করোনার প্রকোপ কমলেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, আশ্বাস আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের। —ফাইল চিত্র
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও লকডাউনের মোকাবিলায় ইএমআই স্থগিতের সুযোগ দিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। কিন্তু তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্র এবং আরবিআই। এ বার সেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ইএমআই স্থগিত অস্থায়ী বা সাময়িক পদক্ষেপ ছিল। তবে এর মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি আরবিআই গভর্নর। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, তীব্র আক্রমণের মুখে চাপে পড়েই কি ইএমআই মোরেটরিয়াম নিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে আরবিআই গভর্নর।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শৃঙ্খল রুখতে লকডাউনের ঘোষণার সময় থেকেই দেশের অর্থনীতি কার্যত থমকে গিয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র উপায় যে কার্যকরী কোনও টিকা আবিষ্কার, তা মানছেন বিজ্ঞানী থেকে অর্থনীতিবিদরা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও সে দিকেই তাকিয়ে বলে জানিয়েছেন শক্তিকান্ত দাস। তিনি বলেন, ‘‘এই সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল অনিশ্চয়তা। কোভিড-১৯ এর টিকার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আরবিআই গোটা বিষয়টির উপর নজর রাখছে।’’ করোনা সংক্রমণের হার কমলে দ্রুত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশাপ্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রধান।
প্রথম দফায় তিন মাস এবং পরের দফায় আরও তিন বাড়িয়ে মোট ৬ মাস ইএমআই স্থগিত করেছিল ব্যাঙ্ক। কিন্তু তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়েছিল আরবিআই। কারণ, ইএমআই স্থগিত হলেও তার সুদ মকুব করা হয়নি। ফলে ঋণের মেয়াদ শেষে এই ৬ মাসের ইএমআই এবং তার সুদ মিলিয়ে বড় অঙ্কের টাকা ঘাড়ে চাপবে ঋণগ্রহীতার। এই বিষয়টি সামনে আসতেই আম জনতার মধ্যে বিপুল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞরাও এমন পন্থার সমালোচনায় মুখর হন। এ দিন সাক্ষাৎকারে সেই বিষয়টি উঠতেই আরবিআই গভর্নর বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের ক্ষত মেরামতে ইএমআই স্থগিত সাময়িক পন্থা ছিল।’’
আরও পড়ুন: শাস্তি মঞ্জুর, ক্ষমা নয়, প্রশান্ত ভূষণের মানসিকতাকে কুর্নিশ নেটাগরিকদের
তা হলে স্থায়ী সমাধান কী? আরবিআই গভর্নর জানাচ্ছেন, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আর্থিক মোকাবিলায় একটি নিবিড় পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখে কোভিড-১৯ মোকাবিলা সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিল্পক্ষেত্র বিরাট চাপের মধ্যে রয়েছে। কোভিড মোকাবিলায় লড়াই করছে। তারা সফল না হলে আর্থিক অস্থিরতা তৈরি হবে। শিল্পক্ষেত্র সুরক্ষিত রাখতে পারলে তারা ঋণ শোধ করবে। তার পরিণামে রক্ষা পাবে চাকরিক্ষেত্র।’’
আরও পড়ুন: বডি ক্যামেরায় হামলার ভিডিয়ো তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে জঙ্গিরা
তবে অর্থনীতির গতি বাড়াতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে আরও অনেক অস্ত্র রয়েছে বলে এ দিন জানিয়েছেন শক্তিকান্ত দাস। সেগুলি ধীরে ধীরে প্রয়োজন ও কার্যকারিতা অনুযায়ী প্রয়োগ করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। একাধিক বার রেপো রেট এবং রিভার্স রেপো রেট কমিয়ে কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তবে শেষ দ্বিমাসিক আর্থিক সমীক্ষায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে দুই সুদের হারই। কিন্তু সেটা যে পুরোপুরি থেমে যায়নি বা পরবর্তীতে আবারও তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, তেমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন আরবিআই গভর্নর। ওই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি আরও কিছুটা সময় আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি থেকে সুদের হার ২৫০ বেসিস পয়েন্ট (২.৫ শতাংশ) কমানো হয়েছে। আরও কমানোর বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy