পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে গেলেন ডেরেক। শুক্রবার, হাথরসে ঢোকার মুখে। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি
যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ রাহুল গাঁধী-প্রিয়ঙ্কা ভদ্রকে বৃহস্পতিবার হাথরসে যেতে দেয়নি। মাঝরাস্তায় গলাধাক্কা, গ্রেফতারির পর গ্রেটার নয়ডা থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছে দিল্লিতে। এ বার তৃণমূল কংগ্রেসকেও আটকে দিল যোগীর পুলিশ। হাথরসে ঢোকার মুখেই দলের প্রতিনিধিদের আটকে দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। অন্য দিকে হাথরসের প্রতিবাদ-আন্দোলনকে রাজধানীর রাজপথে নিয়ে আসছে কংগ্রেস। আজ, শুক্রবার দিল্লিতে বিক্ষোভ-মিছিলের ডাক দিয়েছে তারা। তাদের পাশাপাশি আপ এবং অন্য কয়েকটি গণ সংগঠনও পথে নামছে। কিন্তু তার আগে কার্যত যোগী সরকারের কায়দাতেই ইন্ডিয়া গেট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পুলিশ। ফলে এদিনও উত্তপ্ত হতে পারে রাজধানীর রাজনীতি।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন হাথরসে নির্যাতিতার গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করে তৃণমূল সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল। নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তৃণমূলের প্রতিনিধিরা প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন দিল্লি থেকে। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে হাথরসের গ্রামে যাচ্ছিলেন। ছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল ও মমতা ঠাকুর (প্রাক্তন সাংসদ)।’ কিন্তু তাঁদের গ্রামে ঢোকার ১ কিলোমিটার আগেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ।
ঘটনার ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে ডেরেক ও’ব্রায়েন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মমতা ঠাকুরদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, ধস্তাধস্তি হয়েছে পুলিশের। ডেরেককে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেওয়ার ছবিও ধরা পড়েছে। পরে মমতা ঠাকুর অভিযোগ করেন, ‘‘হাথরসের নির্যাতিতার বাড়িতে যাচ্ছিলাম আমরা। আমাদের উপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। প্রতিমা মণ্ডলকে পুরুষ পুলিশ ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। আমাকে পুরুষ পুলিশ ধাক্কাধাক্কি করেছে। এটা লজ্জাজনক।’’
দেখুন ভিডিয়ো:
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমার গায়ে হাত দিয়েছে পুরুষ পুলিশ। আমি তফশিলি সম্প্রদায়ের। আজ গাঁধী জয়ন্তী। আজকের দিনে আমার সঙ্গেই যদি যোগীর পুলিশ এই ব্যবহার করে, তা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়, ভেবে দেখুন আপনারা।’’
বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা, রণদীপ সুরজেওয়ালা, কে সি বেণুগোপাল, অধীর চৌধুরীরা। কিন্তু গ্রেটার নয়ডার কাছে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরেই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। পরে বিকেলের দিকে পুলিশ আবার দিল্লিতে ফেরত পাঠিয়ে দেয় তাঁদের। তার পরেই শুক্রবারের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে কংগ্রেস।
এদিনের মিছিলে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী হাঁটতে পারেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে শেষপর্যন্ত প্রিয়ঙ্কার কর্মসূচির বদলও হতে পারে। এ ছাড়া দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টি (আপ)-র পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘোষণা করা হয়েছে। পথে নামতে পারে কয়েকটি সমাজসেবী, নারীবাদী এবং মানবাধিকার সংগঠনও। কিন্তু এ সব প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যাতে সংসদ ভবন এবং রাষ্ট্রপতি ভবনের কাছাকাছি ইন্ডিয়া গেট চত্বরে হতে না পারে, তার জন্য ইতিমধ্যেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ফলে পাঁচ জনের বেশি মানুষ ইন্ডিয়া গেট চত্বরে এক সঙ্গে জড়ো হতে পারবেন না। তবে সর্বাধিক ১০০ জন জমায়েত করতে পারবেন যন্তরমন্তরে। সে ক্ষেত্রেও পুলিশ-প্রশাসনের আগাম অনুমতি নিতে হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টুইট করে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন নয়াদিল্লির ডেপুটি কমিশনার এইশ সিঙ্ঘল। পুলিশের ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণায় প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে দমাতেই কি এই বন্দোবস্ত।
বস্তুত, ঘটনার কেন্দ্রস্থল হাথরস এখনও অবরুদ্ধ। শুক্রবারও গ্রামে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে খবর মিলেছে। ঢুকতে পারছেন না সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাথরস ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাহুলকে গলাধাক্কা, হাথরস ঘিরে তপ্ত রাজনীতি, হস্তক্ষেপ ইলাহাবাদ হাইকোর্টের
আরও পড়ুন: ভয় দেখিয়ে গ্রাম ঘিরল যোগী-প্রশাসন
বৃহস্পতিবার রাহুলদের হেনস্থা, হাথরসে যেতে না দেওয়া থেকে শুরু করে গোটা হাথরস অবরুদ্ধ করে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যোগীরাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নির্যাতিতার পরিবারের তরফে পুলিশি গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতেই বিষয়টিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের পুলিশ-প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের সেই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে প্রিয়ঙ্কা টুইটারে লিখেছেন, খানিকটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তিনি। শুক্রবার গাঁধীজয়ন্তী। সেই উপলক্ষে মহাত্মা গাঁধীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে টুইটারে হাথরসের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন রাহুল গাঁধী। লিখেছেন, ‘বিশ্বের কাউকে আমি ভয় করব না। কোনও অবিচারের কাছে মাথা নত করব না। সত্যের ক্ষমতা দিয়ে মিথ্যাকে পরাজিত করব এবং অসত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সমস্ত প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করব’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy