বানভাসি: বুধবার মরিগাঁওয়ে। নিজস্ব চিত্র
বানভাসি অসমের মরিগাঁও জেলার টেঙাগুড়ি গ্রামে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছিলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) জওয়ানেরা। বুক জল ভেঙে এক ব্যক্তিতে এগোতে দেখে নৌকো নিয়ে এগোলেন তাঁর দিকে। লোকটির হাতে একটি প্লাস্টিকের প্যাকেট। এত জলেও মাথার উপরে হাত তুলে প্রাণপণে আগলে রেখেছেন সেটা।
উদ্ধার করে নৌকায় তোলার পরে জানা গেল তাঁর নাম সামসুল। বাড়িতে জল ঢোকার পরে ঘর ছেড়েছিলেন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে। তাদের নিয়ে উঁচু জায়গায় পৌঁছনোর পরে আচমকাই মনে পড়ে, আধ-ডোবা ঘরে থেকে গিয়েছে এনআরসির কাগজপত্র। সুতরাং কলার ভেলায় চড়ে গ্রামে ফিরেছেন। দু’দিন খাওয়া জোটেনি। তবু এনআরসির নথি পাওয়ার লড়াই ছাড়েননি। সামসুলের কথায়, ‘‘বাড়িঘর আজ ডুবেছে। কাল জল নেমে যাবে। কিন্তু এনআরসির কাগজ যদি না থাকে তা হলে তো দেশহীন হয়ে পড়ব!’’
ত্রাণকার্যে নামা এনডিআরএফের জওয়ানেরা জানাচ্ছেন, মরিগাঁও, ধুবুড়ি, বঙাইগাঁও, নগাঁও—সংখ্যালঘুপ্রধান সব এলাকাতেই একই ছবি। ঘর ডুবলেও ভিটে আঁকড়ে থাকতে চাইছেন প্রান্তিক, সংখ্যালঘু মানুষেরা। বাড়তে থাকা জল, অনাহার, সাপের কামড়ের চেয়েও তীব্র আশঙ্কায় ভুগছেন সকলে। আর কয়েক দিন পরেই এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা বেরোবে। সেখানে নাম থাকলে ভাল, কিন্তু যদি নাম বাদ পড়ে, তা হলে তো এই সব কাগজপত্র সম্বল করেই ফের ফরেনার্স ট্রাইবুনালে হাজির হতে হবে। তাঁদের কথায়, ‘‘বিচারক তো আর বন্যার অজুহাত শুনবেন না!’’
তাই অনেক সময়েই আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে পৌঁছে দেওয়ার পরে তাঁদের কান্নাকাটিতে বাধ্য হয়ে আবার বন্যায় ভেসে যাওয়া গ্রামে ফিরে যেতে হচ্ছে এনডিআরএফ জওয়ানদের। ঘর খুঁজে নিয়ে আসতে হচ্ছে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র। এমনকি লাহরিঘাটির একটি পরিবারের কাতর অনুরোধে বন্যায় পুরো ডুবে যাওয়া একটি কুঁড়ের ভিতর থেকে এনআরসির ফাইল উদ্ধার করতে ডুবুরি নামাতে হয় উদ্ধারকারীদের।
সযত্নে প্লাস্টিকে মুড়ে রাখা ওই ক’টা কাগজই যেন জীবনমৃত্যুর সীমারেখায় দাঁড়ানো সংখ্যালঘু মানুষগুলোর ‘প্রাণভোমরা’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy