ছবি: এপি।
যথাযথ প্রস্তুতির অভাব! নাকি উচ্চারণে উদাসীন থাকাটা নিজের ক্ষমতা জাহির? সোমবার মোতেরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তৃতায় একাধিক শব্দের ভুল উচ্চারণ শোনার পরে রসিকতার সঙ্গেই এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেল সমাজমাধ্যমে। প্রশ্ন তুলেছেন ভাষাতাত্ত্বিকেরাও।
ভারতের মাটিতে পা দেওয়ার আগে বিমান থেকেই হিন্দিতে টুইট করছিলেন ট্রাম্প। তখনই অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, ভারতবাসীর মন জয় করতে ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতাতেও নিশ্চয়ই ভারতীয় অনেক কিছুর কথাই বলবেন। ঠিকই। ট্রাম্প-ভাষণে স্বামী বিবেকানন্দ থেকে বেদ, সচিন থেকে শোলে— সবই এল, কিন্তু লাগাতার ভুল উচ্চারণে!
ট্রাম্পের মুখে বিবেকানন্দ হয়ে গেলেন ‘বিবে কা মন্নন’। বেদ, অর্থাৎ ভেদাস হয়ে গেল ‘ভেস্তাস’। আর নরেন্দ্র মোদীকেই বলে বসলেন, ‘চিয়াওল্লাহ’ (চায়েওয়ালা)। একই ভাবে ক্রিকেট-আইকন সচিন ট্রাম্পের মুখে হয়েছেন ‘সুচ্চিন’! ‘শোলে’-র কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন ‘শোজে’। বক্তৃতার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই ফেসবুক-টুইটারে এই ভুল উচ্চারণ নিয়ে শুরু হয়ে যায় রঙ্গ-রসিকতা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কোন কোন শব্দের উচ্চারণ ভুল বলেছেন, সেই তালিকাও দেদার ঘুরেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সঙ্গে টিপ্পনি। কেউ বললেন, ‘‘সচিনের নাম ট্রাম্প যে-ভাবে বললেন তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে, তিনি ক্রিকেট কত ভালবাসেন!’’ কারও কটাক্ষ, ‘‘নেমন্তন্ন-বাড়িতে গিয়ে অচেনা লোকজনের সঙ্গে মিশতে গিয়ে আমার যা হয়, এ সব উচ্চারণ করতে গিয়ে ট্রাম্পের অবস্থাও তেমনই হয়েছে।’’ কেউ বললেন, ‘‘ভুলটাও প্যাকেজেরই মধ্যে ছিল।’’ মোদী নিজের বক্তৃতায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন ‘ডোলান’ ট্রাম্প। ছড়িয়ে পড়ে সেই ভিডিয়োও।
ট্রাম্প-উবাচ
• স্বামী বিবে কা মন্নন (স্বামী বিবেকানন্দ)
• দ্য ভেস্তাস (দ্য ভেদাস)
• সুচ্চিন তেন্ডুলকর (সচিন তেন্ডুলকর)
• চিয়াওল্লাহ (চায়েওয়ালা)
• শোজে (শোলে)
তবে লঘু রসিকতা ছাপিয়ে অনেকেই সমালোচনায় বিঁধেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। তাঁদের বক্তব্য, এমন গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতার আগে তাঁর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। অনেকে আবার বলেছেন, ট্রাম্প নিজের ক্ষমতার গর্বে এতটাই গর্বিত যে, উচ্চারণ ঠিক করা উচিত, তা মনেই হয়নি। এক জন বিদেশির মুখে এমন ভুল উচ্চারণ কি স্বাভাবিক? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল্যাঙ্গুয়েজ ও লিঙ্গুইস্টিক্সের ডিরেক্টর, অধ্যাপক সমীর কর্মকার জানাচ্ছেন, এক জন আম-নাগরিকের ভুল উচ্চারণ আর এক জন রাষ্ট্রপ্রধানের ভুল উচ্চারণকে এক পংক্তিতে ফেলা যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘এখন অনেক প্রযুক্তি রয়েছে, যা থেকে খুব দ্রুত ঠিক উচ্চারণ শিখে নেওয়া যায়। আমেরিকা থেকে আসা এক জন সাধারণ নাগরিক ভুল করতেই পারেন। কিন্তু ট্রাম্পের মতো এক জন রাষ্ট্রপ্রধানের অবশ্যই উচ্চারণের ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। বিশেষত তিনি যখন এমন সব ব্যক্তিত্ব, বিষয়ের কথা বলছেন, যাঁরা একটি দেশের জনগণের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
আরও পড়ুন: গর্জালেও বর্ষালেন না, ‘সম্প্রীতির’ প্রশংসায় ট্রাম্প
অবশ্য হোমওয়ার্ক ঠিক রেখেও উচ্চারণে আটকে যাওয়াটা ট্রাম্প প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন বলে মত অনেকের। এমনকি স্বদেশেও। নিন্দুকেরা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজের দেশের কয়েকটি স্টেটের নাম উচ্চারণেই হোঁচট খান। মাতৃভাষার অনেক শব্দেই তাঁর জিভ জড়ায়। তালিকা দীর্ঘ। ট্রাম্প কোন শব্দ কতটা খারাপ ভাবে উচ্চারণ করেন, তা নিয়ে বেশ কয়েকটি শো-ও হয়েছে আমেরিকার চ্যানেলে। প্রতিযোগিতার মতো সেই অনুষ্ঠানে ওই উচ্চারণ শুনে সঠিক শব্দ বলতে পারলে জোটে পুরস্কারও। তাই ভারতীয় শব্দ উচ্চারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা ঘটালেন, তা ‘ট্রাম্পোচিত’ বলেই মন্তব্য করেছেন অনেকে। সমীরবাবুর অবশ্য দাবি, উচ্চারণ অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতা-প্রদর্শনের প্রকরণও হয়ে উঠতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত-বিষয়ক কোনও উচ্চারণে যতখানি যত্নবান হওয়া উচিত ছিল, তা হয়তো ট্রাম্প ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। তিনি যে ভারতের থেকে অনেক বেশি শক্তিধর এক দেশের রাষ্ট্রনায়ক, এই মনোভাব থেকেও এই প্রবণতা জন্ম নিতে পারে।’’
এ দিন মোতেরা স্টেডিয়াম অবশ্য যত বার ভুল উচ্চারণ শুনেছে, তত বারই প্রবল করতালি দিয়েছে। সমীরবাবুর প্রশ্ন, ‘‘ভারতের কোনও নেতা যদি আমেরিকায় গিয়ে ওঁদের দেশের কোনও আইকনের নাম ভুল উচ্চারণ করতেন, তা-হলে তা কেমন চোখে দেখা হত?’’
তবে ভুল উচ্চারণ প্রকাশ্যে আসা, অর্থাৎ বক্তৃতা শুরুর আগে থেকেই টুইটারে অনেকে সমালোচনা করেছেন ট্রাম্পের। #নমস্তেট্রাম্প-এর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ট্রেন্ডিং ছিল #গোব্যাকট্রাম্পও। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমালোচনায় অনেকে টেনে এনেছেন আমদাবাদে দেওয়াল তুলে সরকারের দারিদ্র আড়াল করার সিদ্ধান্তকে। অনেকের তির্যক প্রশ্ন, ‘‘গুজরাতের বিকাশকে কি এ ভাবেই ট্রাম্পের নজর থেকে আড়াল করা হল?’’ ট্রাম্পের সফরে একশো কোটি টাকা খরচ না-করে তা গরিবদের জন্য কাজে লাগানো উচিত ছিল বলেও মত দিয়েছেন অনেকে।
ভারতই নয়, আমেরিকার অনেক বাসিন্দাও বিঁধতে ছাড়েননি ট্রাম্পকে। ভারতের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে ট্রাম্প যে-টুইট করেন, তাতে এক মার্কিন নাগরিক লিখেছেন, ‘‘আমি আগেই ভারতবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’ আর এক জনের ব্যঙ্গোক্তি, ‘‘দয়া করে ওখানেই থেকে যান!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy