লাদাখে পাহারায় ভারতীয় জওয়ান।—ছবি রয়টার্স।
প্যাংগং লেকের উত্তরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা বিন্যাসে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছে ভারত। বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে প্যাংগং লেকে দক্ষিণ প্রান্তের একাধিক স্থানে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, চিনের সেনা গত শনিবার বিনা প্ররোচনায় প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তের স্থিতাবস্থা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এর পরে গত কাল রাতেও তারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের দিকের চুমার এলাকায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। সতর্ক ভারতীয় সেনা তা প্রতিহত করেছে। চিনা সেনার লাগাতার এই জাতীয় চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতেই প্যাংগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে সেনা বিন্যাসে বদল ঘটানো হয়েছে।
এর জেরে আজ দুপরে জল্পনা ছড়ায় প্যাংগং লেকের উত্তর ঘেঁষে থাকা ফিঙ্গার ফোর-এর দখল নিয়েছে ভারতীয় সেনা। প্রশ্ন ওঠে, কোন এলাকা দখলের কথা বলতে চাইছে নয়াদিল্লি? হারানো এলাকাই কি ফের দখল করেছে ভারতীয় সেনা? নাকি নতুন এলাকা দখলের কথা বলা হচ্ছে?
তবে পরে সেনা সূত্রে জানানো হয়, ফিঙ্গার ফোর-এর দখল নেওয়া নিয়ে যে জল্পনা ছড়িয়েছে, তা ঠিক নয়। তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা বিন্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এটা করা হয়েছে চিনা সেনার গত শনিবারের তৎপরতার পর দিনই, অর্থাৎ রবিবার। তবে কী সেই পরিবর্তন, দেশের সুরক্ষার স্বার্থেই তা নিয়ে মুখ খোলেনি সেনা। ভারত নিজেদেরই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ফেরাতে সক্ষম হয়েছে কি না, তা নিয়েও কিছু বলতে চায়নি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
আরও পড়ুন: পাবজি-সহ ১১৮টি অ্যাপ নিষিদ্ধ
সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, গত শনিবার রাতের অন্ধকারে ‘কালা টপ’ চূড়া দখলের অভিযান চালিয়েছিল চিন সেনা। কিন্তু ভারতীয় জওয়ানেরা সতর্ক থাকায় সেই ছক ভেস্তে যায়। প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তের পরে গত দু’দিনে দক্ষিণ প্রান্তে চিনা সেনাকে জমি দখলের চেষ্টা করতে দেখে রেজাং লা এবং রেচিন লা এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। সেখানে সেনা কমানোর কোনও প্রশ্ন নেই বলে বেজিংকে জানিয়েও দিয়েছে দিল্লি। চুসুলের কাছে চিনা সেনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে টি-৯০ ট্যাঙ্ক।
এরই মধ্যে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, গত শনিবার রাতে লাদাখে দু’দেশের সংঘর্ষে এক ভারতীয় সেনা মারা গিয়েছে। তিব্বতি ওই সেনা ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সদস্য ছিলেন। এ নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি নয়াদিল্লি বা সেনা। চিনের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, সাম্প্রতির ঝামেলায় ভারতের কোনও সেনার মৃত্যু ঘটেনি। কিছু সূত্রে বলা হচ্ছে, নিয়াম তেনজিং নামে বিকাশ রেজিমেন্টের এক ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে ঠিকই, তবে তা মাটিতে থাকা পুরনো মাইন ফেটে। নিয়াম ছিলেন ভারতে আশ্রয় নেওয়া তিব্বতি পরিবারের বংশধর।
গত দু’দিনের মতো প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা কমাতে চুসুলে আজও বিগ্রেড কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। একই সঙ্গে গত কালের মতো আজও চিনের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ভারতের সেনাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেছে। আমার তাদের ফিরে যেতে বলছি। ভারতের সেনা সূত্রের মতে, লাদাখ সীমান্তে ভারতের প্রস্তুতি বুঝতে জল মাপার কৌশল নিয়েছে চিন। বিশেষ করে শনিবার রাতে ভারতীয় সেনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হারানোয় পাল্টা জবাব দিতে এখন মরিয়া চিনের সেনা। গত কালও চুমুর এলাকায় চিনের ৭-৮টি সাঁজোয়া গাড়ি বেরোতে দেখেই পাল্টা পদক্ষেপ করে ভারতীয় সেনা। তাতে পিছিয়ে যায় চিনা সেনা। রাতে ফের তারা ডেপস্যাং-সহ নিয়ন্ত্রণ রেখার সমান্তরালে থাকা দৌলত বেগ ওল্ডি রোডের বিভিন্ন অংশে আকাশ লক্ষ্য করে আলোর বাজি (ফ্লেয়ার) ছোড়ে। ওই এলাকায় ভারতীয় সেনার অবস্থান জানতেই এই কৌশল নিয়েছিল চিন সেনা।
এ দিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ সাংহাই সহযোগিতা সংগঠন (এসসিও)-এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে মস্কো গিয়েছেন। যাওয়ার আগে লাদাখের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বৈঠক করেন তিনি। সেখানে স্থির হয়েছে, ভারতীয় সেনা সীমান্ত পার হবে না ঠিকই, কিন্তু নিজেদের পোস্ট বা এলাকার অধিকার ছাড়ার কোনও প্রশ্ন নেই। আগামী দিনেও চিন যে প্ররোচনামূলক পদক্ষেপ করে যাবে, সে বিষয়ে ভারত নিশ্চিত। তাই আপাতত কিছু দিন সীমান্ত ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আগ্রাসী মনোভাব বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে চিনা সেনার যে কোনও দুরভিসন্ধি রোখা সম্ভব হয়। সাংহাই মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে চিনের প্রতিরক্ষমন্ত্রীর। কিন্তু সাউথ ব্লক জানিয়ে দিয়েছে, চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে রাজনাথের এ যাত্রায় বৈঠক হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
গত শনিবার থেকে লাদাখে যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তার পিছনে চিনের প্ররোচনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আমেরিকা। পেন্টাগন গত কাল চিনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট মার্কিন কংগ্রেসে জমা দেয়। তাতে বলা হয়েছে, ভারতকে সামরিক ভাবে ঘিরে ধরতে ইতিমধ্যেই পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারে সেনা ঘাঁটি বানিয়েছিল বেজিং। পরের ধাপে এ বার তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলিতেও সেনা ঘাঁটি ও সামরিক পরিকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে চিন। পেন্টাগনের মতে সামরিক দিক থেকে ভারতকে চর্তুদিক থেকে ঘিরে ধরতেই এই সার্বিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে চিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy