অশ্বিনী ঝুনঝুনওয়ালা। ছবি: সংগৃহীত।
মাত্র দশ মিনিটেই নিজের সংস্থা থেকে হাতিয়ে নিয়েছিলেন ৩৮ কোটি টাকা। তবে শেষরক্ষা হল না। পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অশ্বিনী ঝুনঝুনওয়ালা।
অনলাইনে পোকার গেমে প্রবল আসক্তি ৩৬ বছরের অশ্বিনীর। তা খেলতে গিয়েই খুইয়েছিলেন ৪৭ লক্ষ টাকা। সেই সঙ্গে তাঁর মাথায় ঝুলছিল আরও ৪৫ লক্ষ টাকার ঋণ। বিপুল ঋণের বোঝা মাথা থেকে নামাতে সংস্থার এক প্রাক্তন সহকর্মী বেদান্ত রুংটার দ্বারস্থ হয়েছিলেন অশ্বিনী। বেদান্তই অশ্বিনীকে নিজের সংস্থার অন্দর থেকে টাকা হাতানোর আইডিয়াটা দেন। বেদান্তের প্রস্তাব ছিল, এক কোটি ডলারের আর্থিক দুর্নীতিতে সামিল হলে অশ্বিনী আরও চার লক্ষ ডলার হাতে পাবেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান অশ্বিনী।
পুলিশ জানিয়েছে, আমেরিকার আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর বেঙ্গালুরু শাখায় ফরেক্স অ্যান্ড ইক্যুয়িটি সেটলমেন্টবিভাগে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন অশ্বিনী।অনলাইনে পোকার খেলে হারিয়েছেন ৪৭ লক্ষ টাকা। সেই সঙ্গে প্রথমে তাঁর ২০ লক্ষ টাকার একটি ব্যাঙ্ক ঋণ নেওয়া ছিল। তা মেটাতে না পারলেও এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক থেকেও আরও ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন তিনি। তবে কোনও ভাবেই সে ঋণের কিস্তি মেটাতে পারছিলেন না। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গত ছ’মাসে কোনও কিস্তিই ব্যাঙ্কে জমা দেননি অশ্বিনী।
আরও পড়ুন: দুই বিয়েতেও ক্ষান্ত নয় যুবক, তৃতীয় বার চেষ্টা করতেই প্রাক্তন স্ত্রীদের হাতে জুটল বেদম মার
এক তদন্তকারী আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘অশ্বিনীকে কিছু একটা করতেই হত। না হলে যে বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি, তা বজায় রাখা সম্ভব হতো না। গত মাসে ব্যাঙ্ক ঋণ বাড়ানোর বহু চেষ্টাও করেছিলেন অশ্বিনী। তবে সে আবেদন খারিজ করে দেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।’’পুলিশ জানিয়েছে, এর পর বেদান্তের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন অশ্বিনী। দু’জনে অনলাইনেই কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। অশ্বিনীকে সাত লক্ষ টাকা ঋণও দেন বেদান্ত।
আরও পড়ুন: এমসেই ‘কোর্টরুম’, উন্নাও কাণ্ডে নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড, আনা হল সেঙ্গারকেও
পুলিশ জানিয়েছে, গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ বেদান্তের বিরুদ্ধে এর আগেও সংস্থার অন্দরে আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল।বেদান্তের সঙ্গে নিয়মিতই কথাবার্তা হত অশ্বিনীর। সে সময়ই দু’জনে মিলে একসংস্থা থেকে এককোটি ডলার হাতানোর ছক কষেন। গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর বেঙ্গালুরু শাখার আইনি প্রধান অভিষেক পারশীরার অভিযোগ, ৬ সেপ্টেম্বর সংস্থার ইন্টারনাল রিভিউয়ের সময় আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি প্রথম নজরে আসে। সে দিনই পুলিশে অভিযোগ করেন পারশীরা।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নিজের সংস্থা থেকে টাকা সরানোর জন্য গৌরব মিশ্র, সুজিত আপ্পাইয়া এবং অভিষেক যাদব নামে সংস্থার তিন কর্মীকে টার্গেট করেছিলেন অশ্বিনী। কী ভাবে? পুলিশের দাবি, ওই তিন কর্মীকে কাজ বোঝানোর নামে তাঁদের কম্পিউটার ব্যবহার করতেন তিনি। কাজ বোঝানোর নামে এক দিন গৌরবের কম্পিউটারে বসেন। তাঁকে অন্যত্র পাঠিয়ে ওই কম্পিউটার সিস্টেমে একটি থার্ড পার্টি পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন উইন্ডো তৈরি করে ফেলেন। সেখান থেকে গৌরবের পরিচয়ে সংস্থার ৩৮ কোটি টাকা (৫৪ লক্ষ ডলার) ট্রান্সফার করে দেন হংকংয়ের একটি ব্যাঙ্কে। গৌরব ফিরে আসার আগেই কাজ হাসিল করে ফেলেন অশ্বিনী।
পারশীরার অভিযোগের পর সংস্থার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। তাতেই খটকা লাগে তদন্তকারীদের। ওই ফুটেজ নিয়ে অশ্বিনীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তাতে অশ্বিনী নিজের অপরাধ স্বীকার করেন বলে দাবি পুলিশের। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে মঙ্গলবার অশ্বিনীর সঙ্গে বেদান্তকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও জানিয়েছেন, হংকংয়েরযে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অশ্বিনী টাকা সরিয়েছিলেন, সেখানে থেকে ৫৪ লক্ষ ডলার উদ্ধার করা গিয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টটি কার নামে রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy