ছবি এএফপি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, করোনা প্রতিষেধকের প্রশ্নে একজন দেশবাসীও বাদ পড়বেন না। সকলকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে। আর আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ বললেন, দেশের সকলকে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা কখনওই বলেনি সরকার! তার পরেই তিনি যোগ করেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ ধরনের বৈজ্ঞানিক বিষয়ে বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনা করা উচিত। স্বভাবতই আজ স্বাস্থ্যসচিবের ওই বক্তব্যের পর আক্রমণ শানিয়ে শিবসেনার প্রশ্ন, প্রতিষেধক প্রশ্নে তা হলে সত্যি কথাটা কে বলছেন? প্রধানমন্ত্রী না স্বাস্থ্যসচিব?
অক্টোবর মাসের শেষে একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, বাজারে করোনার প্রতিষেধক চলে এলে সবাইকে দেওয়া হবে। কেউ বাদ পড়বেন না। বিহার বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে সে রাজ্যের প্রত্যেককে বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। চলতি বছর যত শেষের দিকে এগোচ্ছে, নতুন বছরের দিকে তাকিয়ে মানুষ তত আশায় বুক বাঁধছে। বিশেষজ্ঞদের আশা, নতুন বছরের গোড়াতেই আসতে চলেছে করোনা প্রতিষেধক। যাকে হাতিয়ার করে অন্তত রেহাই পাওয়া যাবে অতিমারি থেকে। কিন্তু আজ সেই আশাতে অনেকটাই জল ঢেলে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। আজ করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত সাপ্তাহিক সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট বলে দেন, ‘‘দেশের সব মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে, এমন কথা বলেনি সরকার।’’ স্বাস্থ্যসচিবের এই বক্তব্যকে সমর্থন করে কেন দেশের প্রত্যেক মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার দরকার নেই, তার ব্যাখ্যায় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের ডিজি বলরাম ভার্গব বলেন, ‘‘প্রতিষেধক কতটা কার্যকর, তার উপরেই টিকাকরণ প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করে। আমাদের লক্ষ্য হল, করোনা সংক্রমণের যে শৃঙ্খল (চেন) রয়েছে, তা (প্রতিষেধকের মাধ্যমে) ভেঙে দেওয়া। যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তিকে প্রতিষেধক দিয়ে আমরা সেই শৃঙ্খল ভাঙতে সক্ষম হই, সে ক্ষেত্রে হয়তো দেশের সব মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।’’ কিন্তু ন্যূনতম কত মানুষকে টিকা দেওয়ার পরে দেশে করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে পারে, তা নিয়ে মুখ খোলেননি কোনও স্বাস্থ্যকর্তাই। সূত্রের বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ওই ন্যূনতম সংখ্যাটি বলা বেশ কঠিন।
আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওই বক্তব্য সামনে আসতেই আক্রমণ শানিয়েছে শিবসেনা। দলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর প্রশ্ন, ‘‘স্বাস্থ্যসচিব বলছেন, সকলকে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোনও ব্যক্তি বাদ পড়বেন না। তা হলে কি প্রধানমন্ত্রীর কথা ভুল?’’ কারা টিকা পাওয়ার প্রশ্নে কেন্দ্রের কাছে অগ্রাধিকার পাবেন, তা নিয়েও সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন ওই শিবসেনা সাংসদ।
যদিও ইতিমধ্যেই প্রথম দফায় যে ৩০ কোটি মানুষ প্রতিষেধক পাবেন, তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করে ফেলেছে কেন্দ্র। প্রাপকদের তালিকায় রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত এমন ১ কোটি মানুষ। রয়েছেন পুরকর্মী, পুলিশ ও আধা সেনার জওয়ানেরা, যাঁরা সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রথম সারিতে থেকে লড়াই করছেন। এঁদের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। তালিকায় দাবিদার পঞ্চাশ বছরের বেশি দেশের ২৬ কোটি মানুষ। যাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বাকি ১ কোটি মানুষ হলেন যাদের বয়স পঞ্চাশের নীচে অথচ যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কোনও ক্রনিক অসুখের শিকার। প্রথম ধাপে ওই ত্রিশ কোটি দেশবাসীর পরে বাকিরা ধাপে ধাপে প্রতিষেধকের টিকা পাবেন বলে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু আজ স্বাস্থ্যসচিবের বক্তব্যের পরে এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এ দিকে আজ ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রথম দফায় যে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিষেধক দেওয়া হবে, তাদের তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলার নির্দেশ দেন।
দেশের সব মানুষকে টিকা দেওয়া যে সম্ভব নয়, বরং যাঁদের দরকার, তাঁদেরই প্রতিষেধক দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, তা যৌক্তিক বলেই মনে করেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির গবেষক তথা ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, ‘‘জনগোষ্ঠীতে প্রতিষেধক দেওয়া একবার শুরু হলে একটি সময়ের পরে যাঁরা প্রতিষেধক পাননি, তাঁরাও সুরক্ষা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েন। এটাই নিয়ম। সরকার সেই পথে হাঁটতে চাইছে। তবে এ কথা ঠিক, ভারতের মতো বিশাল দেশে, বিদেশ থেকে প্রতিষেধক এনে, কোল্ড চেনের পরিকাঠামো গড়ে সকলকে প্রতিষেধক দেওয়া খুবই কঠিন কাজ। তাই সরকার যাঁদের দরকার, তাঁদেরই প্রতিষেধক দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য।’’ কিন্তু দীপ্যমানবাবুর মতে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, কাদের দেওয়া দরকার, সেই তালিকা তৈরি করা। তাঁর যুক্তি, কাদের দরকার আর কাদের দরকার নেই, সেটা খতিয়ে দেখতে দেশ জুড়ে সেরো সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সেরো সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, জনগোষ্ঠীর বড় অংশ নিজের অজান্তেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে আবার সেরে উঠেছেন। যাঁরা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁদের প্রতিষেধক প্রাপ্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেতেই পারে। কাদের সত্যিকারের প্রয়োজন, সেটা খুঁজে বার করাটাই হল সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy