তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কে ডি সিংহ। —ফাইল চিত্র।
আগামী কয়েক দিনে ১৫ জনের ডাক পড়তে চলেছে দিল্লিতে ইডি-র দফতরে। তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কে ডি সিংহের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এঁদের। এই তালিকায় যেমন অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠীর বিভিন্ন পদস্থ ব্যক্তি রয়েছেন, তেমনই সংস্থার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক না-থাকা অনেকেও রয়েছেন।
এই ১৫ জনের তালিকায় কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকবেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য এখনই ইডি-কর্তারা মুখ খুলতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠীর বেআইনি অর্থলগ্নি ব্যবসা বা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির টাকা কোথায় রয়েছে, কার কার পকেটে গিয়েছে, তা খুঁজে বার করাই তদন্তের প্রধান উদ্দেশ্য। এ জন্য যাঁদের প্রয়োজন, তাঁদেরই ডাকা হবে।
দিল্লির বিশেষ আদালত আজ আরও ৯ দিনের জন্য কঁওয়র দীপ সিংহ ওরফে কে ডি-কে ইডি-র হেফাজতে রাখার অনুমতি দিয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি কে ডি সিংহকে গ্রেফতারের পরে আদালতে পেশ করেছিল ইডি। সূত্রের খবর, তার আগের দিন, অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় ইডি-কে গ্রেফতার করা হয়। ইডি কর্তারা প্রথমেই রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে রাখার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু আদালত প্রাথমিক ভাবে তিন দিন হেফাজতের অনুমতি দেয়। ইডি আজ আরও ১১ দিনের জন্য কে ডি সিংহকে নিজেদের হেফাজতে রাখার অনুমতি চায়। বিশেষ আদালতের বিচারক অনুরাধা শুক্ল ভরদ্বাজ ৯ দিন অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুমতি দেন।
আরও পড়ুন: বালাকোটের আগেই ‘পূর্বাভাস’ অর্ণবের
আরও পড়ুন: আন্দোলন ভাঙতে এ বার এনআইএ অস্ত্র কেন্দ্রের
তাঁকে গ্রেফতারের পরে কে ডি সিংহ আদালতে এসে সাংবাদিকদের থেকে জানতে চেয়েছিলেন, মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে কী বলছেন? সরাসরি বিজেপি নেতাদের নাম করে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়ার জন্যই হয়তো শনিবার কে ডি-কে ইডি-র অফিসাররা একেবারে আগলে রেখেছিলেন। তার মধ্যেও ঘণ্টা দুয়েক শুনানির পরে, আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষায় বসে কে ডি জানতে চেয়েছেন, তাঁর গ্রেফতারি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে কতখানি আলোড়ন ফেলেছে? বাংলার বিধানসভা ভোট নিয়ে তাঁর ‘ধারণা’— ভোট এগিয়ে নিয়ে এসে, আগামী দিন কুড়ির মধ্যে নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দেওয়া হতে পারে। বিস্কুট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেতে খেতে তিনি ‘ভবিষ্যৎবাণী’ করেছেন, এ বার তৃণমূল বনাম বিজেপির সমানে সমানে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে তিন দিন ইডি-র হেফাজতে কাটিয়ে সব সময় ফ্যাশনদুরস্ত সাজে পরিচিত কঁওয়র দীপকে বেশ ক্লান্ত দেখিয়েছে।
বিধানসভা ভোটের আগে আচমকা কে ডি-কে গ্রেফতারের পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা নিয়ে গ্রেফতারির দিন থেকেই জল্পনা চলছে। কে ডি-র আইনজীবী বিক্রম চৌধুরী আদালতে একই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর যুক্তি, ২০১৯-এর জানুয়ারিতে ইডি কে ডি সিংহর বহু সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করে। তার পরে সেপ্টেম্বরে ইডি-র বাড়িতে, দফতরে হানা দিয়ে মোবাইল, কম্পিউটারের তথ্য আটক করে ইডি। ১৫-১৬ মাস পরে হঠাৎ ইডি এখন ঘুম ভেঙে জেগে উঠল কেন?
ইডি আদালতে যুক্তি দিয়েছে, কে ডি সিংহের কাজকারবার সম্পর্কে ১০০ জিবি-র বেশি ডেটা বা তথ্য রয়েছে। তদন্তকারী অফিসাররা আদালতে দুই স্যুটকেস ভর্তি নথি নিয়ে এসেছেন। তাঁদের দাবি, ২০০৬ থেকেই অ্যালকেমিস্ট বাজার থেকে বেআইনি ভাবে টাকা তুলেছে। ২০১৫-র আগে পর্যন্ত প্রায় ১,৯১৬ কোটি টাকা তুলেছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষের থেকে মুনাফার লোভ দেখিয়ে বেআইনি ভাবে টাকা তোলা হয়। তার পরে কাগজে-কলমে বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করে সাধারণ কর্মী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের কাগজে-কলমে সংস্থার ডিরেক্টর বানিয়ে ফেলা হয়। এই সব সংস্থার মধ্যে হাত বদল করে পুরো টাকা অন্যান্য সংস্থায় সরিয়ে ফেলা হয়। এখন সেই টাকার সন্ধান চলছে। তার জন্যই সময় লাগছে। ইডি-র আইনজীবী অমিত মহাজন বলেন, “যাঁদের অ্যালকেমিস্টের বিভিন্ন সংস্থার ডামি ডিরেক্টর বানানো হয়েছিল, তাঁরা অনেকেই এত দিন ভয়ে ছিলেন। তাঁদের এ বার ডাকা হবে। অভিযুক্তের মুখোমুখি বসানো হবে।”
ইডি সূত্রের খবর, বৌবাজার থানায় কলকাতা পুলিশের কাছে প্রতারণা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে কে ডি সিংহর বিরুদ্ধে এফআইআর হয়। এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশে কানপুর ও আগরাতেও কে ডি ও তার সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণা, আর্থিক অভিযোগ হয়েছে। এর ভিত্তিতে ইডি মোট তিনটি মামলা দায়ের করেছে। কে ডি-র আইনজীবীর যুক্তি, তিনি অন্তত ২৫ বার ইডি-র মুখোমুখি হয়েছেন। ৯৯ শতাংশ বিষয়েই জবাব দিয়েছেন। অ্যালকেমিস্টের যে দুই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে কে ডি-র সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু ইডি সেই স্বীকারোক্তি আদায় করতে চাইছে।
ইডি-র অভিযোগ, কে ডি-কে ১৪ বার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। তিনি পাঁচ বার হাজির হয়েছেন। নয় বার হাজির হননি। কিন্তু কে ডি-র দাবি, এক বার ডেকেই দু’দিন, তিনদিন ধরে জেরা করা হয়েছে। গ্রেফতারির চার দিন আগে, ৮ জানুয়ারি তাঁকে সমন পাঠানো হয়। তার পরে ১১ জানুয়ারি ফের ডাকা হয়। পরে কোনও সমন ছাড়াই বলা হয়, ১২ জানুয়ারি আসুন। সে দিনই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কে ডি নিজেই আদালতে বলেছেন, ‘নো সামন’। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি। ফের ইডি-র হেফাজতেই ফিরতে হয়েছে প্রাক্তন সাংসদকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy