আপ কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে অরবিন্দ কেজরীবাল।
৫ বছরে দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছে অরবিন্দ কেজরীবালের ‘দিল্লি উন্নয়ন মডেল’। তার ফলও পেয়েছে আপ। মঙ্গলবার সেই ফল প্রকাশ হওয়ার পরে শহর দিল্লি ও তার চার পাশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কথা বলল আনন্দবাজার ডিজিটাল। কী বললেন তাঁরা?
সুশীল শর্মা ওরফে ‘মামু’ (একটি অনুষ্ঠান গৃহের ম্যানেজার)
‘‘কংগ্রেস-বিজেপি সবাইকে আমি বুঝিয়েছি, কেন অরবিন্দ কেজরীবালের মতো লোকের দরকার। আমাদের মতো ঘরে আজ সব ছেলেমেয়েরা ড্রাগের নেশা করে বসে আছে। তাদের কাজ নেই কোনও। আমার একটাই ছেলে। তাকেও কলকাতায় পাঠিয়েছি, কাজের জন্য। কাছে রাখতে পারিনি। আরে রামমন্দিরের জন্য টাকা ঢেলে কী হবে? নতুন প্রজন্মকে কাজ দিতে হবে। সেটা কেজরীবালই দেবেন। উনি পাঁচ আঙুলকে আলাদা করেন না। সবাই সমান ওঁর কাছে।’’
ঊষা শর্মা (বধূ)
‘‘বাড়ির সামনে ছোট্ট স্কুলটা চোখের সামনে বড় হয়ে যাচ্ছে দেখেছি। আগে শিক্ষকেরা সময়ে এসে পৌঁছতেন না। পড়ুয়া ছিল গুটিকয়েক। এখন ঠিক উল্টো। আমার বাড়ির কাজের মেয়ের ছেলেমেয়ে সবাই ওই স্কুলে যাচ্ছে। বিনা পয়সায় পড়তে পারছে সমাজের এই অংশ। এক জন মেয়েকে চিনি, এ ভাবেই মাস্টার ডিগ্রি পেয়ে গেল। নিখরচার শিক্ষা ছাড়াও দেখছি দিল্লির পাড়ায় পাড়ায় ‘মহল্লা ক্লিনিক’ হয়েছে। নিজের চোখে দেখেছি, বিনামূল্যে বেশ দামি দামি ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। আর বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও সব স্তরের মানুষের জন্য খরচা কমিয়ে দিয়েছে আপ সরকার। দু’শো ইউনিটের নীচে মিটার রেটিং-এ জিরো চার্জ! এ কী সেই আমার দিল্লি?’’
আরও পড়ুন: গণনা শুরুর সময়েও ৫৫-র আশায় ছিল বিজেপি
নীনা মিত্তল (‘আরাধনা কলামঞ্চ এক উমিদ’ নামে একটি অসরকারি সংস্থার সদস্য)
‘‘রোজের কাজে সবচেয়ে জরুরি জল। খুব জলের কষ্ট আমাদের পঞ্জাবে। কারও হুঁশ নেই। অথচ দিল্লিতে যে কোনও মানুষকে জিজ্ঞেস করুন, এখন ঘরে ঘরে অফুরন্ত জল। আগে তো দিল্লিও পঞ্জাবের মতো ছিল। কেজরীবাল বুঝেছেন, সাধারণ মানুষের কষ্ট কোথায়। উনি তো ঘরে ঘরে পৌঁছে যান। গরিব-বড়লোক সবার ঘরে। অন্য নেতাদের মতো দূর থেকে হাত নেড়ে চলে যান না। কথা বলেন এমন করে, মনে হয়, নিজের কেউ! তাই উনি এসেছেন আবারও।’’
উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন আপ কর্মী-সমর্থকেরা।
সুষমা শর্মা (পরিচারিকা)
‘‘কাজ করে মেয়েদের পেট চালাতে হয় আমায়। মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়েই বাঁচি আমি। আগে তো ওদের পড়ানোর টাকাই ছিল না। এখন আপের জন্য কোনও টাকা ছাড়াই পড়ছে ওরা। বই-খাতা সব স্কুল দেয়। আমার মেয়েদের আর বাড়ি বাড়ি কাজ করে খেতে হবে না। পড়ে কোনও না কোনও কাজ পাবেই ওরা। আপ সরকার আমাদের মতো গরিবের সরকার। যার কেউ নেই তাদের আপ সরকার আছে।’’
এই ফলাফলের পিছনে রয়েছে ‘দিল্লি উন্নয়ন মডেল’।
নাসরিন বেগম (পরিচারিকা)
‘‘২০০১-এ কাজের জন্য দিল্লি আসি আমি। আমার কিন্তু কাগজ আছে। আমি ঢাকার মেয়ে। দিল্লি আসি পেটের টানে। রান্নার কাজ করি। আগে কিছুই পেতাম না। জল আসত না। ছেলেেকে পড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। আজ আমার ছেলে ক্লাসে ফার্স্ট হয়। আমাদের বাসা দক্ষিণ দিল্লিতে। সেখানে জলের আর কোনও সমস্যাই নেই। বাসে যাতায়াত তো একেবারেই ফ্রি হয়ে গিয়েছে। আর এই যে কাগজ দেখানোর কথা হচ্ছে, এ সব কী? আমাদের মতো মেয়ে নিজের নামটুকু মনে রাখলেই অনেক। আমার আম্মু-আব্বার নাম, তার কাগজ দেখানো এ সব কেজরীবাল হতে দেবেন না। আমরা তাই ওঁর দলে। আপ জিতেছে, আমরা ভীষণ খুশি।’’
স্নেহা মলহোত্র (আইটি সেক্টরে চাকরিরতা)
‘‘সবচেয়ে আগে চোখে পড়ে ওঁর বিজ্ঞাপন পদ্ধতি। পলিটিক্যাল পার্টির বিজ্ঞাপন মানেই, ‘আমরা এই করেছি। সেই করেছি।’ নেতাদের বড় বড় ছবি। আপের অ্যাডগুলো ছোট আর শুধু কাজের কথা বলে। একটা শিক্ষিত রাজনীতির চেহারা ফুটে উঠছে দিল্লিতে। মানুষ এটাতে খুশি। তাই আপের এই জয়।’’
আরও পড়ুন: নতুন প্রকল্পের জেরে বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতি
লভিনা মাঙ্গত (রিটেল ম্যানেজার)
‘‘প্রাইভেট স্কুলের ফি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় ছেলেকে দামি স্কুল ছাড়িয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি করেছি আমি। কেন করব না বলুন তো? সরকারি স্কুলে পরীক্ষার আগে ছেলেমেয়েদের শুধু নয়, বাবা-মায়েদের আলাদা কাউন্সিলিং হয়। আগে দিল্লির সরকারি স্কুলে এটা কেউ ভাবতে পেরেছিল? ছাত্রদের জন্য এক্সট্রা ক্লাস হচ্ছে এখন। শুধু তাই নয়, প্রাইভেট স্কুলের ফি-ও আপ সরকার কমাতে বাধ্য করেছে। কেজরীবাল তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী। এই সরকার শিক্ষাকে হাতিয়ার করে আরও অনেক দূর যাবে।’’
মহিন্দর সিংহ (সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার)
‘‘দেখুন জামিয়া থেকে জেএনইউ— বিজেপির কাণ্ডকারখানা আপ পার্টিকে এগিয়ে দিয়েছে। এক বছর হল এই পার্টি দিল্লিতে কাজ করছে। আগে কিন্তু শুধু নাটকই করত। তবে আমি মনে করি, বিজেপির নেগেটিভ হওয়াই আপকে পজিটিভ করেছে। অন্য দিকে, কংগ্রেসকে দেখুন! এক সময় রাজত্ব করা এই দলের মনোনীত প্রার্থী কারা সেটাই দিল্লির ৭০ শতাংশ মানুষ জানেন না। ফলে, আপের জেতাটাই তো স্বাভাবিক।’’
অনামিকা (মিডিয়া প্রফেশনাল, নাট্যকর্মী)
‘‘অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন কোনও দেশের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষা আর স্বাস্হ্যের সার্বিক উন্নয়নের কথাই বলেছেন। এই ওয়েলফেয়ারের কাজটাই করেছে আপ। আমরা ভাবতে পেরেছিলাম, সরকারি স্কুলে সুইমিং পুল থাকবে? আমি নিজে দিল্লির সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি, কী অসম্ভব ভাল পরিবেষা! দক্ষিণ ভারতে বহু দিন আগেই জয়ললিতা সস্তায় চাল দিতে শুরু করেছিলেন মানুষকে। আজ কেজরীবাল সেই পরিষেবা দিল্লির মানুষকে দিচ্ছেন। যে দেশে নাসিরুদ্দিন শাহ ‘ভারত এক খোঁজ’-এ ‘শিবাজি’র চরিত্র করেন আর ওম পুরি ‘আলাউদ্দিন খলজি’র— আমি জানি সেটাই আমার দেশ। কাজেই ফের আপ আসায় আমি খুশি। এটা জরুরি ছিল।’’
এ সবের পরেও কেজরীবাল কি আর না জিতে পারেন!
ছবি: ফেসবুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy