Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ছররার আঘাতে অন্য কাশ্মীর-কথা

কাশ্মীরের হাসপাতালগুলি সরকারি ভাবে ছররায় আহতদের সম্পর্কে কোনও তথ্যই দিচ্ছে না বলে দাবি একাধিক সংবাদমাধ্যমের।

দুই-ছবি: শ্রীনগরের হাসপাতালে ছররায় আহত। নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে করমর্দনে শিশু। রয়টার্স ও প্রসার ভারতী

দুই-ছবি: শ্রীনগরের হাসপাতালে ছররায় আহত। নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে করমর্দনে শিশু। রয়টার্স ও প্রসার ভারতী

সংবাদ সংস্থা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের সিদ্ধান্তের পর কাশ্মীরকে শান্ত রাখতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল উপত্যকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কিন্তু উপত্যকার হাসপাতালগুলির চিত্র অন্য কথা বলছে। গত তিন দিনে ছর্‌রা বুলেটের আঘাত নিয়ে অন্তত ৪০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে দাবি সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশের। তাদের অধিকাংশই কিশোর-তরুণ-যুবক।

কাশ্মীরের হাসপাতালগুলি সরকারি ভাবে ছররায় আহতদের সম্পর্কে কোনও তথ্যই দিচ্ছে না বলে দাবি একাধিক সংবাদমাধ্যমের। কিন্তু নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুখ খুলছেন ডাক্তার-নার্সেরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের সিদ্ধান্ত এবং রাজ্যেকে দ্বিখণ্ডিত করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রতিবাদে রীতিমতো উত্তপ্ত ভূস্বর্গ। একাধিক এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসএমএইচএস হাসপাতালে ভর্তি শ্রীনগরের নাতিপোরার বাসিন্দা ১৫ বছরের নাদিম। গত পরশু বন্ধুর সঙ্গে ফিরছিল সে। তখনই তার গায়ে ছররা লাগে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই কিশোরের ডান চোখে ছররার আঘাত লেগেছে। ওই চোখে সে দেখতে পাচ্ছে না। ওই হাসপাতালেই ভর্তি গান্ডেরবালের দুই যুবক। তাঁদের এক জন বেকারিতে কাজ করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথমে তিনি কথাই বলতে চাননি। পরে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে আসা কারও সঙ্গে কথা বলতে চাই না।’’ তাঁর সঙ্গীর আঘাত ততটা গুরুত্ব নয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমরা দোকানে রুটি তৈরি করছিলাম। জওয়ানেরা এসে বলল, ‘কাশ্মীরিদের খাওয়ানোর জন্য রুটি হচ্ছে? এর পরেই আমাদের দোকান লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে চলে গেল।’’

হাসপাতালে ভর্তি ছররায় আহতদের অধিকাংশেরই আঘাত লেগেছে চোখে অথবা মুখে। এসএমএইচএস হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ভর্তি রাফিয়া বানো নামে ৩১ বছরের এক মহিলা। কোনও মতে তাঁর চোখটা রক্ষা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর মা। হাসপাতালের বেডে শুয়ে রাফিয়া বলেন, ‘‘বাড়ির উঠোনে ছিলাম। জওয়ানেরা গুলি চালালো। চোখটা জ্বলে গেল, মনে হল কেউ যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।’’ হাসপাতালে বসে তাঁর আহত হওয়ার কথা সাংবাদিকদের শুনিয়েছেন শ্রীনগরের বাসিন্দা ৩৫ বছরের
নাজিমা বানো। ছররায় নয়, জওয়ানদের মারে আহত হয়ে তিনি চিকিৎসাধীন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাড়ির সামনে একটি অল্প বয়সি ছেলেকে জওয়ানেরা প্রচণ্ড মারধর করছিল। বাঁচাতে গেলে এক অফিসার আমার দিকে বন্দুক তাক করে বললেন, ‘গুলি করব’। তার পরেই আমার পেটে লাথি মারে। মাটিতে পড়ে যাই। ওই ছেলেটিকে ওরা টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলল।’’ উপত্যকার সাধারণ মানুষের বক্তব্য, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদেরও কিছু বলার আছে। কিন্তু সে কথা প্রশাসনের কেউ কানেই তুলতে চাইছে না। রাস্তায় নামলে মিলছে ছররা-বুলেট।

অন্য বিষয়গুলি:

Jammu And Kashmir Article 370 Pellet Gun Injury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE