ফের মমতাকে নিশানা অমিতের।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর সমর্থনে জনসভা রাজস্থানের যোধপুরে। কিন্তু সেই সভাতেও অমিত শাহের মূল নিশানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অত্যাচারে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষদের ভারত নাগরিকত্ব দিলে আপনার এত সমস্যা হচ্ছে কেন? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। মমতাকে ভয় পাবেন না, সসম্মানে নাগরিকত্ব নিয়েই বাঁচবেন— রাজস্থান থেকে হুঙ্কার বিজেপি সভাপতির।
সিএএ বিরোধিতায় দেশের নানা প্রান্তে যে ভাবে পথে নেমেছে বিরোধী দলগুলি, বিজেপি প্রথমে তার মোকাবিলায় কিছুটা ব্যাকফুটেই ছিল। সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ করে যাবতীয় সিএএ বিরোধী বক্তব্যের জবাব দেওয়ার চেষ্টা হলেও, মাঠে-ময়দানে পিছিয়েই ছিল দেশের শাসক দল। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অবশেষে বিজেপি-ও পথে নামে। এবং এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব গোটা ভারতে সভা করে সিএএ-পন্থী প্রচার তুঙ্গে তোলার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন। সেই প্রচারাভিযানের অঙ্গ হিসেবেই শুক্রবার রাজস্থানের যোধপুরে জনসভা করেন বিজেপি সভাপতি তথা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
সিএএ কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আইন নয়, বরং শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন— এ কথাই বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। যোধপুরের ভাষণেও অমিত শাহ এ দিন প্রথমে সে কথাই বলেন। তার পরেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে। শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তে তাঁর সমস্যা হচ্ছে কেন? প্রশ্ন তোলেন শাহ।
যোধপুরের সভায় অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
বাংলাদেশে থেকে যাঁরা শরণার্থী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছেন, এ দিন রাজস্থানের জনসভা থেকে তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন শাহ। তিনি বলেন, ‘‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি। আপনারা অত্যাচারিত হয়ে এসেছেন। এখানে কোনও অত্যাচার সহ্য করতে হবে না। সম্মানের সঙ্গে নাগরিকত্ব নিয়ে এখানে থাকবেন। মমতাদিদিকে ভয় পাবেন না।’’
রাহুল গাঁধী তথা কংগ্রেস, অরবিন্দ কেজরীবাল তথা আম আদমি পার্টি, এসপি, বিএসপি-কেও এ দিন মমতার তৃণমূলের সঙ্গে একই পঙ্ক্তিতে বসিয়ে তোপ দেগেছেন অমিত শাহ। এই দলগুলি মিলে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। শনিবার থেকে আরও বড় প্রচারাভিযান শুরু হচ্ছে, বিজেপি কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিএএ সম্পর্কে বোঝানো শুরু করছেন— জানিয়েছেন অমিত শাহ। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর আক্রমণের স্বর ছিল সবচেয়ে চড়া।
এ দিন শিলিগুড়িতে সিএএ বিরোধী মিছিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
অমিত শাহ এ দিন বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে জনতাকে বিভ্রান্ত করা এত সহজ নয়। কাল থেকেই ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার শুরু হবে। আপনাদের ছড়ানো বিভ্রান্তি আমরা দূর করব।’’ তার পাশাপাশি মিসড্ কলের মাধ্যমে সিএএ-কে সমর্থন জানানোর নতুন কর্মসূচির সূচনাও এ দিন করেছেন তিনি। যোধপুরের জনসভা থেকেই একটি ফোন নম্বর ঘোষণা করেছেন অমিত শাহ। যাঁরা সিএএ-কে সমর্থন করেন, তাঁদের ওই নম্বরে মিসড্ কল দিতে বলেছেন শাহ। ওই নম্বরে মিসড্ কল দিয়ে ‘রাহুলবাবা, মমতা আর কেজরীবালকে জবাব দিন’— আহ্বান বিজেপি সভাপতির। তবে সব কিছুর মধ্যে সবচেয়ে চোখে পড়েছে মমতার বিরুদ্ধে বিজেপির তীব্র আক্রমণ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও ঠিক এই ভাবেই বিজেপির আক্রমণের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছিলেন মমতা। বিরোধী জোট তৈরিতে উদ্যোগী হওয়া, সিবিআই-এর অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে ধর্নায় বসা, দেশের সব বিরোধী দলকে একমঞ্চে হাজির করে কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে সমাবেশ করা, দিল্লির যন্তরমন্তরে আপ আয়োজিত ধর্নামঞ্চে মধ্যমণি হয়ে ওঠা— এই সব নানা কারণে বিজেপির কাছে সাংঘাতিক ভাবে চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন মমতা। এখন সিএএ বিরোধিতার প্রশ্নেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সক্রিয়তাই বিরোধী দলগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অতএব ফের মমতাই যে বিজেপির সবচেয়ে বড় নিশানায় পরিণত হতে চলেছেন, তা অমিত শাহের ভাষণে এ দিন স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy