই। তাহলে কীভাবে তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত হল রিপোর্টে? এই প্রশ্নের সদুত্তর নেই চন্দ্রমল দাসের কাছেও। গ্রামবাসীদের আরও দাবি, যে সময়কালের মধ্যে আসানাউল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে, সেই সময় তিনি গ্রামেই ছিলেন না। সানাউল্লার সার্ভিস রেকর্ডও সেই কথাই বলছে।
গত সপ্তাহেই বর্তমানে অসম বর্ডার পুলিশে কর্মরত মহম্মদ সানাউল্লাকে আটক করে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে অসম সরকার। বেআইনি ভাবে ভারতে প্রবেশ অর্থাৎ অনুপ্রবেশ এবং অবৈধ ভাবে বসবাসের অভিযোগ সানাউল্লার বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি ওই ডিটেনশন ক্যাম্পেই রয়েছেন। কিন্তু নতুন করে এই সব বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসার পর তাঁকে বিদেশি চিহ্নিত করা এবং আটক করার পদ্ধতি নিয়েই বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হল।
আরও পড়ুন: এনডিএ শুধু ‘অপমান’ করবে, মহাজোটে ফিরুন, নীতীশকে প্রস্তাব লালুর দলের
আরও পডু়ন: কাটমানি! ক্ষুব্ধ মমতা, ভোটের ফল বিশ্লেষণে বার্তা দলকেও
সানাউল্লার বিরু্দ্ধে তদন্ত রিপোর্টে নাম রয়েছে কুরান আলির। তিনি সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, এই বিষয়ে ‘‘কখনও কোনও পুলিশ অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিনি। আমাকে কখনও তদন্তের জন্য কোথাও ডাকাও হয়নি।’’ আরও আশ্চর্যের বিষয়, ওই সময় তিনি গ্রামেই ছিলেন না, দাবি কুরান আলির। তিনি বলেছেন, ‘‘২০০৮-’০৯ সালে (ওই সময়ই সানাউল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়) আমি গুয়াহাটিতে ছিলাম।’’
সানাউল্লার তদন্ত হয়েছে ২০০৮ সালের মে মাস থেকে ২০০৯ সালের অগস্ট মাসের মধ্যে। কুরান আলির বক্তব্য, ওই সময়ের মধ্যে সানাউল্লা গ্রামেই ছিলেন না। সানাউল্লার সার্ভিস রেকর্ডও বলছে, ওই সময় জঙ্গি দমন অভিযানের জন্য মণিপুরে কর্মরত ছিলেন তিনি। তদন্তকারী অফিসার চন্দ্রমল দাসও সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
কুরান আলির মতো প্রায় একই বয়ান সানাউল্লার রিপোর্টে উল্লেখ অন্য দুই গ্রামবাসী আমজাদ আলি এবং সাবাহান আলির। তাঁরাও অভিযোগ দায়ের করেছেন পুলিশে। তিন গ্রামবাসীর অভিযোগের তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক বর্ষীয়ান পুলিশ অফিসার ভাস্করজ্যোতি মহন্ত জানিয়েছেন, ফরেনার্স ট্রাইবুনালে নির্দেশ অনুযায়ী এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি এবং ফরেনার্স ট্রাইবুনাল নিয়ে অসমের বাসিন্দাদের ক্ষোভের অন্ত নেই। সানাউল্লার ঘটনা সামনে আসার পর সরব হয়েছে ওই অংশও। তাঁদের বক্তব্য, এক জন প্রাক্তন সেনা অফিসারেরই যদি এমন হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তা এই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত। এখন ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে যাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেও যে এমনটা হয়নি, এই নিশ্চয়তা কোথায়। প্রশ্ন তুলেছে সানাউল্লার গ্রাম। আর তাঁদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন অসমের বহু সাধারণ মানুষও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy