সেনার সামনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার লাদাখে। এএফপি
কথা ছিল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ সকালে লাদাখ যাবেন। তার বদলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই লাদাখে পা রাখলেন।
গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার হামলায় ভারতের ২০ জন জওয়ানের মৃত্যুর পরে আজ লাদাখে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী এক দিকে সেনার মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। ‘সম্প্রসারণবাদী’ বলে সমালোচনা করেছেন চিনের। অন্য দিকে, গোটা দেশকে রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন— তিনিই লাদাখ পৌঁছে সেনার পাশে দাঁড়ানোর সাহস দেখাতে পারেন। সীমান্তে ভারতের রাস্তা নিয়ে চিন আপত্তি জানালেও দিল্লি পিছু হটবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মোদী।
লাদাখে দাঁড়িয়েও ‘চিন’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি মোদী। নাম না করেই চিনের ‘সম্প্রসারণবাদ’-এর দিকে আঙুল তুলেছেন। বলেছেন, ‘‘সম্প্রসারণবাদের যুগ সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে। কারও সম্প্রসারণের জেদ চাপলে সে বিশ্বশান্তির পক্ষে বিপদ হয়ে ওঠে। ইতিহাস বলছে এমন শক্তি বরাবরই ধুলোয় মিশে গিয়েছে বা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।’’ এই সফরকে কেন্দ্র করে মোদীর ডাকাবুকো ভাবমূর্তি প্রচারে নেমে পড়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন, তা ফের প্রমাণিত হল।’’ প্রাক্তন সেনাপ্রধান বিক্রম সিংহও বলেছেন, ‘‘চিনকে কড়া বার্তা দেওয়া গিয়েছে। এটা কৌশলগত ভাবে উপযুক্ত পদক্ষেপ।’’
১) ব্রুনেই-দক্ষিণের কিছু অংশ দাবি, ২) ফিলিপিন্স-দক্ষিণ চিন সাগরের ভাগ, ৩) ইন্দোনেশিয়া-নাতুনা সাগরের মাছ ধরার অধিকার, ৪) মালয়েশিয়া-দক্ষিণ চিন সাগরের কিছু দ্বীপের অধিকার, ৫) সিঙ্গাপুর-নিজেদের জলভাগে মার্কিন নৌ-সেনার ঘাঁটি নিয়ে আপত্তি, ৬) লাওস-অধিকাংশ ভূখণ্ড দাবি, ৭) কম্বোডিয়া-আংশিক ভূখণ্ড দাবি, ৮) তাইল্যান্ড-মেকং নদীর মূল শাখায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও বাঁধ তৈরি নিয়ে বিবাদ, ৯) জাপান-সেনকাকু দ্বীপের অধিকার, ১০) ভিয়েতনাম-দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য, ১১) নেপাল-১২টি এলাকা জবরদখল, ১২) তাইওয়ান-প্রায় গোটা ভূখণ্ডেরই দাবি, ১৩) উত্তর কোরিয়া-পাকতু পাহাড়, ইয়ালু ও তুমান নদী নিয়ে ধারাবাহিক বিবাদ, ১৪) দক্ষিণ কোরিয়া-পূর্ব চিন সাগরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে ধারাবাহিক মতান্তর, ১৫) মঙ্গোলিয়া-গোটা ভূখণ্ডের দাবি, ১৬) ভুটান-কুলা কাংরি শিখর-সহ অনেকটা ভূখণ্ড চিনের দখলে, ১৭) তাজিকিস্তান-সীমান্ত নিয়ে ১৫০ বছরের সংঘাত, ১৮) কাজাকস্তান-৩৪ হাজার বর্গ কিলোমিটারের দাবি, ১৯) কিরঘিজস্তান-গোটা ভূখণ্ডের দাবি, ২০) রাশিয়া-১ লক্ষ ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের দাবি
আরও পড়ুন: ‘ট্রোজান হর্স’! বিদ্যুৎক্ষেত্রে চিনা সরঞ্জাম আমদানি নয়
আরও পড়ুন: আবার ফিরল সেই টাকা ফেরানোর দৃশ্য, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে কি? ধন্দ তৃণমূলেই
মোদী চিনের নাম না-করলেও তাঁর লাদাখ সফর নিয়ে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, চিন ও ভারত সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। কোনও পক্ষেরই এমন কিছু পদক্ষেপ করা উচিত নয়, যাতে সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যায়। কিন্তু চিন যে লাদাখে ভারতের জমি দখল করে রেখেছে, সে কথাও সরাসরি বলেননি মোদী। স্বাভাবিক ভাবেই গোটা বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুলেছে, কেন চিন নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর এই অখণ্ড নীরবতা? কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের প্রশ্ন, ২৮ জুন ‘মন কি বাত’, ৩০ জুন রাষ্ট্রের উদ্দেশে বক্তৃতা, ৩ জুলাই সেনার সঙ্গে কথা, এক সপ্তাহে তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী চিনের নাম করলেন না। কংগ্রেসের প্রশ্ন, মজবুত ভারতের প্রধানমন্ত্রী এত দুর্বল কেন?
কারও কাছেই খবর ছিল না, প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে লাদাখ যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার জানা গিয়েছিল, রাজনাথের লাদাখ সফর পিছিয়ে যাচ্ছে। সেনা সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত ১টায় লাদাখের সেনা অফিসারদের কাছে খবর যায়, প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সকালে লাদাখ যাচ্ছেন। ভোরবেলা দিল্লি থেকে রওনা হন মোদী। ইন্টারনেটে যাঁরা বিমান চলাচলের দিকে খেয়াল রাখেন, তাঁরাই প্রথমে দেখেন, একটি ভিভিআইপি বিমান লাদাখের দিকে যাচ্ছে।লাদাখে পৌঁছে প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী চলে যান লে থেকে ৪০-৪৫ কিলোমিটার দূরে নীমুতে। সরকারি দাবি অনুযায়ী, ১১ হাজার ফুট উচ্চতায় জংস্কার পর্বতমালায় ঘেরা, সিন্ধু নদীর তীরে নীমু ‘ফরোয়ার্ড লোকেশন’ বা সীমান্তবর্তী এলাকা। কিন্তু আসলে সেখান থেকে গালওয়ান উপত্যকার দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। জওয়ানেরা মূলত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ওই শিবিরে থাকেন। সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল অনিল দুহুনের মন্তব্য, ‘‘নীমু কবে থেকে ফরোয়ার্ড লোকেশন হল? ওটা বেড়ানোর জায়গা।’’
নীমুতেই ১৪ কোরের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরেন্দ্র সিংহ প্রধানমন্ত্রীকে গোটা পরিস্থিতি জানান। এর পরে সেনার জ্যাকেট পরা প্রধানমন্ত্রী জওয়ানদের উদ্দেশে দীর্ঘ সময় ধরে আবেগঘন বক্তৃতা করেন। ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনি তুলে বলেন, ‘‘ভারত মাতার মানসম্মান রক্ষার জন্য আপনাদের সমর্পণ অতুলনীয়। যে কঠিন পরিস্থিতিতে, যে উচ্চতায় ভারতমাতার ঢাল হয়ে আপনারা তাঁকে রক্ষা করেন, তাঁর সেবা করেন, তার মোকাবিলা পুরো বিশ্বে কেউ করতে পারে না।’’ ১৪ নম্বর কোর ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’ (তেজ ও ক্রোধ) নামে পরিচিত। এই বাহিনীর জওয়ানেরাই গালওয়ানে চিনা সেনার হাতে নিহত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘শত্রু আপনাদের তেজ ও ক্রোধ দেখেছে।’’ এর পরে লে-তে সেনা হাসপাতালে গিয়ে আহত জওয়ানদের সঙ্গেও কথা বলেন মোদী। সেনার স্মৃতিসৌধে নিহত জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানান।
কিন্তু এতে সেনার মনোবল বাড়বে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দেশের মানুষের সামনে, লাদাখের জওয়ানের সামনে শত্রুর নাম না করে কথা বলে কী লাভ?’’
সরকারি সূত্রের খবর, দিল্লি ফিরেই পরপর চারটি বৈঠক করেন মোদী। কূটনীতিকদের মতে, মোদী গত দু’মাসে বহু রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে কথা বলেননি। কৌশলগত ভাবেই চিনকে নিজের মুখে আক্রমণ করছেন না। এখন তাঁর অগ্রাধিকার যে কোনও ভাবে লাল ফৌজকে ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে ফেরত পাঠানো। তা যে অত্যন্ত কঠিন, সে কথা তাঁকে বিদেশ মন্ত্রক ও সেনা জানিয়ে দিয়েছে। এখন দেশের সর্বোচ্চ স্তর থেকে চিনকে নিশানা করা হলে তার পরিণতি কী হবে, তা
আন্দাজ করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া, চিনফিংয়ের সঙ্গে মোদী যে সখ্য তৈরি করেছিলেন, নিজেই আক্রমণ করলে তা জলাঞ্জলি দিতে হয়। কোনও ভাবে সম্ভব না হলে রাষ্ট্রনেতাদের স্তরেই সমাধানসূত্র বেরোনোর শেষ রাস্তা। তা আগেই বন্ধ করে দেওয়া যায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy