Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
national news

মোদী জমানায় অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ছে গণতন্ত্র: সনিয়া

একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত তাঁর নিবন্ধে এ কথা লিখেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।

কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। -ফাইল ছবি।

কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। -ফাইল ছবি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২০ ১১:৩৬
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমানায় বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র গভীর সঙ্কটাপন্ন। অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির সঙ্কট তো গভীরতর হয়েছেই গণতন্ত্রের প্রতিটি স্তম্ভই পড়ে গিয়েছে বিপদে। প্রতিবাদীদের অবদমন ও নানা ভাবে হেনস্থার মাধ্যমে বাকস্বাধীনতার অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে।

একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত তাঁর নিবন্ধে এ কথা লিখেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী

তাঁর বক্তব্য, মোদী জমানায় বিরোধী ও বিক্ষুব্ধদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বা ‘জাতীয়তাবাদবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সরকারবিরোধী যে কোনও পদক্ষেপকেই ‘জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক’ তকমা লাগিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এই সবই করা হচ্ছে দৈনন্দিন সমস্যাগুলি থেকে মানুষের নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য। সন্ত্রাসবাদ বা জাতীয়তাবাদবিরোধী সমস্যা নেই যে তা নয়। কিন্তু সেগুলির মোকাবিলার জন্য যতটা আপসহীন হওয়া প্রয়োজন তার ছাপ মোদী সরকার ও বিজেপি-র কাজকর্মে দেখা যাচ্ছে না। বরং এনডিএ সরকার এবং বিজেপি বিরোধী যে কোনও রাজনৈতিক প্রতিবাদকেই চক্রান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করতে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থাকে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বা তাঁদের সামাজিক ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। এই ভাবে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে অন্তঃসারশূন্য করে তোলা হচ্ছে।

সনিয়ার অভিযোগ, যত রকম ভাবে রাজনৈতিক বিরোধী, প্রতিবাদীদের হেনস্থা করা সম্ভব মোদী সরকার সেই সবই করে চলেছে। তার জন্য পুলিশকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কাজে লাগানো হচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি), কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই), জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ), এমনকী নারকোটিক্স ব্যুরোকেও। এরা সকলেই এখন চলছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কার্যালয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অঙ্গুলিহেলনে। যে রাষ্ট্রযন্ত্রগুলিকে নাগরিকদের কল্যাণে কাজে লাগানো প্রয়োজন সেগুলিকেই উত্তরোত্তর আরও বেশি করে কাজে লাগানো হচ্ছে মোদী সরকার ও বিজেপি-র বিরোধীদের বিরুদ্ধে। এর আগে ভারতে আর কোনও সরকারই এমন ভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্রগুলিকে এই ভাবে ব্যবহার করেনি।

পরপর দু’টি মোদী জমানায় কী ভাবে প্রতিবাদীদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে তা-ও সবিস্তারে জানিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।

আরও পড়ুন- তরজা তুঙ্গে ট্রাম্প এবং বাইডেনের

আরও পড়ুন- লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানাল আমেরিকা, চিনের মোকাবিলায় জোটের সওয়াল​

সনিয়া লিখেছেন, শুরুটা হয়েছিল ২০১৬-য়। সরকারবিরোধী প্রতিবাদের শাস্তি হিসাবে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের একটি বিশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তরুণ ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করা হয়। গ্রেফতার কার শুরু হয় বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী, অধ্যাপক ও বুদ্ধিজীবীদের। মোদী সরকার এবং বিজেপি বিরোধী প্রতিবাদকে ‘ভারতবিরোধীতার চক্রান্ত’ আখ্যা দিয়ে তাকে দমন করার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ প্রকাশ পায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের সময়। ওই সময় শাহিনবাগ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আন্দোলন-বিক্ষোভের প্রথম সারিতে উঠে আসতে দেখা গিয়েছিল মহিলাদের। যা শাসকদলের ভাল লাগেনি। সেই সময় সত্যাগ্রহের বিরুদ্ধেও কঠোর দমনপীড়নমূলক পদক্ষেপ ছিল মোদী সরকারের। শাসকদল এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল যার জন্য হিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। তা থেকে ফেব্রুয়ারিতে দাঙ্গা পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়। অথচ মোদী সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সেই সব রোখা যেত। কিন্তু তার পরিবর্তে প্রতিবাদীদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রায় ৭০০ এফআইআর করা হয়েছে। শয়ে শয়ে মানুষকে আটক করা হয়েছে ইউএপিএ আইনে। জেরা করা হয়েছে। দিল্লি দাঙ্গার ঘটনায় এমন সব মানুষের জড়ানো হয়েছে, সমাজকর্মী বা মানবাধিকার কর্মী হিসাবে যাঁদের পরিচিতি রয়েছে গোটা বিশ্বে। হাথরসে এক কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের উদাসীনতাও সকলকে অবাক করে দিয়েছে। নির্ভয়া কাণ্ডের সময় কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের আমলে এই উদাসীনতা কিন্তু দেখা যায়নি।

নিবন্ধের একেবারে শেষাংশে সনিয়া লিখেছেন, ‘‘ভারতের জনগণকে শুধুই ভোটার ভাবলে হবে না। তাঁরাই, শুধু তাঁরাই আসলে এই দেশ, এই জাতি। তাঁদের সকলকে রক্ষা করাই সরকারের দায়িত্ব। তাঁদের একটি অংশকে দেখা আর অন্য অংশটিকে উপেক্ষা করাটা কোনও সরকারের কাজ হতে পারে না। দেশের সংবিধানকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চললেই ভারতের গণতন্ত্র টিঁকবে। না হলে সেই গণতন্ত্র উত্তরোত্তর অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়বে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

sonia gandhi indian democracy congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy