কৃষক সংগঠন তথা কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির দাবি, নয়া আইন কৃষক-বিরোধী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নয়া কৃষি আইন নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। কৃষি আইন নাকচ করতে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিকে আইন প্রণয়নের চিন্তা-ভাবনা করতে আহ্বান জানালেন সনিয়া। দেশজোড়া কৃষক সংগঠনগুলির বিক্ষোভের আবহে সোমবার সনিয়ার এই আহ্বান যে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে আরও শক্তিশালী করবে, তা মনে করছেন অনেকে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় আইনকে কী ভাবে নাকচ করা যাবে? সে উপায়ও বাতলে দিয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা কে সি বেনুগোপাল। এ দিন টুইটারে তিনি লিখেছেন, “মাননীয়া কংগ্রেস সভানেত্রী কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিকে তাদের রাজ্যে সংবিধানের ২৫৪(২) ধারার আওতায় এমন আইন পাসের সম্ভবনা ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে (কৃষি আইন নিয়ে) কেন্দ্রীয় আইনকে নাকচ করা যায় এবং তাতে রাষ্ট্রপতির সম্মতির প্রয়োজন হয়।”
কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা আইন কি এ ভাবে নাকচ করা যায়? সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, সনিয়া যে ধারার উল্লেখ করেছেন, তাতে এই সংস্থান রয়েছে। সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কিত কোনও ক্ষেত্রে রাজ্য বিধানসভা যদি এমন কোনও আইন প্রণয়ন করে, যা সংসদীয় আইনের পরিপন্থী এবং সেটি রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করলে, সে ক্ষেত্রে তা রাজ্যে বলবৎ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘কৃষকদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে’, কৃষি আইন নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা রাহুলের
গত সপ্তাহে রাজ্যসভায় তুমুল হইহট্টগোলের মাঝে ধ্বনিভোটে পাস হয়ে যায় ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন বিল’ এবং ‘কৃষক সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন বিল’। যা নিয়ে রাজ্যসভায় রীতিমতো ধুন্ধুমার বেধে যায়। বিরোধী সাংসদেরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সে সময় অধিবেশন পরিচালনাকারী রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহের টেবিলের সামনে তুমুল প্রতিবাদের পাশাপাশি রুল বুক ছিঁড়ে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ। বিল দু’টি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর বিরোধীদের দাবি নাকচ করে ধ্বনিভোটের নির্দেশ দেন হরিবংশ। এর পর তা ধ্বনিভোটে পাস হয়। তার পর বিরোধীশূন্য রাজ্যসভায় ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য (সংশোধনী) বিল’-ও পাস করিয়ে নেয় মোদী সরকার। ওই অধিবেশনে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আট বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। গোটা ঘটনার প্রতিবাদে সংসদ চত্বরে ধর্নায় বসেন বিরোধী সাংসদেরা। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় মোদী সরকারকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হরিবংশ। রবিবার রাতে বিলগুলিতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হয়েছে।তবে যে ভাবে কৃষি বিল পাস করানো হয়েছে, তা নিয়ে এ দিনও মোদী সরকারকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী।
আরও পড়ুন: কৃষক বিক্ষোভের আঁচ রাজধানীতে, পুড়ল ট্রাক্টর, পঞ্জাবে অনড় চাষিরা
কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। রাজধানী দিল্লি, পঞ্জাব, কর্নাটক থেকে তা ছড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে।
কৃষক সংগঠন তথা বিরোধী দলগুলির দাবি, নয়া আইন কৃষক-বিরোধী। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকেরা। যদিও সরকারের দাবি, এতে উপকৃত হবেন কৃষকেরাই। মধ্যস্থতাকারীদের বদলে নিজেদের পণ্য সরাসরি বড়সড় বিক্রেতাদের কাছে বেচতে পারবেন তাঁরা। যদিও সরকারের এই যুক্তি মানতে নারাজ বিরোধীরা। তাঁদের যুক্তি, কৃষক ও কর্পোরেট সংস্থাগুলির মাঝে মধ্যস্থতাকারীদের সরিয়ে দিলে দরাদরি করার ক্ষমতা হারাবেন কৃষকেরা। এ ছাড়া, এতে খুচরো ব্যবসায়ীরাও মার খাবেন। অন্য দিকে, কৃষকেরা সময় মতো তাঁদের পণ্যের দামও পাবেন না। ফলে রাজ্যগুলির অর্থনীতিতেও ধাক্কা লাগবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy