—প্রতীকী ছবি
প্রতি বছরের শেষ নাগাদ জোর জল্পনা চলে, প্রযুক্তির জগতে কারা নতুন কী পরিষেবা আনছে গ্রাহকদের জন্য। ২০২১-এর গোড়ায় দেখা গেল, গ্রাহকদের দেওয়ার জন্য নতুন কিছু নেই হোয়াটসঅ্যাপের ঝোলায়। বরং গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া তথ্য বা ডেটার ডালিটি আরও একটু বড় মাপে সাজিয়ে তাদের মালিক সংস্থা ফেসবুক ইনকর্পোরেশনের হাতে তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত পাকা করেছে তারা।
মঙ্গলবার থেকেই গ্রাহকরা স্ক্রিনজোড়া বিজ্ঞপ্তি পেতে শুরু করেছেন। অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস, উভয় অপারেটিং সিস্টেমে চলা ফোনেই এসেছে তা। বক্তব্য, হোয়াটসঅ্যাপ তার শর্ত ও গোপনীয়তার নীতি বদল করছে। সম্মতি এখন বা পরে জানানোর দু’টি বোতাম আছে নীচে। কিন্তু ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্মতি না দিলে এই অ্যাপের পরিষেবা আর মিলবে না। চাইলে হেল্প সেন্টার অংশে গিয়ে কেউ তাঁর অ্যাকাউন্ট মুছেও ফেলতে পারেন।
বিজ্ঞপ্তিটিতে তিনটি ক্ষেত্রে আপডেট তথা বদলের উল্লেখ রয়েছে। এক, হোয়াটসঅ্যাপ পরিষেবা ও আপনার (গ্রাহকের) তথ্য আমরা যে ভাবে ‘প্রসেস’ করি। দুই, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি কী ভাবে ফেসবুকের পরিষেবাগুলি ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে পারবে। তিন, ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের অংশীদারি কী রকম, কী ভাবে ফেসবুকের অন্যান্য প্রোডাক্টকে আমরা তথ্য বা মশলা জোগাই।
আপাতনিরীহ এই কথাগুলির ভাঁজে আসলে কী করতে চাইছে মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থাটি? চলছে নানা রকম জল্পনা। গত কয়েক বছর ধরে আর্থিক লেনদেনের পরিষেবায় এগোতে চাইছে ফেসবুক। সেই লেনদেন সংক্রান্ত বার্তা বিনিময় হয় হোয়াটসঅ্যাপে। সেই সব বার্তা নিজের মতো করে ব্যবহার করতে বা রাখতে হবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে। গোপনীয়তার শর্তাবলি তার উপযোগী করতে হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপকে। হোয়াটসঅ্যাপের এনক্রিপটেড (সঙ্কেতে পরিণত করা) বার্তা আর ফেসবুকের খোলা খাতার মধ্যে একটা স্থায়ী যোগসূত্র গড়ে তোলা হচ্ছে, ব্যবসা সংস্থাগুলির জন্য।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তথ্য ভাগ করে নেওয়া। তৃতীয় পক্ষের কাছে ফেসবুকের তথ্য বেচে দেওয়া নিয়ে বিগত কয়েক বছরে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়েছে জ়াকারবার্গদের। হোয়াটসঅ্যাপ বাজার পেয়েছে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও এনক্রিপশনের কারণে। অথচ প্রতি দিন বা মাসে এক বার হলেও কোনও ই-মেল অ্যাকাউন্টে যখন বার্তা ও মিডিয়া ফাইল ‘ব্যাক আপ’ করা হয়, তখন গোপন সে সব বার্তার এনক্রিপশন নামের রক্ষাকবচটি আর থাকে না। হোয়াটসঅ্যাপ এ বার সরাসরিই জানিয়ে দিচ্ছে, গ্রাহকদের নাম, ফোন নম্বর, ফোনের তথ্য, আইপি অ্যাড্রেস, গ্রাহকের বার্তা বিনিময়ের ধরনধারণ, লেনদেনদেনের তথ্য এবং আরও কিছু তারা এ বার থেকে ফেসবুকের অন্য সংস্থাগুলির সঙ্গে ভাগ করে নেবে। কখনও সরাসরি। কখনও অনুমতি নিয়ে।
ফেসবুক যে গ্রাহকের মানসিক অবয়ব বা ‘প্রোফাইলিং’ করে থাকে তা অজানা কিছু নয়। এ বার বিপুল সংখ্যক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্যের খাজানা সরাসরি খুলে দেওয়া হচ্ছে ফেসবুকের কাছে। এক অর্থে গোপন কথাটি আর রবে না গোপনে।
প্রশ্ন হল, এ সব তথ্য কী কাজে লাগে ফেসবুকের বা তার অন্য সংস্থাগুলির? ফেসবুক পেমেন্টস ইনকর্পোরেশনের প্রয়োজনের কথা আগেই বলা হয়েছে। এ ছাড়াও ওনাভো, ওকুলাস, ক্রাউডট্যাঙ্গল নামে সংস্থা বা পরিষেবা আছে তাদের। ওনাভো অবশ্য এখন বন্ধ। ওকুলাস অনলাইন গেম সংক্রান্ত সংস্থা। ক্রাউডট্যাঙ্গল একটি খোঁজারু সংস্থা। নিরন্তর খুঁজে চলেছে, কোথায় কী হচ্ছে, কোনটা খবর হতে পারে, কার কথার গুরুত্ব কতটা, আমেরিকার নির্বাচনে কী হচ্ছে, রাশিয়ার কী প্রভাব আফ্রিকায়— এমন শত সহস্র বিষয় ঘেঁটে কোনও প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি নিখুঁত লক্ষ্যে তির ছুড়তে সাহায্য করে এরা।
এনবিসি নিউজ় যেমন একেবারে স্থানীয় কোনও বিষয় বা খবরকে জাতীয় স্তরে তুলে আনতে এদের সাহায্য নেয়। কোভিড-১৯ পর্বে কারা পিছিয়ে পড়ল, অতিমারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বন্ধ রাখায়, খেলাধুলোর জোরে যাঁরা পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়, তাদের মানসিক অবস্থা কেমন, এমন অজস্র বিষয় শিকার করতে, কোন কোন লোককে দিয়ে সে সব নিয়ে মুখ খোলালে তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি হবে, এই সব বিষয়ে সাহায্য করে ক্রাউডট্যাঙ্গল।
কী ভাবে? সোশ্যাল মিডিয়ায় কান পেতে। এ বার মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপও জোগাবে তথ্যের খনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy