Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
National news

‘প্রশাসন নিষ্ক্রিয়’, দিল্লিতেও গুজরাত দাঙ্গার ‘মডেল’ দেখছেন বিরোধীরা

এনসিপি নেতা নবাব মালিক বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি ব্যবস্থা না নেন এবং পুলিশ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তা হলে নিশ্চয়ই কিছু গন্ডগোল আছে।’’

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৭:২২
Share: Save:

দিল্লিতে চলছে টানা সংঘর্ষ। অগ্নিসংযোগ, গুলি, বাড়িতে ঢুকে হামলা, বাদ নেই কোনও কিছুই। চার দিন ধরে খাস রাজধানীর বুকে শহরের একটা অংশে এমন হিংসাত্মক ঘটনা চলছে, অথচ পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণে কার্যত ব্যর্থ। এখানেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তবে কি পুলিশের এই ‘অপারগতা’ পরিকল্পিত? ঠিক যেমন অভিযোগ উঠেছিল ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময়। কার্যত ‘নিষ্ক্রিয়’ থেকে বাড়তে দেওয়া হয়নি তো দিল্লির সংঘর্ষ? এমন প্রশ্ন উস্কে দিয়েছেন বিরোধীরা। কেউ সরাসরি, কেউ ইঙ্গিতে।

এনসিপি নেতা নবাব মালিক সরাসরিই গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে দিল্লিতে সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ সেখানে নীরব দর্শক। রাজধানী শহরে কেন এটা হবে? দিল্লিতেও ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার মডেল চলছে।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘প্রশ্ন উঠছে, অমিত শাহ এমন নির্দেশ দেননি তো যে, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি ব্যবস্থা না নেন এবং পুলিশ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তা হলে নিশ্চয়ই কিছু গন্ডগোল আছে।’’

কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী অবশ্য নাম করেননি। তবে দিল্লির সংঘর্ষের পিছনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন। কার ষড়যন্ত্র, কী ষড়যন্ত্র— সে সব স্পষ্ট না করেও সংঘর্ষ এত বড় আকার নেওয়ার দায় ঠেলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং শাসক দল বিজেপির দিকে। পুলিশ-প্রশাসন কেন আগে থেকে সক্রিয় হয়নি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কী করছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে দেখেও কেন আগে থেকে আধাসেনা ডাকা হল না, এমন সব প্রশ্ন তুলেছেন।

আরও পড়ুন: কার্ফু অগ্রাহ্য করে ইটবৃষ্টি, ঘরছাড়া বহু, অশান্ত দিল্লিতে মৃত্যু বেড়ে ২৩

রাজনীতির এই তরজার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, পুলিশ আগে থেকে আরও সক্রিয় হলে দিল্লির সংঘর্ষের পরিস্থিতি এতটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত না। বরং আগেভাগেই সামলে নেওয়া যেত। গুজরাত দাঙ্গায় যে অভিযোগ ছিল, দিল্লির পুলিশ-প্রশাসনকেও একই অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলছেন পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ। কেন সেনা নামানো হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন। সেই মন্ত্রকের দায়িত্ব অমিত শাহের উপর। মনে রাখতে হবে, ২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেই সময় গুজরাতে মোদীর মন্ত্রিসভার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কাকতালীয়। তবে অনেকের মনেই ২০০২ সালের গুজরাতের সেই প্রেক্ষাপট ভেসে উঠছে।

কী হয়েছিল সেই সময়? ওই বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি গুজরাতের গোধরায় সবরমতি এক্সপ্রেসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ট্রেনে অযোধ্যা থেকে ফিরছিলেন করসেবকরা। জলন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান ৫৮ জন করসেবক। সেই ঘটনার পর থেকেই গোটা গুজরাত জুড়ে শুরু হয় হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ। প্রায় তিন মাস ধরে চলে হামলা, অগ্নি সংযোগ, হত্যালীলা। সরকারি হিসেবেই মৃত্যু হয়েছিল ১০৪৪ জনের, নিখোঁজ ছিলেন ২২৩ জন। আহত প্রায় আড়াই হাজার। নিহতদের মধ্যে ৭৯০ জন ছিলেন মুসলিম। হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৫৪ জন।

আরও পড়ুন: নীরবতা ভাঙলেন মোদী, দিল্লিতে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আর্জি

পরবর্তী কালে অভিযোগ উঠেছিল, সেই সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা তো নেনইনি, উল্টে প্রচ্ছন্ন মদত দিয়েছিলেন দাঙ্গায়। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেননি। এমন অভিযোগও ওঠে যে, সরকারি আধিকারিকরাই মুসলিমদের বাড়িঘর, সম্পত্তির তালিকা তুলে দিয়েছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের হাতে। সেই অভিযোগের তদন্তে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১২ সালে সেই সিটের রিপোর্টে ক্লিনচিট দেওয়া হয় মোদীকে। পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগও খারিজ করে দেয় সিট। গুজরাত দাঙ্গা থেকে হাত ধুয়ে ফেলেন মোদী-অমিত শাহরা।

গুজরাত দাঙ্গার সময়ের ছবি। —ফাইল চিত্র

কিন্তু দিল্লির সংঘর্ষে ফের ফিরে এসেছে সেই প্রশ্নই। এনসিপির নবাব মালিক যেটা সরাসরি ‘গুজরাত দাঙ্গা’র উল্লেখ করে বলেছেন, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই সেই প্রশ্ন তুলছেন আকারে ইঙ্গিতে। প্রকাশ্যে না হলেও অন্তত ঘনিষ্ঠ মহলে আলোচনা চলছে তেমনটাই।

গুজরাত দাঙ্গার সময়কার সেই প্রশাসনকে ‘ঠুঁটো’ করে রাখার অভিযোগ মানেন না অভিযুক্তরা। দিল্লির ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর সনিয়ার অভিযোগের পাল্টা হিসেবে বলেছেন, ‘‘এই সময় সব রাজনৈতিক দলের এক সঙ্গে কাজ করা উচিত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। রাজনীতি করা উচিত নয়।’’ অমিত শাহ যে দিল্লির সংঘর্ষে ‘নিষ্ক্রিয়’ নন, বরং ‘সক্রিয়’ সেটা বোঝাতে তিনি বলেছেন, মঙ্গলবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্বদল বৈঠক করেছেন। পুলিশ প্রশাসনের মনোবল বাড়াতে ‘ভোকাল টনিক’ দিয়েছেন।

অন্য দিকে এ দিন ১৯৮৪ সালে শিখ দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে দিল্লি হাইকোর্ট বলেছে, ‘‘আর একটা ১৯৮৪-র দাঙ্গা হতে দিতে পারি না আমরা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Gujarat Riot Delhi Violence CAA Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy